কোরআন অধ্যয়ন ও অনুশীলনের গুরুত্ব
- আপডেট: ০৫:৪৯:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- / ৪২৫৫ বার দেখা হয়েছে
মুসলমানদের যে প্রাথমিক সাতটি বিষয় বিশ্বাস করতে হয়, তার অন্যতম হলো আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। কিতাব মানে বই বা গ্রন্থ। শত সহিফা ও চারটি কিতাবের মধ্যে কোরআন হলো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি গ্রন্থ।
কোরআন অধ্যয়ন বা গবেষণা ও তিলাওয়াত দুটি স্বতন্ত্র ইবাদত এবং একটি অন্যটির পরিপূরক বা সহায়ক। পূর্ণ কোরআন একবার পড়াকে ইসলামি পরিভাষায় ‘খতম’ বলা হয়। খোলাফায়ে রাশেদিন ও আশারায়ে মুবাশ্শারাসহ বিশিষ্ট সাহাবিরা প্রায়ই সাত দিবসে এক খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন, যে কারণে কোরআন শরিফে সপ্ত মঞ্জিল হয়েছে। এক মাসে বা ৩০ দিনে পড়ার জন্য ‘পারা’ বা ‘সিপারা’ ভাগ করা হয়েছে।
‘কোরআন’ শব্দের অর্থ যা পাঠ করা হয়, যা পাঠযোগ্য ও বারবার পাঠের উপযুক্ত। কোরআন শব্দের আরেকটি অর্থ যা নিকটে পৌঁছে দেয় বা যা নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা যায় বলেই এরূপ নামকরণ হয়েছে। কোরআনে কারিমে অবতীর্ণ প্রথম সুরার প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দেই পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘পড়ো তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা-৯৬ আলাক, আয়াত: ১)। কোরআন তিলাওয়াত করা মানে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন করা। ‘দয়াময় আল্লাহ কোরআন শেখানোর নিমিত্তে মানব সৃষ্টি করলেন, তাকে ভাব প্রকাশ শেখালেন।’ (সুরা-৫৫ রহমান, আয়াত: ১-৪)।
হাদিস শরিফে আছে, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যিনি কোরআন মাজিদ শিক্ষা করেন এবং শিক্ষা দেন। (বুখারি ও মুসলিম)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর বিশেষ আপন-স্বজন।’ (বুখারি)।
কোরআন কারিম তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন শারীরিক ও মানসিক রোগমুক্তির অন্যতম উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোরআন অন্তরের ব্যাধির আরোগ্য দান করে।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ৫৭)। ‘আমি আল–কোরআনে এমন আয়াতসমূহ নাজিল করেছি, যদ্বারা মুমিনদের রোগমুক্তি ও শান্তি লাভ হয়।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৮২)। ‘আপনি বলুন, এটা ইমানদারদের জন্য পথনির্দেশ ও রোগমুক্তি প্রদান করে।’ (সুরা-৪১ হা–মিম সাজদাহ, আয়াত: ৪৪)।
কোরআনের রয়েছে মানব ইতিহাসের আদি উৎস, সৃষ্টিতত্ত্ব, প্রকৃতির বিবর্তন ও সমাজ পরিবর্তনের ক্রমিক বিবরণ। স্বজনের প্রতি ভালোবাসা, প্রেম-প্রণয়, দাম্পত্য ও পারিবারিক উপাখ্যান, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি ও দর্শন। মনস্তত্ত্ব, অপরাধবিজ্ঞান, মানবাধিকার, দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্য পালনে সচেতন করাসহ জীবনের সব বিষয়।
যাঁরা কোরআন শুধু তিলাওয়াত করে যাচ্ছেন, তা বোঝার ও আমল করার চেষ্টা করছেন না, তাঁদের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যাদের তাওরাত কিতাব বহনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা তা প্রকৃতরূপে বহন করেনি। তাদের দৃষ্টান্ত ওই গর্দভতুল্য যে পুস্তকের বোঝা বহন করে।’ (কিন্তু তা অনুধাবন ও অনুসরণ করে না)। (সুরা-৬২ জুমআ, আয়াত: ৫)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম