০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

জিয়ার খেতাব বাতিলের উদ্যোগ চূড়ান্ত করতে কমিটি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:২৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪৪৩৬ বার দেখা হয়েছে

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, খেতাব বাতিল করতে এখন ঘোষণা বাকি রয়েছে। তার আগে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।

জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের উদ্যোগ চূড়ান্ত করতে কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এরইমধ্যে তৎপরতাও শুরু করেছে কমিটি। জামুকার সদস্য ও সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরও আছেন- সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও মো. রশিদুল আলম। এই কমিটি গঠন করা হয়েছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি। জামুকার ৭২তম সভার কার্যবিবরণীতে তা উল্লেখ করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করে সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য। এ ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের। বিএনপি সবসময়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।  

গঠিত কমিটির একজন সদস্য জানান, জামুকার তিন সদস্যের কমিটি জিয়াউর রহমান ছাড়াও খুনি খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীসহ অন্যদের বিষয়ে বিভিন্ন অপতৎপরতার প্রমাণপত্র উপস্থাপন করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়েও তথ্য প্রমাণ যোগাড় করবে এই কমিটি। 

কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংবিধান লংঘন, সংবিধানের মূলনীতি বাতিল, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের মদদ দেওয়া ও তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা, আত্মস্বীকৃত খুনিদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ, আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন সাক্ষাতকারে সম্পৃক্ততামূলক বক্তব্য উল্লে­খ থাকা, তাদের দেশত্যাগে সহায়তা ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন- এসব কারণে জামুকা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জামুকার সভায় জিয়াউর রহমানকে দেওয়া খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরীফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়।

জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় এই পদক বাতিলের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১২ বছরে জিয়াউর রহমানকে বিভিন্নভাবে খাটো করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার জিয়াউর রহমানকে ছোট করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবমাননা করছে। কিন্তু এসব ষড়যন্ত্র করে তারা মানুষের অন্তর থেকে জিয়াউর রহমানকে মুছতে পারবে না। খেতাব বাতিলের এ উদ্যোগের প্রতিবাদে কর্মসূচিও পালন করেছে বিএনপি। 

১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এমন এক কর্মসূচি থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়- জিয়ার খেতাব বাতিলের চিন্তা করলে সরকারের হাত পুড়ে ছারখার হবে। সেদিনের প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসেনর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান বলেন, সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, সেক্টর কমান্ডার, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীরউত্তম, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমরা বলে দিচ্ছি সরকার যদি তার ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের চিন্তা করে তবে হাত জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা মনে করেন জিয়ার খেতাব বাতিলের এখতিয়ার জামুকার নেই। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সুপারিশের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ১৭ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধনও করেন তারা। ওই মানববন্ধনে সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব কারও দয়ার দান নয়, এটা তার অর্জন। মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ অবদান রেখেই তিনি এ খেতাব অর্জন করেছেন। যথার্থভাবেই বাংলাদেশ সরকার তাকে মূল্যায়িত করেছে। এ খেতাব বাতিলে জামুকার আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। এটি তাদের কার্যক্রমে নেই। জামুকার এমন হীন অপতৎপরতার নিন্দা জানাই।  

 

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

জিয়ার খেতাব বাতিলের উদ্যোগ চূড়ান্ত করতে কমিটি

আপডেট: ০১:২৯:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের প্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, খেতাব বাতিল করতে এখন ঘোষণা বাকি রয়েছে। তার আগে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।

জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের উদ্যোগ চূড়ান্ত করতে কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এরইমধ্যে তৎপরতাও শুরু করেছে কমিটি। জামুকার সদস্য ও সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরও আছেন- সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও মো. রশিদুল আলম। এই কমিটি গঠন করা হয়েছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি। জামুকার ৭২তম সভার কার্যবিবরণীতে তা উল্লেখ করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করে সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য। এ ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের। বিএনপি সবসময়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।  

গঠিত কমিটির একজন সদস্য জানান, জামুকার তিন সদস্যের কমিটি জিয়াউর রহমান ছাড়াও খুনি খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীসহ অন্যদের বিষয়ে বিভিন্ন অপতৎপরতার প্রমাণপত্র উপস্থাপন করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়েও তথ্য প্রমাণ যোগাড় করবে এই কমিটি। 

কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংবিধান লংঘন, সংবিধানের মূলনীতি বাতিল, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের মদদ দেওয়া ও তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা, আত্মস্বীকৃত খুনিদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ, আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন সাক্ষাতকারে সম্পৃক্ততামূলক বক্তব্য উল্লে­খ থাকা, তাদের দেশত্যাগে সহায়তা ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন- এসব কারণে জামুকা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জামুকার সভায় জিয়াউর রহমানকে দেওয়া খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরীফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়।

জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় এই পদক বাতিলের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১২ বছরে জিয়াউর রহমানকে বিভিন্নভাবে খাটো করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার জিয়াউর রহমানকে ছোট করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবমাননা করছে। কিন্তু এসব ষড়যন্ত্র করে তারা মানুষের অন্তর থেকে জিয়াউর রহমানকে মুছতে পারবে না। খেতাব বাতিলের এ উদ্যোগের প্রতিবাদে কর্মসূচিও পালন করেছে বিএনপি। 

১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এমন এক কর্মসূচি থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়- জিয়ার খেতাব বাতিলের চিন্তা করলে সরকারের হাত পুড়ে ছারখার হবে। সেদিনের প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসেনর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান বলেন, সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, সেক্টর কমান্ডার, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বীরউত্তম, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমরা বলে দিচ্ছি সরকার যদি তার ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের চিন্তা করে তবে হাত জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা মনে করেন জিয়ার খেতাব বাতিলের এখতিয়ার জামুকার নেই। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সুপারিশের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ১৭ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধনও করেন তারা। ওই মানববন্ধনে সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব কারও দয়ার দান নয়, এটা তার অর্জন। মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ অবদান রেখেই তিনি এ খেতাব অর্জন করেছেন। যথার্থভাবেই বাংলাদেশ সরকার তাকে মূল্যায়িত করেছে। এ খেতাব বাতিলে জামুকার আইনগত কোনো এখতিয়ার নেই। এটি তাদের কার্যক্রমে নেই। জামুকার এমন হীন অপতৎপরতার নিন্দা জানাই।  

 

আরও পড়ুন: