১১:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পরিবার পরিকল্পনার সাবেক ডিজিকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:২৫:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৪৩ বার দেখা হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন‌্য ওষুধ-সরঞ্জাম কেনার নামে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার তদন্তে পরিবার পরিকল্পনার সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) কাজী মোস্তফা সারোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুবকর সিদ্দিক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ডিজি মোস্তফা কেনাকাটায় অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে লিখিত বক্তব্য দেন। 

এর আগে গতকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি আরেক সাবেক ডিজি মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই অভিযোগে মামলার অন্যতম প্রধান আসামি আজিমপুর মাতৃসদনের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইশরাত জাহানকে ৮ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেছিল দুদকের উপপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক। মামলা দায়ের করার পরপরই আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মামলায় ১৭ জন চিকিৎসক ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ৮ জনকে আসামি করা হয়। আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ইসরাত জাহানকে চারটি মামলাতেই আসামি করা হয়। 

অন্য আসামিরা হলেন- পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য পারভীন হক চৌধুরী, মাতৃসদনের সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মাহফুজা খাতুন, সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ‌্যান্ড রিসার্চ) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য চিন্ময় কান্তি দাস, সাবেক মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মাহফুজা দিলারা আকতার। 

আরও রয়েছেন, মাতৃসদনের মেডিকেল অফিসার ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য নাজরিনা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সদস্যসচিব-বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য জেবুন্নেসা হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি রওশন হোসনে জাহান, মাতৃসদনের সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ‌্যান্ড রিসার্চ) ও পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. লুৎফুল কবীর খান, মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য রওশন জাহান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হালিমা খাতুন, মাতৃসদনের বিভাগীয় প্রধান (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মো. আমীর হোসাইন, সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মোছা. রইছা খাতুন ও সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। 

এছাড়াও রয়েছেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী গোলাম আহসান, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) নাদিরা আফরোজ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাছের উদ্দিন, সমাজসেবা কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার, মেডিকেল অফিসার আলেয়া ফেরদৌসি। 

ঠিকাদারদের মধ্যে রয়েছেন মনার্ক এস্টাবলিশমেন্টের মালিক মো. ফাতে নূর ইসলাম, মেসার্স নাফিসা বিজনেস কর্নারের মালিক শেখ ইদ্রিস উদ্দিন (চঞ্চল), সান্ত্বনা ট্রেডার্সের মালিক নিজামুর রহমান চৌধুরী। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত চার অর্থবছরের কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদারকে ওষুধ সরবরাহের বিপরীতে ৩২ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। অথচ খুচরা মূল্য ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মূল্য অনুযায়ী ওই একই ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৮ টাকা। বাকি টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। এভাবে চার অর্থবছরে একই প্রক্রিয়ায় ওই টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এর আগে ১২ ডিসেম্বর পৃথক পাঁচ মামলায় মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি, বাজারদর কমিটি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও ঠিকাদারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ৩২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর আজিমপুরের এই মাতৃসদনে রেজিস্ট্রেশন না করার অজুহাতে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর ছিন্নমূল পারভীনকে রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়েছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রাস্তার ওপরেই বাচ্চা প্রসব করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন হাসপাতালটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ২০০০ সালে আবারও চালু করা হয়েছে। 

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

পরিবার পরিকল্পনার সাবেক ডিজিকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

আপডেট: ০৬:২৫:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন‌্য ওষুধ-সরঞ্জাম কেনার নামে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার তদন্তে পরিবার পরিকল্পনার সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) কাজী মোস্তফা সারোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুবকর সিদ্দিক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ডিজি মোস্তফা কেনাকাটায় অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে লিখিত বক্তব্য দেন। 

এর আগে গতকাল ১৭ ফেব্রুয়ারি আরেক সাবেক ডিজি মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই অভিযোগে মামলার অন্যতম প্রধান আসামি আজিমপুর মাতৃসদনের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইশরাত জাহানকে ৮ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেছিল দুদকের উপপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক। মামলা দায়ের করার পরপরই আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মামলায় ১৭ জন চিকিৎসক ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ৮ জনকে আসামি করা হয়। আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ইসরাত জাহানকে চারটি মামলাতেই আসামি করা হয়। 

অন্য আসামিরা হলেন- পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য পারভীন হক চৌধুরী, মাতৃসদনের সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মাহফুজা খাতুন, সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ‌্যান্ড রিসার্চ) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য চিন্ময় কান্তি দাস, সাবেক মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মাহফুজা দিলারা আকতার। 

আরও রয়েছেন, মাতৃসদনের মেডিকেল অফিসার ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য নাজরিনা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সদস্যসচিব-বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য জেবুন্নেসা হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি রওশন হোসনে জাহান, মাতৃসদনের সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ‌্যান্ড রিসার্চ) ও পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. লুৎফুল কবীর খান, মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য রওশন জাহান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হালিমা খাতুন, মাতৃসদনের বিভাগীয় প্রধান (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মো. আমীর হোসাইন, সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মোছা. রইছা খাতুন ও সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। 

এছাড়াও রয়েছেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী গোলাম আহসান, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) নাদিরা আফরোজ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাছের উদ্দিন, সমাজসেবা কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার, মেডিকেল অফিসার আলেয়া ফেরদৌসি। 

ঠিকাদারদের মধ্যে রয়েছেন মনার্ক এস্টাবলিশমেন্টের মালিক মো. ফাতে নূর ইসলাম, মেসার্স নাফিসা বিজনেস কর্নারের মালিক শেখ ইদ্রিস উদ্দিন (চঞ্চল), সান্ত্বনা ট্রেডার্সের মালিক নিজামুর রহমান চৌধুরী। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত চার অর্থবছরের কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদারকে ওষুধ সরবরাহের বিপরীতে ৩২ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। অথচ খুচরা মূল্য ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মূল্য অনুযায়ী ওই একই ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৮ টাকা। বাকি টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। এভাবে চার অর্থবছরে একই প্রক্রিয়ায় ওই টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এর আগে ১২ ডিসেম্বর পৃথক পাঁচ মামলায় মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি, বাজারদর কমিটি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও ঠিকাদারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ৩২ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর আজিমপুরের এই মাতৃসদনে রেজিস্ট্রেশন না করার অজুহাতে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর ছিন্নমূল পারভীনকে রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়েছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রাস্তার ওপরেই বাচ্চা প্রসব করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন হাসপাতালটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ২০০০ সালে আবারও চালু করা হয়েছে। 

 

আরও পড়ুন: