১১:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লোপাটঃ অবশেষে অ্যাকশনে বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৫৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৫২৭০ বার দেখা হয়েছে

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়েছেন- এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরইমধ্যে অ্যাকশন শুরু হয়েছে। অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্তত পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব অর্থ লোপাটের তথ্য চাপা দিতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। এসব অনিয়মের সহায়তা করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। বিনিময়ে পেতেন আর্থিক সুবিধা। পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হকের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাশেদুল হক এসব তথ্য দেন বলে খবর রয়েছে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে আনে।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রাশেদুল হক বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিতো রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে নির্বাহী পরিচালক) শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ম্যানেজ’ করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

যাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খতিয়ে দেখছে। কোনো প্রমাণ মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া আদালত যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করবো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ জাতীয় ঘটনা আগে ঘটেনি। একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এখানে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী, সবাই এক নয়। কেউ কোনো অনিয়ম করলে তার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান নেবে না। তাই অভিযোগ এসেছে, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। কী পদক্ষেপ নেবো তাও দেখা হচ্ছে। তবে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আইন রয়েছে কোনো অনিয়মে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ঘুষের বিনিময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে এ খবরটি আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশ আসার আগেই শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল ঢাকা পোস্ট। তখন তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পান হলেন শাহ আলম। কুমিল্লা জেলার সদর থানাধীন চম্পকনগর গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহ আলমের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার ডিগ্রি রয়েছে। তিনি ১৯৮৮ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ পরিদর্শন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ, ভিজিলেন্স ডিভিশন (বর্তমানে এফআইসিএসডি), বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।

জবানবন্দির বিষয়ে দুদকের একটি সূত্রে জানা যায়, রাশেদুল হক জবানবন্দিতে বলেন, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) নির্দেশেই প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স থেকে অর্থ লোপাটের তথ্য ধামাচাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক এক ডেপুটি গভর্নরকে মাসিক দুই লাখ টাকা করে মাসোহারা দিতেন। জবানবন্দিতে সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর (এস কে) চৌধুরীর নাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিমকে ম্যানেজ করতে লাখ লাখ টাকা ঢেলেছেন পিকে হালদার এমনটা দাবি করেছেন জবানবন্দিতে।

এস কে সুর চৌধুরীর নাম এবারই প্রথম এলো না। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি যে ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট সেখানেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী নাম ছিল। তবে এবারই প্রথম নির্বাহী পরিচালকের নাম এলো।

শেয়ার করুন

x
English Version

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লোপাটঃ অবশেষে অ্যাকশনে বাংলাদেশ ব্যাংক

আপডেট: ১২:৫৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়েছেন- এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরইমধ্যে অ্যাকশন শুরু হয়েছে। অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্তত পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব অর্থ লোপাটের তথ্য চাপা দিতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। এসব অনিয়মের সহায়তা করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। বিনিময়ে পেতেন আর্থিক সুবিধা। পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হকের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাশেদুল হক এসব তথ্য দেন বলে খবর রয়েছে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে আনে।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রাশেদুল হক বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিতো রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে নির্বাহী পরিচালক) শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ম্যানেজ’ করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

যাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খতিয়ে দেখছে। কোনো প্রমাণ মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া আদালত যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করবো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ জাতীয় ঘটনা আগে ঘটেনি। একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এখানে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী, সবাই এক নয়। কেউ কোনো অনিয়ম করলে তার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান নেবে না। তাই অভিযোগ এসেছে, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। কী পদক্ষেপ নেবো তাও দেখা হচ্ছে। তবে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আইন রয়েছে কোনো অনিয়মে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ঘুষের বিনিময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে এ খবরটি আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশ আসার আগেই শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল ঢাকা পোস্ট। তখন তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পান হলেন শাহ আলম। কুমিল্লা জেলার সদর থানাধীন চম্পকনগর গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহ আলমের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার ডিগ্রি রয়েছে। তিনি ১৯৮৮ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ পরিদর্শন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ, ভিজিলেন্স ডিভিশন (বর্তমানে এফআইসিএসডি), বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।

জবানবন্দির বিষয়ে দুদকের একটি সূত্রে জানা যায়, রাশেদুল হক জবানবন্দিতে বলেন, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) নির্দেশেই প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স থেকে অর্থ লোপাটের তথ্য ধামাচাপা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক এক ডেপুটি গভর্নরকে মাসিক দুই লাখ টাকা করে মাসোহারা দিতেন। জবানবন্দিতে সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর (এস কে) চৌধুরীর নাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিমকে ম্যানেজ করতে লাখ লাখ টাকা ঢেলেছেন পিকে হালদার এমনটা দাবি করেছেন জবানবন্দিতে।

এস কে সুর চৌধুরীর নাম এবারই প্রথম এলো না। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি যে ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট সেখানেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী নাম ছিল। তবে এবারই প্রথম নির্বাহী পরিচালকের নাম এলো।