১২:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চেহারার সৌন্দর্য রক্ষায় পর্দার গুরুত্ব

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:৩৮:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১১৮ বার দেখা হয়েছে

আমাদের সমাজের মেয়েরা নিজেদের সৌন্দর্য বাড়াতে কত কিছুই না করে। চেহারায় সবসময় বিভিন্ন রকমের বস্তু মাখে। অনেকে আবার ফেসিয়াল করে। কিন্তু সৌন্দর্য রক্ষার ক্ষেত্রে পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম। বোরকা পরলে রোদবৃষ্টির উপদ্রুত থেকে চেহারাকে রক্ষা করা যায়। এতে চেহারার লাবণ্যতা বৃদ্ধি পায়। মুখের জৌলুস দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। অপর দিকে কোরবানের বিধানও মানা হয়।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুবই পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। -সুরা নুর আয়াত নং-৩০।

এখানে সুক্ষ্ম একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায় বেগানা পুরুষদের থেকে নারীদের দেহ যেহেতু পরিপূর্ণ ঢেকে রাখা ফরজ, তাহলে আল্লাহ পুরুষদেরকে নারীদের কোন অঙ্গ দেখা থেকে চক্ষু অবনত রাখার কথা বললেন?

নিশ্চয় চেহারা। সুতরাং আয়াতটি থেকে ক্লিয়ার বুঝা যাচ্ছে মহিলাদের চেহারা দেখানো জায়েজ নয়। যাতে করে নারীরা নিজেদের সৌন্দর্য রক্ষা করতে পারে। নিজেদেরকে হেফাজত করতে পারে। এ কথাটি হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

হজরত আলী (রা.) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আলী, (নারীদের দিকে হঠাৎ নজর পড়ে গেলে) দ্বিতীয়বার তাকাবে না, কারণ প্রথমবার তোমার জন্য সুযোগ রয়েছে, দ্বিতীয়বার নয়। -ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৫৫৭ ও মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ১৩৬৯।

এ আয়াত এবং হাদিস থেকে সুস্পষ্ট বোঝা গেল যে, নারীদের চেহারা দেখা বৈধ নয়। তাদের চেহারা ঢেকে রাখতে হবে। যার ফলে দেখা যায় আবদ্ধ থাকার কারণে তাদের চেহারা সংরক্ষিত থাকবে। কোনো স্পর্ট পড়বে না। নারীদের জন্য পর পুরুষের সামনে মুখসর্বস্ব শরীর ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। এতে তার চেহারার সৌন্দর্য রক্ষা পাবে।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিন স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের ‘জিলবাবের” কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। – সুরা আহযাব আয়াত নং ৫৯।

আয়াতে জিলবাব এসেছে, এর অর্থ হলো- বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। – তাফসিরে কুরতুবি খণ্ড ১৪ পৃষ্ঠা ২৪৩।

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলতেন, যখন এ আয়াতে তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ ওড়না দ্বারা আবৃত করে রাখার কথা বলা হলো তখন মুহাজির মহিলারা তাদের তহবন্দের পার্শ্ব ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকতে লাগলেন।- সহিহ বুখারি হাদিস নং ৪৭৫৯।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস রা. (যিনি সব মুফাসসিরদের সর্দার) তিনি বলেন, ‘আল্লাহ মুমিন নারীদের আদেশ করেছেন তারা যেন কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাথা থেকে চাদর টেনে সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল আবৃত করে, শুধু (চলার জন্য) এক চোখ খোলা রাখে।’- তাফসিরে কুরতুবি খণ্ড ১৪ পৃষ্ঠা ২৪৩।

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তার হজের বিবরণে বলেছেন, ইহরামের কারণে তারা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করতেন, তখন মহিলারা মুখমণ্ডল আবৃত করে ফেলতেন। পুরুষরা চলে যাওয়ার পর তারা নেকাব তুলে ফেলতেন। – আবু দাউদ হাদিস ১৮৩৩।

এসব আয়াত এবং হাদিস থেকে বোঝা গেল, পর্দা যেমন ইসলামের একটি বিধান ঠিক তদ্রূপ নারীদের সৌন্দর্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকাও অতুলনীয়। এতে চেহারা হেফাজতে থাকে। পুরুষদের চোখের নজর থেকে সংরক্ষিত থাকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পর্দা মেনে চলার তাওফিক দান করুক। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, ঢাকা।

শেয়ার করুন

x
English Version

চেহারার সৌন্দর্য রক্ষায় পর্দার গুরুত্ব

আপডেট: ০৬:৩৮:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

আমাদের সমাজের মেয়েরা নিজেদের সৌন্দর্য বাড়াতে কত কিছুই না করে। চেহারায় সবসময় বিভিন্ন রকমের বস্তু মাখে। অনেকে আবার ফেসিয়াল করে। কিন্তু সৌন্দর্য রক্ষার ক্ষেত্রে পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম। বোরকা পরলে রোদবৃষ্টির উপদ্রুত থেকে চেহারাকে রক্ষা করা যায়। এতে চেহারার লাবণ্যতা বৃদ্ধি পায়। মুখের জৌলুস দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। অপর দিকে কোরবানের বিধানও মানা হয়।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুবই পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। -সুরা নুর আয়াত নং-৩০।

এখানে সুক্ষ্ম একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায় বেগানা পুরুষদের থেকে নারীদের দেহ যেহেতু পরিপূর্ণ ঢেকে রাখা ফরজ, তাহলে আল্লাহ পুরুষদেরকে নারীদের কোন অঙ্গ দেখা থেকে চক্ষু অবনত রাখার কথা বললেন?

নিশ্চয় চেহারা। সুতরাং আয়াতটি থেকে ক্লিয়ার বুঝা যাচ্ছে মহিলাদের চেহারা দেখানো জায়েজ নয়। যাতে করে নারীরা নিজেদের সৌন্দর্য রক্ষা করতে পারে। নিজেদেরকে হেফাজত করতে পারে। এ কথাটি হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

হজরত আলী (রা.) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আলী, (নারীদের দিকে হঠাৎ নজর পড়ে গেলে) দ্বিতীয়বার তাকাবে না, কারণ প্রথমবার তোমার জন্য সুযোগ রয়েছে, দ্বিতীয়বার নয়। -ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৫৫৭ ও মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ১৩৬৯।

এ আয়াত এবং হাদিস থেকে সুস্পষ্ট বোঝা গেল যে, নারীদের চেহারা দেখা বৈধ নয়। তাদের চেহারা ঢেকে রাখতে হবে। যার ফলে দেখা যায় আবদ্ধ থাকার কারণে তাদের চেহারা সংরক্ষিত থাকবে। কোনো স্পর্ট পড়বে না। নারীদের জন্য পর পুরুষের সামনে মুখসর্বস্ব শরীর ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। এতে তার চেহারার সৌন্দর্য রক্ষা পাবে।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিন স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের ‘জিলবাবের” কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। – সুরা আহযাব আয়াত নং ৫৯।

আয়াতে জিলবাব এসেছে, এর অর্থ হলো- বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়। – তাফসিরে কুরতুবি খণ্ড ১৪ পৃষ্ঠা ২৪৩।

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলতেন, যখন এ আয়াতে তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ ওড়না দ্বারা আবৃত করে রাখার কথা বলা হলো তখন মুহাজির মহিলারা তাদের তহবন্দের পার্শ্ব ছিঁড়ে তা দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকতে লাগলেন।- সহিহ বুখারি হাদিস নং ৪৭৫৯।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস রা. (যিনি সব মুফাসসিরদের সর্দার) তিনি বলেন, ‘আল্লাহ মুমিন নারীদের আদেশ করেছেন তারা যেন কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাথা থেকে চাদর টেনে সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল আবৃত করে, শুধু (চলার জন্য) এক চোখ খোলা রাখে।’- তাফসিরে কুরতুবি খণ্ড ১৪ পৃষ্ঠা ২৪৩।

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তার হজের বিবরণে বলেছেন, ইহরামের কারণে তারা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করতেন, তখন মহিলারা মুখমণ্ডল আবৃত করে ফেলতেন। পুরুষরা চলে যাওয়ার পর তারা নেকাব তুলে ফেলতেন। – আবু দাউদ হাদিস ১৮৩৩।

এসব আয়াত এবং হাদিস থেকে বোঝা গেল, পর্দা যেমন ইসলামের একটি বিধান ঠিক তদ্রূপ নারীদের সৌন্দর্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকাও অতুলনীয়। এতে চেহারা হেফাজতে থাকে। পুরুষদের চোখের নজর থেকে সংরক্ষিত থাকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পর্দা মেনে চলার তাওফিক দান করুক। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, ঢাকা।