০৬:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্ত চিকিৎসকরাঃ ৩ দিনে ৬ মৃত্যু

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৩৬:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ এপ্রিল ২০২১
  • / ৪১৫০ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির দিনদিন অবনতি ঘটছে। হাসপাতালে আসা জনস্রোতের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আশঙ্কাজনকভাবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। গত তিন দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ছয় চিকিৎসকের নাম।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে দেশে এ পর্যন্ত (১০ এপ্রিল) দুই হাজার ৯০৮ জন চিকিৎসক, এক হাজার ৯৯৬ জন নার্স এবং তিন হাজার ২৯৩ জন অন্যান্য স্টাফসহ মোট আট হাজার ১৯৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স রয়েছেন। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১৩৭ জন চিকিৎসক এবং তিনজন ডেন্টাল সার্জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনায় দেশে প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছিল গত বছরের ১৫ এপ্রিল। ওই দিন মারা গিয়েছিলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন আহমদ (৪৭)। ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়েই সংক্রমিত হয়েছিলেন। ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে চিকিৎসক সমাজসহ সব পেশাজীবী শ্রেণী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

চিকিৎসকদের মৃত্যুর তালিকায় যোগ হওয়া সর্বশেষ নামটি হচ্ছে ডা. গাজী সাইফুল আলম চৌধুরী। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। শনিবার (১০ এপ্রিল) রাত দেড়টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

অল্প সময়ের ব্যবধানে এভাবে এত চিকিৎসকের মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, করোনায় আমরা অনেক বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসককে হারিয়েছি। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি হতে অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়। তারা দেশের সম্পদ। কষ্টের মধ্যেও গর্বের বিষয় হচ্ছে, জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও সম্মুখসারির এই যোদ্ধারা পিছপা হননি, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত তিনদিনে ছয় চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার (১০ এপ্রিল) মারা গেছেন দুজন। ডা. গাজী সাইফুল আলম চৌধুরী ছাড়াও এদিন মারা যান ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোজাদ্দেদ মেহেদী। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।

এর আগে শুক্রবার করোনাভাইরাসে দুজন চিকিৎসক মারা যান। তাদের মধ্যে একজন গরিবের চিকিৎসক খ্যাত আব্দুল লতিফ। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার দক্ষিণ পাড় এলাকার শিকলবাহায়। গতকাল মারা যাওয়া অন্য চিকিৎসক হলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মোহাম্মদ মুনীর।

বৃহস্পতিবার আরও দুই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাদের মধ্যে একজন হলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় মারা যান তিনি। অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ রামেকের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এদিন মারা যাওয়া আরেকজন হলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মো. শওকত আলী।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্ত চিকিৎসকরাঃ ৩ দিনে ৬ মৃত্যু

আপডেট: ১০:৩৬:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ এপ্রিল ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির দিনদিন অবনতি ঘটছে। হাসপাতালে আসা জনস্রোতের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আশঙ্কাজনকভাবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। গত তিন দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ছয় চিকিৎসকের নাম।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য মতে, করোনাভাইরাসে দেশে এ পর্যন্ত (১০ এপ্রিল) দুই হাজার ৯০৮ জন চিকিৎসক, এক হাজার ৯৯৬ জন নার্স এবং তিন হাজার ২৯৩ জন অন্যান্য স্টাফসহ মোট আট হাজার ১৯৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স রয়েছেন। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ১৩৭ জন চিকিৎসক এবং তিনজন ডেন্টাল সার্জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনায় দেশে প্রথম চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছিল গত বছরের ১৫ এপ্রিল। ওই দিন মারা গিয়েছিলেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন আহমদ (৪৭)। ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়েই সংক্রমিত হয়েছিলেন। ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে চিকিৎসক সমাজসহ সব পেশাজীবী শ্রেণী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

চিকিৎসকদের মৃত্যুর তালিকায় যোগ হওয়া সর্বশেষ নামটি হচ্ছে ডা. গাজী সাইফুল আলম চৌধুরী। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। শনিবার (১০ এপ্রিল) রাত দেড়টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

অল্প সময়ের ব্যবধানে এভাবে এত চিকিৎসকের মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, করোনায় আমরা অনেক বিশেষজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসককে হারিয়েছি। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি হতে অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়। তারা দেশের সম্পদ। কষ্টের মধ্যেও গর্বের বিষয় হচ্ছে, জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও সম্মুখসারির এই যোদ্ধারা পিছপা হননি, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত তিনদিনে ছয় চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার (১০ এপ্রিল) মারা গেছেন দুজন। ডা. গাজী সাইফুল আলম চৌধুরী ছাড়াও এদিন মারা যান ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোজাদ্দেদ মেহেদী। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।

এর আগে শুক্রবার করোনাভাইরাসে দুজন চিকিৎসক মারা যান। তাদের মধ্যে একজন গরিবের চিকিৎসক খ্যাত আব্দুল লতিফ। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার দক্ষিণ পাড় এলাকার শিকলবাহায়। গতকাল মারা যাওয়া অন্য চিকিৎসক হলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মোহাম্মদ মুনীর।

বৃহস্পতিবার আরও দুই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাদের মধ্যে একজন হলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় মারা যান তিনি। অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ রামেকের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এদিন মারা যাওয়া আরেকজন হলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মো. শওকত আলী।

ঢাকা/এসএ