০৯:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নারকীয় হামলার পর আসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:৫৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৭১ বার দেখা হয়েছে

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক বাহিনীর হামলার সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিব অনুধাবন করলেন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা। তাই মধ্য রাতের পর তিনি ইংরেজিতে স্বাধীনতার ঘোষণা তৈরি করে ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন।

ঘোষণাটি ছিল এমন- ‘This may be my last message, from today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with what ever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.’

সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

শেখ মুজিবর রহমানকে রাত দেড়টায় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বন্দি করে শেরেবাংলা নগরস্থ সামরিক বাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সেনানিবাসে নিয়ে সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়।

সকালে আদমজী কলেজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনানিবাসের ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে (বর্তমান সেনা প্রধানের বাসভবন) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে পিলখানায় ইপিআর-এর ওপরে যে হামলা শুরু করেছিল বাঙালি সৈন্যরা সেই প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যায় সারা রাত। এতে শত শত বাঙালি সৈন্য নিহত হয়। একজন পাকিস্তানি অফিসারসহ বহু পাকিস্তানি সৈন্যও নিহত হয়। যুদ্ধ এতটা প্রবল ছিল যে, ২৬ মার্চ অপরাহ্ণে ট্যাংক বাহিনীকে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাহায্যার্থে পিলখানায় আসতে হয়।

পিলখানা ৩ নম্বর গেটের কাছে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। ইপিআর সদস্যরা অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করেন। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে অসম যুদ্ধে টিকতে না পেরে তারা বুড়িগঙ্গা অতিক্রম করে জিঞ্জিরায় অবস্থান গ্রহণ করেন। ইপিআর সদস্যদের একটি অংশ বাস নিয়ে চলে যায় মিরপুরের দিকে।

২৫ তারিখ রাত ও ২৬ তারিখ ভোরের মধ্যবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হল, সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, সূর্যসেন হল, মহসীন হল, ফজলুল হক হল, রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে ড. জি সি দেব, ড. মুনিরুজ্জামান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ (আহত হয়ে পরে মারা যান) নয় জন শিক্ষককে ঘরে ঢুকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।

এদিন ভোর বেলা ৩৬ এলিফেন্ট রোডের বাসা থেকে আগরতলা মামলার ২ নম্বর অভিযুক্ত পাকিস্তানি নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি অফিসার লেফটেনেন্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। তার মরদেহ জিপে উঠিয়ে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। মোয়াজ্জেম হোসেনের মরদেহ আর পাওয়া যায়নি।

ভোরে পাক হানাদার বাহিনী দি পিপল, সংবাদ, ইত্তেফাক, বাংলার বাণী অফিসে ট্যাঙ্কের গোলাবর্ষণ করে। সকালে পাক হানাদার বাহিনী কয়েকবারের চেষ্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ট্যাঙ্কের গোলায় ধ্বংস করতে না পেরে সেদিন রাতে ডিনামাইট দিয়ে শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে।

২৬ মার্চ সকালে গুরুদুয়ারা নানক শাহী, শিব ও কালীমন্দিরে ঢুকে সেখানকার পুরোহিতদের গুলি করে হত্যা করা হয়। অবাঙালিদের সহযোগিতায় পাক সেনারা দুপুরে পুরান ঢাকা আক্রমণ করে এবং মধ্যরাত পর্যন্ত ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পুরান ঢাকায় নিহতদের মরদেহ বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয়।।বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে আটকে রাখা হয়।

এদিন সকালে পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সামরিক প্রহরায় ঢাকা ত্যাগ করেন। করাচি বিমান বন্দরে পৌঁছে তিনি ঢাকায় ২৫ মার্চের সেনাবাহিনীর অপারেশনের প্রশংসা করে বলেন, আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ। সেনাবাহিনী পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে।

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম বেতার থেকে মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

আগ্রাবাদ বেতার ভবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় কয়েকজন বেতারকর্মী চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার ট্রান্সমিশন কেন্দ্রের স্টুডিও ব্যবহার করে স্বাধীন বাংলার বেতার কার্যক্রম শুরু করেন, নাম দেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’। এখান থেকেই কিছুক্ষণ পরপর শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন অনেকেই। প্রচার করা হয় বিভিন্ন নির্দেশাবলী। মাত্র ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সমিটার থেকে ৫০ মাইলজুড়ে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার সেই বার্তা।

বঙ্গবন্ধু তার ঘোষণায় বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।’

‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নেই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত আটটায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান করাচি থেকে এক বেতার ভাষণে বলেন, ‌‘পূর্ব-পাকিস্তানে সরকারের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সেনাবাহিনীকে আদেশ দেয়া হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলন করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছেন। আমি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু আমি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতী বলেই ন্যায়সঙ্গত উপায়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান চেয়েছি। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের একগুঁয়েমি, অনড় মনোভাব থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, লোকটি ও তার দল পাকিস্তানের শত্রু। শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সংহতি ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হেনেছেন। এ অপরাধের জন্য তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’

সূত্রঃ জাগোনিউজ

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x
English Version

নারকীয় হামলার পর আসে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা

আপডেট: ০৬:৫৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মার্চ ২০২১

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক বাহিনীর হামলার সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিব অনুধাবন করলেন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা। তাই মধ্য রাতের পর তিনি ইংরেজিতে স্বাধীনতার ঘোষণা তৈরি করে ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন।

ঘোষণাটি ছিল এমন- ‘This may be my last message, from today Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with what ever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.’

সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহূর্তে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

শেখ মুজিবর রহমানকে রাত দেড়টায় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বন্দি করে শেরেবাংলা নগরস্থ সামরিক বাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সেনানিবাসে নিয়ে সকাল পর্যন্ত আদমজী কলেজের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়।

সকালে আদমজী কলেজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনানিবাসের ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে (বর্তমান সেনা প্রধানের বাসভবন) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে ২২তম বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা ২৫ মার্চ রাতে পিলখানায় ইপিআর-এর ওপরে যে হামলা শুরু করেছিল বাঙালি সৈন্যরা সেই প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যায় সারা রাত। এতে শত শত বাঙালি সৈন্য নিহত হয়। একজন পাকিস্তানি অফিসারসহ বহু পাকিস্তানি সৈন্যও নিহত হয়। যুদ্ধ এতটা প্রবল ছিল যে, ২৬ মার্চ অপরাহ্ণে ট্যাংক বাহিনীকে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাহায্যার্থে পিলখানায় আসতে হয়।

পিলখানা ৩ নম্বর গেটের কাছে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। ইপিআর সদস্যরা অসীম বীরত্ব প্রদর্শন করেন। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে অসম যুদ্ধে টিকতে না পেরে তারা বুড়িগঙ্গা অতিক্রম করে জিঞ্জিরায় অবস্থান গ্রহণ করেন। ইপিআর সদস্যদের একটি অংশ বাস নিয়ে চলে যায় মিরপুরের দিকে।

২৫ তারিখ রাত ও ২৬ তারিখ ভোরের মধ্যবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হল, সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, সূর্যসেন হল, মহসীন হল, ফজলুল হক হল, রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে ড. জি সি দেব, ড. মুনিরুজ্জামান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ (আহত হয়ে পরে মারা যান) নয় জন শিক্ষককে ঘরে ঢুকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।

এদিন ভোর বেলা ৩৬ এলিফেন্ট রোডের বাসা থেকে আগরতলা মামলার ২ নম্বর অভিযুক্ত পাকিস্তানি নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি অফিসার লেফটেনেন্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। তার মরদেহ জিপে উঠিয়ে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। মোয়াজ্জেম হোসেনের মরদেহ আর পাওয়া যায়নি।

ভোরে পাক হানাদার বাহিনী দি পিপল, সংবাদ, ইত্তেফাক, বাংলার বাণী অফিসে ট্যাঙ্কের গোলাবর্ষণ করে। সকালে পাক হানাদার বাহিনী কয়েকবারের চেষ্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ট্যাঙ্কের গোলায় ধ্বংস করতে না পেরে সেদিন রাতে ডিনামাইট দিয়ে শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে।

২৬ মার্চ সকালে গুরুদুয়ারা নানক শাহী, শিব ও কালীমন্দিরে ঢুকে সেখানকার পুরোহিতদের গুলি করে হত্যা করা হয়। অবাঙালিদের সহযোগিতায় পাক সেনারা দুপুরে পুরান ঢাকা আক্রমণ করে এবং মধ্যরাত পর্যন্ত ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পুরান ঢাকায় নিহতদের মরদেহ বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয়।।বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে আটকে রাখা হয়।

এদিন সকালে পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সামরিক প্রহরায় ঢাকা ত্যাগ করেন। করাচি বিমান বন্দরে পৌঁছে তিনি ঢাকায় ২৫ মার্চের সেনাবাহিনীর অপারেশনের প্রশংসা করে বলেন, আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ। সেনাবাহিনী পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে।

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম বেতার থেকে মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

আগ্রাবাদ বেতার ভবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় কয়েকজন বেতারকর্মী চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার ট্রান্সমিশন কেন্দ্রের স্টুডিও ব্যবহার করে স্বাধীন বাংলার বেতার কার্যক্রম শুরু করেন, নাম দেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’। এখান থেকেই কিছুক্ষণ পরপর শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন অনেকেই। প্রচার করা হয় বিভিন্ন নির্দেশাবলী। মাত্র ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সমিটার থেকে ৫০ মাইলজুড়ে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার সেই বার্তা।

বঙ্গবন্ধু তার ঘোষণায় বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।’

‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নেই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত আটটায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান করাচি থেকে এক বেতার ভাষণে বলেন, ‌‘পূর্ব-পাকিস্তানে সরকারের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সেনাবাহিনীকে আদেশ দেয়া হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলন করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছেন। আমি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু আমি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতী বলেই ন্যায়সঙ্গত উপায়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান চেয়েছি। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের একগুঁয়েমি, অনড় মনোভাব থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, লোকটি ও তার দল পাকিস্তানের শত্রু। শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সংহতি ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হেনেছেন। এ অপরাধের জন্য তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’

সূত্রঃ জাগোনিউজ