০২:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পঞ্চাশে লাল সবুজের বাংলাদেশ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:৩৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৫০ বার দেখা হয়েছে

‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’। একটি স্বাধীন জন্মভূমির আকাঙ্ক্ষা কার না থাকে। সবাই চায় নিজস্বতায় বেড়ে উঠতে। মুক্তির অদম্য ইচ্ছা থাকলেও পরাধীনতার শেকল থেকে বের হতে পারেনি পৃথিবীর বহু জাতি। যে কয়টি জাতি এই ‘স্বাধীনতার অমলিন সূর্য’ ছিনিয়ে আনতে পেরেছে তার মধ্যে বাঙালি জাতি অন্যতম। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’।

আজ ২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে আজ পূর্ণ হলো স্বাধীনতা ঘোষণার অর্ধশত বছর।‌ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগ এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও সংগ্রামের গৌরবগাঁথা গণবীরত্বের ইতিহাস ২৬শে মার্চ। তাই ত বলা যেতে পারে, ‘ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা রাখল ‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ’র দেশ বাংলাদেশ। সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এ এক আনন্দঘন গৌরবের অনুভূতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় একের পর এক মাইলফলক অর্জন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে আরও মহিমান্বিত করেছে।

পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেয়ে উপমহাদেশের জনগণ পেয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্র। এরপর শুরু হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্র।

স্বাধীন দেশে নিঃশ্বাস ছাড়তে পাকিস্তানি হানাদারদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি জাতি। কোন মরণাস্ত্রই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি স্বাধীনতার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে দীপ্ত বাঙালির সামনে। বাঙালি হয়ে ওঠে সংগ্রাম, আন্দোলন আর স্বাধিকারে জাগরিত মহান স্বাধীনতা অর্জনের অনন্য উজ্জ্বলতার প্রতীক। জাতিকে মুক্তির এই মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান ইতিহাসের মহানায়ক, মহাবীর, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৬-এর সংবিধান প্রণয়ন আন্দোলন, ৫৮-এর মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা আন্দোলন, ৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬-দফা ভিত্তিক ৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনসহ নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।

১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অস্থায়ী সরকারের অধীনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের এই ধারাবাহিক সংগ্রামে জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই বার ফাঁসি কাষ্ঠের মুখোমুখিও হয়েছেন। মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরও তিনি স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নে আপস করেননি। তিনি বাংলার মানুষকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, জাতীয় সংগীত, সংবিধান, বিশ্বের বুকে পা রাখার পরিচয়।

বাংলা, বাঙালি ও বঙ্গবন্ধু একই বৃত্তে তিনটি চেতনার ফুল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে গরিব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র লক্ষ্য। তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া, শত যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট-বেদনাকে সহ্য করে বাংলার কৃষক-শ্রমিক জনতার মুখে হাসি ফোটাতে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতার মূলমন্ত্র আজও আমাদের নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার প্রেরণা যোগায়। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রকৃত মুক্তি আনার লক্ষ্যে যুদ্ধ করার সাহস যোগায়। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ ও ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’ উদযাপনে বাঙালির জাতীয় জীবনে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ই মার্চ থেকে মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে দশ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের এই সন্ধিক্ষণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক– মহান স্বাধীনতা দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।

এদিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুবর্ণজয়ন্তীর এই শুভক্ষণে আমাদের শপথ নিতে হবে, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে। আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি।

শেয়ার করুন

x
English Version

পঞ্চাশে লাল সবুজের বাংলাদেশ

আপডেট: ০৬:৩৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১

‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’। একটি স্বাধীন জন্মভূমির আকাঙ্ক্ষা কার না থাকে। সবাই চায় নিজস্বতায় বেড়ে উঠতে। মুক্তির অদম্য ইচ্ছা থাকলেও পরাধীনতার শেকল থেকে বের হতে পারেনি পৃথিবীর বহু জাতি। যে কয়টি জাতি এই ‘স্বাধীনতার অমলিন সূর্য’ ছিনিয়ে আনতে পেরেছে তার মধ্যে বাঙালি জাতি অন্যতম। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’।

আজ ২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে আজ পূর্ণ হলো স্বাধীনতা ঘোষণার অর্ধশত বছর।‌ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগ এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও সংগ্রামের গৌরবগাঁথা গণবীরত্বের ইতিহাস ২৬শে মার্চ। তাই ত বলা যেতে পারে, ‘ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা রাখল ‘ভায়ের মায়ের এত স্নেহ’র দেশ বাংলাদেশ। সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য এ এক আনন্দঘন গৌরবের অনুভূতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় একের পর এক মাইলফলক অর্জন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে আরও মহিমান্বিত করেছে।

পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেয়ে উপমহাদেশের জনগণ পেয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্র। এরপর শুরু হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্র।

স্বাধীন দেশে নিঃশ্বাস ছাড়তে পাকিস্তানি হানাদারদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি জাতি। কোন মরণাস্ত্রই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি স্বাধীনতার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ে দীপ্ত বাঙালির সামনে। বাঙালি হয়ে ওঠে সংগ্রাম, আন্দোলন আর স্বাধিকারে জাগরিত মহান স্বাধীনতা অর্জনের অনন্য উজ্জ্বলতার প্রতীক। জাতিকে মুক্তির এই মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান ইতিহাসের মহানায়ক, মহাবীর, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৬-এর সংবিধান প্রণয়ন আন্দোলন, ৫৮-এর মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা আন্দোলন, ৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬-দফা ভিত্তিক ৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনসহ নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।

১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অস্থায়ী সরকারের অধীনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের এই ধারাবাহিক সংগ্রামে জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুই বার ফাঁসি কাষ্ঠের মুখোমুখিও হয়েছেন। মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণ করার পরও তিনি স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নে আপস করেননি। তিনি বাংলার মানুষকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, জাতীয় সংগীত, সংবিধান, বিশ্বের বুকে পা রাখার পরিচয়।

বাংলা, বাঙালি ও বঙ্গবন্ধু একই বৃত্তে তিনটি চেতনার ফুল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে গরিব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর একমাত্র লক্ষ্য। তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া, শত যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট-বেদনাকে সহ্য করে বাংলার কৃষক-শ্রমিক জনতার মুখে হাসি ফোটাতে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জিত স্বাধীনতার মূলমন্ত্র আজও আমাদের নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার প্রেরণা যোগায়। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রকৃত মুক্তি আনার লক্ষ্যে যুদ্ধ করার সাহস যোগায়। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ‘মুজিববর্ষ’ ও ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’ উদযাপনে বাঙালির জাতীয় জীবনে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ই মার্চ থেকে মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে দশ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের এই সন্ধিক্ষণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত হোক– মহান স্বাধীনতা দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।

এদিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুবর্ণজয়ন্তীর এই শুভক্ষণে আমাদের শপথ নিতে হবে, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে। আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি।