০৭:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষী মহল ফায়দা লুটার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেঃ রকিবুর রহমান

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৯:৫৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১
  • / ৪৩২৪ বার দেখা হয়েছে

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালক এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান বলেছেন, ‌‘বিভিন্নভাবে সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বাজারকে গুজবের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করে তােলে এবং বাজার থেকে ফায়দা লুটতে চায়। এর বাস্তব প্রমাণ আমরা আবারও পেলাম। বাজারে এমন গুজব যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’

মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন এই শেয়ারবাজার বিশ্লেষক।

তিনি বলেন, ‌‘বাজারে বারবার একটা গুজব ছাড়ানাে হয়েছে যে কোভিড-১৯ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার ছুটি ঘােষণা করবে এবং পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাবে, যা একেবারেই সত্য নয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ গুজবকে খণ্ডন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএসইসির চেয়ারম্যান স্পষ্ট ঘােষণা দিয়েছেন কোনো কারণেই পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে না। যতদিন ব্যাংক ব্যবস্থা চালু থাকবে ততদিন পুঁজিবাজার চালু থাকবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু ইতোমধ্যেই গুজবের কারণে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। অনেক বিনিয়ােগকারী এই গুজবে প্রভাবিত হয়ে তাদের শেয়ার পেনিক সেল করেছেন। যাতে করে মূলত বিনিয়ােগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন সেই গুজবের প্রভাব কাটিয়ে বাজারের ওপর আস্থা রেখে আবার বিনিয়ােগ শুরু করেছেন।’

রকিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদেরকে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে, গুজবনির্ভর বাজারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়ােগকারীরা। অতএব, বিনিয়ােগকারীদের শেয়ার বিক্রি করার পূর্বে (যারা ভালেঅ মৌলভিত্তিক শেয়ার হােল্ড করছেন) দশবার চিন্তা করতে হবে কেন বিক্রি করবেন।’

‘আমি বিশ্বাস করি, যেসব বিনিয়ােগকারী ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছেন, ভালভাবে কোম্পানি বিশ্লেষণ করেছেন তাদের লাভ-লােকসান নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই। বাজারে শেয়ারের দাম ওঠানামা করবে এটাই স্বাভাবিক। ভালাে মৌলভিত্তিক শেয়ার যদি আপনার হাতে থাকে, একটু বেশি দামেও যদি কিনে থাকেন এবং যদি ধরে রাখতে পারেন, সেই শেয়ারে আপনি কখনাে লােকসান করবেন না, ইনশাআল্লাহ।’

ডিএসই’র এই পরিচালক বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারের চরিত্রটা যদি যাচাই করি তাহলে আমরা দেখি একটি গােষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে

পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীকে প্রতারিত করে। মৌলিক শেয়ারের দাম যখন স্ট্যাবল থাকে, তখন ওই সকল দুষ্টচক্রের হাতে কোনাে শেয়ার না থাকার কারণে তারা কীভাবে শেয়ারের দাম কমিয়ে শেয়ার ক্রয় করবেন, সেই চেষ্টা করেন এবং অনেক সময় সফল হয়ে যায়ন। যারা ভাল মৌলভিত্তিক শেয়ার কিনে হোল্ড করতেন তারা প্রভাবিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

‘অপরদিকে, এই সুযােগ কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাজারের এই দুষ্টচক্রটি সিরিয়াল ট্রেডিং, সার্কুলার ট্রেডিং, মার্কেট মেনুপুলেশনের মাধ্যমে, অনেক সময় স্পন্সর, ডিরেক্টর, প্রোমোটার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মার্কেট ম্যানিপুলেট করে, বিভিন্ন রিউমার ছড়িয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে, ওইসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের জন্য বিনিয়ােগকারীদের প্রভাবিত করে ফেলেন। বিনিয়ােগকারীরা যখন তাদের ফাদে পা দিয়ে এসব শেয়ার কেনেন তখন তারা সাংঘাতিকভাবে প্রতারিত হযন।’

রকিবুর রহমান বলেন, ‘ডিএসই আয়োজিত ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলােকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অর্জন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী, বিএসইসির চেয়ারম্যান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব সু-স্পষ্টভাবে পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে রেখে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে যা কিছু করার সেগুলাে চালিয়ে যাবার ঘােষণা দিয়েছেন।’

‘শুধু ইকুইটি মার্কেট নয় বন্ড, সুকুক, ইসলামি বন্ড, ইটিএফ, এসএমই, ট্রেজারি বন্ড, এটিবি, ওটিসি যেগুলাে বাজারে চালু করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা আরও ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং বেক্সিমকোর বন্ড অনুমােদন দিয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড ট্রেড করার সব পদক্ষেপ নিয়েছে। মিউনিসিপ্যাল বস্তু নিয়ে আসার জোড় প্রচেষ্টা চলছে। বিদেশি অনেক কোম্পানি বন্ড ছাড়ার জন্য এগিয়ে আসছে। যারা পরবর্তীতে তালিকাভুক্ত হবে। বন্ড মার্কেটে যাতে সহজে ট্রেড করা যায় এবং এর অপারেশন যাতে সিম্পল হয় সেজন্য প্রয়ােজনীয় রুলসারেগুলেশনস প্রণয়ন ও সংশােধন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারকে শক্তিশালী করে এবং মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টরকে শক্তিশালী করা হচ্ছে, তারা যাতে ভালো মৌলভিত্তিক শেয়ারে ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে বাজারকে সাপাের্ট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ- আইসিবি’কে মার্কেট মেকার হিসেবে রোল প্লে করতে হবে। আইসিবির সঠিক রোল হচ্ছে মার্কেটকে স্টাবিলাইজ করা। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আইসিবিকে মার্কেট মেকারের ভূমিকা পালন করতে হবে।’

‘অপরদিকে, পুঁজিবাজারে যাতে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান (লােকাল ও আন্তর্জাতিক) আসতে পারে তার সুযােগ করে দেয়া হচ্ছে। বিদেশিরা যাতে

সহজে বাজারে ইনভেস্ট করতে পারেন এবং সহজে তাদের লাভের অংশ রিপারট্রিট (নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া) করতে পারেন তার সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ভুল থেকে বেরিয়ে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার জন্য এগিয়ে এসেছে। যা পুঁজি বাজার উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক দিক।’ বলেন ডিএসইর সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, ‘লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে ১৫ শতাংশ করতে হবে, যাতে ভালো মৌলভিত্তিক বিগ ফার্মস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে আরও উৎসাহ পায়। অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর সবাই পুঁজিবাজার যেন স্ট্যাবল হয়, যেন পার্টিসিপেশন বাড়ে, তার জন্য সকল ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিতে গুড করপোরেট কালচার, গুড করপোরেট গভর্নেন্স, আনার সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

‘ওটিসি মার্কেট থেকে ভালো ভালো কোম্পানিকে মেইন মার্কেটে আনা হচ্ছে। ছােট পেড আপ কোম্পানিকে অ্যাড্রেস করা হচ্ছে। যে সকল কোম্পানিতে স্পন্সর, ডিরেক্টরস, প্রোমোটাররা ৩০ শতাংশ হােল্ড করেন না সেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনপঠন করতে বিএসইসি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘মার্কেট মেকার অ্যাক্ট করা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে মার্কেট মেকার লাইসেন্স দেয়া শুরু হয়েছে। কোম্পানি বাই ব্যাক আইন করার জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবাই কাজ করছে। এফআরসি অ্যাক্টিভ হচ্ছে, যারা ভুল অডিট রিপাের্ট দিবে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। যারা সিরিয়াল ট্রেডিং, সার্কুলার ট্রেনিং, মার্কেট মেনুপুলেশন করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাজার পরিচালনায় বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জিরো টলারেন্সে আছেন। তিনি বারবার একটি ম্যাসেজ সবাইকে দিয়ে যাচ্ছেন কোথাও কোনো অনিয়ম তিনি সহ্য করবেন না, তিনি যত শক্তিশালী হােক না কেন।’

রকিবুর রহমান বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বাজারকে গতিশীল করতে ইকুইটি মার্কেটের পাশাপাশি বন্ড, সুকুক, ইসলামী বন্ড, ইপিএস, এসএমই, ট্রেজারি বন্ড, এটিবি, ওটিসি এসব এনে বাজারকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সফলতা অর্জন করতে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, যে সকল কোম্পানিতে স্পন্সর ডিরেক্টর ৩০ শতাংশ শেয়ার হােল্ড করে না, তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যেসব কোম্পানির পরিচালকেরা দীর্ঘ দিন বােনাস দিয়ে শেয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন, সিরিয়াল ট্রেডিং, সার্কুলার ট্রেডিং, মার্কেট মেনুপুলেশনের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন, তাদেরকে কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার কমপক্ষে ফেস ভ্যালুতে কিনতে হবে। তারা যদি শেয়ার কিনতে ব্যর্থ হন তাহলে তাদেরকে ম্যানেজমেন্ট থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং দক্ষ ও ডায়নামিক প্রফেশনালস নিয়ােগ দিতে হবে।’

‘ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য, অভার ভ্যালুয়েশন, রাতারাতি বাজারে আসার আগে কোম্পানির ইপিএস বেড়ে যাওয়া, পণ্যের বিক্রি বেড়ে যাওয়া, রিজার্ভ বেড়ে যাওয়া, কোম্পানির প্রডাক্টিভিটি পণ্যের মজুত বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখিয়ে কোম্পানিকে বিনিয়ােগকারীর নিকট আকর্ষণীয় করে মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করতে দেয়া যাবে না।’

রকিবুর রহমান বলেন, ‘বিগত দিনে যেসব কোম্পানি এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাদের কোনো অধিকার নেই এই মার্কেটে থাকার।’

তিনি বলেন, ‘বন্ড, সুকুক, ইসলামী বন্ড, ইটিএফ, এসএমই, ওটিসি ইত্যাদি বিনিয়ােগের জন্য নতুন নতুন উইন্ডাে খােলা হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীর

বিনিয়ােগের জন্য আরও উজ্জীবিত করবে। বাজার সঠিক পথে আছে এবং এভাবে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ট্রেডের যে স্বপ্ন তা আগামী তিন বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবে।’

বিজনেসজার্নাল/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষী মহল ফায়দা লুটার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেঃ রকিবুর রহমান

আপডেট: ০৯:৫৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালক এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান বলেছেন, ‌‘বিভিন্নভাবে সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বাজারকে গুজবের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করে তােলে এবং বাজার থেকে ফায়দা লুটতে চায়। এর বাস্তব প্রমাণ আমরা আবারও পেলাম। বাজারে এমন গুজব যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’

মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন এই শেয়ারবাজার বিশ্লেষক।

তিনি বলেন, ‌‘বাজারে বারবার একটা গুজব ছাড়ানাে হয়েছে যে কোভিড-১৯ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার ছুটি ঘােষণা করবে এবং পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাবে, যা একেবারেই সত্য নয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ গুজবকে খণ্ডন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএসইসির চেয়ারম্যান স্পষ্ট ঘােষণা দিয়েছেন কোনো কারণেই পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে না। যতদিন ব্যাংক ব্যবস্থা চালু থাকবে ততদিন পুঁজিবাজার চালু থাকবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু ইতোমধ্যেই গুজবের কারণে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। অনেক বিনিয়ােগকারী এই গুজবে প্রভাবিত হয়ে তাদের শেয়ার পেনিক সেল করেছেন। যাতে করে মূলত বিনিয়ােগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন সেই গুজবের প্রভাব কাটিয়ে বাজারের ওপর আস্থা রেখে আবার বিনিয়ােগ শুরু করেছেন।’

রকিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদেরকে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে, গুজবনির্ভর বাজারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়ােগকারীরা। অতএব, বিনিয়ােগকারীদের শেয়ার বিক্রি করার পূর্বে (যারা ভালেঅ মৌলভিত্তিক শেয়ার হােল্ড করছেন) দশবার চিন্তা করতে হবে কেন বিক্রি করবেন।’

‘আমি বিশ্বাস করি, যেসব বিনিয়ােগকারী ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছেন, ভালভাবে কোম্পানি বিশ্লেষণ করেছেন তাদের লাভ-লােকসান নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই। বাজারে শেয়ারের দাম ওঠানামা করবে এটাই স্বাভাবিক। ভালাে মৌলভিত্তিক শেয়ার যদি আপনার হাতে থাকে, একটু বেশি দামেও যদি কিনে থাকেন এবং যদি ধরে রাখতে পারেন, সেই শেয়ারে আপনি কখনাে লােকসান করবেন না, ইনশাআল্লাহ।’

ডিএসই’র এই পরিচালক বলেন, ‘দেশের পুঁজিবাজারের চরিত্রটা যদি যাচাই করি তাহলে আমরা দেখি একটি গােষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে

পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীকে প্রতারিত করে। মৌলিক শেয়ারের দাম যখন স্ট্যাবল থাকে, তখন ওই সকল দুষ্টচক্রের হাতে কোনাে শেয়ার না থাকার কারণে তারা কীভাবে শেয়ারের দাম কমিয়ে শেয়ার ক্রয় করবেন, সেই চেষ্টা করেন এবং অনেক সময় সফল হয়ে যায়ন। যারা ভাল মৌলভিত্তিক শেয়ার কিনে হোল্ড করতেন তারা প্রভাবিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

‘অপরদিকে, এই সুযােগ কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাজারের এই দুষ্টচক্রটি সিরিয়াল ট্রেডিং, সার্কুলার ট্রেডিং, মার্কেট মেনুপুলেশনের মাধ্যমে, অনেক সময় স্পন্সর, ডিরেক্টর, প্রোমোটার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মার্কেট ম্যানিপুলেট করে, বিভিন্ন রিউমার ছড়িয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে, ওইসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের জন্য বিনিয়ােগকারীদের প্রভাবিত করে ফেলেন। বিনিয়ােগকারীরা যখন তাদের ফাদে পা দিয়ে এসব শেয়ার কেনেন তখন তারা সাংঘাতিকভাবে প্রতারিত হযন।’

রকিবুর রহমান বলেন, ‘ডিএসই আয়োজিত ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলােকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অর্জন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী, বিএসইসির চেয়ারম্যান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব সু-স্পষ্টভাবে পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে রেখে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে যা কিছু করার সেগুলাে চালিয়ে যাবার ঘােষণা দিয়েছেন।’

‘শুধু ইকুইটি মার্কেট নয় বন্ড, সুকুক, ইসলামি বন্ড, ইটিএফ, এসএমই, ট্রেজারি বন্ড, এটিবি, ওটিসি যেগুলাে বাজারে চালু করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা আরও ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং বেক্সিমকোর বন্ড অনুমােদন দিয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড ট্রেড করার সব পদক্ষেপ নিয়েছে। মিউনিসিপ্যাল বস্তু নিয়ে আসার জোড় প্রচেষ্টা চলছে। বিদেশি অনেক কোম্পানি বন্ড ছাড়ার জন্য এগিয়ে আসছে। যারা পরবর্তীতে তালিকাভুক্ত হবে। বন্ড মার্কেটে যাতে সহজে ট্রেড করা যায় এবং এর অপারেশন যাতে সিম্পল হয় সেজন্য প্রয়ােজনীয় রুলসারেগুলেশনস প্রণয়ন ও সংশােধন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারকে শক্তিশালী করে এবং মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টরকে শক্তিশালী করা হচ্ছে, তারা যাতে ভালো মৌলভিত্তিক শেয়ারে ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে বাজারকে সাপাের্ট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ- আইসিবি’কে মার্কেট মেকার হিসেবে রোল প্লে করতে হবে। আইসিবির সঠিক রোল হচ্ছে মার্কেটকে স্টাবিলাইজ করা। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আইসিবিকে মার্কেট মেকারের ভূমিকা পালন করতে হবে।’

‘অপরদিকে, পুঁজিবাজারে যাতে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান (লােকাল ও আন্তর্জাতিক) আসতে পারে তার সুযােগ করে দেয়া হচ্ছে। বিদেশিরা যাতে

সহজে বাজারে ইনভেস্ট করতে পারেন এবং সহজে তাদের লাভের অংশ রিপারট্রিট (নিজ দেশে নিয়ে যাওয়া) করতে পারেন তার সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ভুল থেকে বেরিয়ে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার জন্য এগিয়ে এসেছে। যা পুঁজি বাজার উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক দিক।’ বলেন ডিএসইর সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, ‘লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে ১৫ শতাংশ করতে হবে, যাতে ভালো মৌলভিত্তিক বিগ ফার্মস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে আরও উৎসাহ পায়। অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর সবাই পুঁজিবাজার যেন স্ট্যাবল হয়, যেন পার্টিসিপেশন বাড়ে, তার জন্য সকল ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিতে গুড করপোরেট কালচার, গুড করপোরেট গভর্নেন্স, আনার সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

‘ওটিসি মার্কেট থেকে ভালো ভালো কোম্পানিকে মেইন মার্কেটে আনা হচ্ছে। ছােট পেড আপ কোম্পানিকে অ্যাড্রেস করা হচ্ছে। যে সকল কোম্পানিতে স্পন্সর, ডিরেক্টরস, প্রোমোটাররা ৩০ শতাংশ হােল্ড করেন না সেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনপঠন করতে বিএসইসি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘মার্কেট মেকার অ্যাক্ট করা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে মার্কেট মেকার লাইসেন্স দেয়া শুরু হয়েছে। কোম্পানি বাই ব্যাক আইন করার জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবাই কাজ করছে। এফআরসি অ্যাক্টিভ হচ্ছে, যারা ভুল অডিট রিপাের্ট দিবে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। যারা সিরিয়াল ট্রেডিং, সার্কুলার ট্রেনিং, মার্কেট মেনুপুলেশন করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাজার পরিচালনায় বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জিরো টলারেন্সে আছেন। তিনি বারবার একটি ম্যাসেজ সবাইকে দিয়ে যাচ্ছেন কোথাও কোনো অনিয়ম তিনি সহ্য করবেন না, তিনি যত শক্তিশালী হােক না কেন।’

রকিবুর রহমান বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বাজারকে গতিশীল করতে ইকুইটি মার্কেটের পাশাপাশি বন্ড, সুকুক, ইসলামী বন্ড, ইপিএস, এসএমই, ট্রেজারি বন্ড, এটিবি, ওটিসি এসব এনে বাজারকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সফলতা অর্জন করতে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, যে সকল কোম্পানিতে স্পন্সর ডিরেক্টর ৩০ শতাংশ শেয়ার হােল্ড করে না, তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যেসব কোম্পানির পরিচালকেরা দীর্ঘ দিন বােনাস দিয়ে শেয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন, সিরিয়াল ট্রেডিং, সার্কুলার ট্রেডিং, মার্কেট মেনুপুলেশনের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন, তাদেরকে কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার কমপক্ষে ফেস ভ্যালুতে কিনতে হবে। তারা যদি শেয়ার কিনতে ব্যর্থ হন তাহলে তাদেরকে ম্যানেজমেন্ট থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং দক্ষ ও ডায়নামিক প্রফেশনালস নিয়ােগ দিতে হবে।’

‘ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য, অভার ভ্যালুয়েশন, রাতারাতি বাজারে আসার আগে কোম্পানির ইপিএস বেড়ে যাওয়া, পণ্যের বিক্রি বেড়ে যাওয়া, রিজার্ভ বেড়ে যাওয়া, কোম্পানির প্রডাক্টিভিটি পণ্যের মজুত বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখিয়ে কোম্পানিকে বিনিয়ােগকারীর নিকট আকর্ষণীয় করে মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করতে দেয়া যাবে না।’

রকিবুর রহমান বলেন, ‘বিগত দিনে যেসব কোম্পানি এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাদের কোনো অধিকার নেই এই মার্কেটে থাকার।’

তিনি বলেন, ‘বন্ড, সুকুক, ইসলামী বন্ড, ইটিএফ, এসএমই, ওটিসি ইত্যাদি বিনিয়ােগের জন্য নতুন নতুন উইন্ডাে খােলা হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীর

বিনিয়ােগের জন্য আরও উজ্জীবিত করবে। বাজার সঠিক পথে আছে এবং এভাবে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ট্রেডের যে স্বপ্ন তা আগামী তিন বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবে।’

বিজনেসজার্নাল/এসএ