১২:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বছরে ৬০০০ কোটি টাকার কর হারাচ্ছে বাংলাদেশ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৪৭:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০২০
  • / ৪২৫৬ বার দেখা হয়েছে

করের স্বর্গ বলে পরিচিত দেশে মুনাফা এবং সম্পদ স্থানান্তর করে বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতারা। কর ফাঁকির এ পরিমাণ মোট কর রাজস্বের সাড়ে ৩ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ের ৬২ শতাংশ ও শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ১৪ শতাংশের সমপরিমাণ। এ পরিমাণ অর্থ চিকিৎসা ব্যবস্থায় থাকা প্রায় ৪ লাখ নার্সের বার্ষিক বেতনের সমান। ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) নামে কর ফাঁকি বিরোধী একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম শুক্রবার বিশ্বব্যাপী কর ন্যায্যতা নিয়ে ‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস-২০২০ : ট্যাক্স জাস্টিস ইন দ্য টাইম অব কভিড-১৯’ নামে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ প্রাক্কলন রয়েছে।

টিজেএন জানিয়েছে, দেশভিত্তিক প্রাক্কলনের সমন্বয়ে বিশ্বের কর ন্যায্যতার ওপর এটি তাদের প্রথম রিপোর্ট। ২০০৩ সালে এ নেটওয়ার্ক বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দেশভিত্তিক মুনাফা ও করের বিষয়ে ডাটা বা উপাত্ত প্রকাশের দাবি জানায়। প্রায় ২০ বছর এ বিষয়ে তাদের ব্যাপক প্রচারণার পর এ বছরের জুলাই মাসে ধনী দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি এ বিষয়ে ২০১৬ সালের উপাত্ত প্রকাশ করে। যদিও এসব উপাত্ত সামগ্রিকভাবে এবং বেনামে। কোম্পানিগুলোর আলাদা কোনো ডাটা এখানে নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর সারাবিশ্বে এভাবে কর ফাঁকির ৪২৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ যেসব দেশে করহার শূন্য বা খুবই কম (করের স্বর্গে) সেসব দেশে চলে যায়। এই পরিমাণ অর্থ প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ নার্সের সারা বছরের বেতনের সমান। প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ কর ফাঁকি হয়, তা একজন নার্সের এক বছরের বেতনের সমান। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এক বছরে ১ দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের মুনাফা তাদের মূল কোম্পানির পরিবর্তে শূন্য অথবা কম করের দেশে স্থানান্তর করে ২৪৫ বিলিয়ন ডলার কর ফাঁকি দিয়েছে। ব্যক্তি করদাতারা কর এড়াতে বা অনেক কম দিতে তাদের ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ এসব দেশে সংরক্ষণ করেছেন, যার মাধ্যমে তারা নিজ দেশে ১৮২ বিলিয়ন ডলারের কর এড়াতে পেরেছেন।

বাংলাদেশের ওপর টিজেএনের প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্যক্তি করদাতাদের মাধ্যমে বছরে ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৫ ডলার কর ফাঁকির মাধ্যমে মুনাফা ও সম্পদ স্থানান্তর হয়েছে বিভিন্ন করের স্বর্গে। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরলে এর পরিমাণ ৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানির অংশ ৫ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা এবং ব্যক্তির অংশ ২৫০ কোটি টাকা। কর ফাঁকির পরিমাণ বাংলাদেশের মোট কর আয় ২ হাজার কোটি ডলারের সাড়ে ৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মোট কর আয়ের সঙ্গে মেলে, যার পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা।

টিজেএনের প্রতিবেদন সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (আয়কর নীতি) আলমগীর হোসেন সমকালকে বলেন, কোন তথ্যের ভিত্তিতে এ ধরনের কর ফাঁকির প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা পরিস্কার নয়। এ প্রাক্কলনের পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করা যাবে না। তবে বহুজাতিক কোম্পানির কর ফাঁকি প্রতিরোধে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন করা হয়েছে এবং এনবিআরের এ বিষয়ে একটি সেল কাজ করছে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) আমিনুর রহমান মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন করের স্বর্গে মুনাফা এবং সম্পদ স্থানান্তর হতে পারে। সমকালকে তিনি বলেন, শুধু ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন করে এ প্রবণতা ঠেকানো যাবে না। ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। কর ফাঁকি দিয়ে দেশে থাকলে যে ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বিদেশে পাচার করলে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বিভিন্ন দেশে থাকা অত্যন্ত কম কর বা কর না থাকার সুবিধা কোম্পানিগুলো নিচ্ছে। অনেক দেশ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে নাগরিকত্ব দিচ্ছে। ফলে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে উদীয়মান দেশগুলো কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান জাতীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো কোনো বহুপক্ষীয় সংস্থা গঠনের মাধ্যমে এর সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে করের স্বর্গ বিবেচনায় ১৫টি দেশের নাম আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে। এসব দেশে অন্য দেশ থেকে কর ফাঁকির অর্থ বেশি চলে যাচ্ছে। দেশগুলো হলো- কেইম্যান আইল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, চীন, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, বারমুডা, সুইজারল্যান্ড, পুয়েরতোরিকো এবং জার্সেই। প্রতিবেদনে ১৩৩ দেশের ওপর আর্থিক গোপনীয়তা সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। এই সূচকে এক নম্বর অবস্থানে কেইম্যান আইল্যান্ডস। বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪তম। কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন দেশ থেকেও বাংলাদেশে অর্থ এসেছে। অন্য দেশ বাংলাদেশের কারণে বছরে কর হারাচ্ছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ডলার বা প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

এর আগে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে অর্থ পাচারের তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে প্রকাশ করে। আইসিআইজে ২০১৩ সালে অফশোর কোম্পানির উদ্যোক্তা এমন ৩২ জন বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করে। ২০১৬ সালে আইসিআইজের পানামা পেপারসের ডাটাবেজে ৫৬ জন বাংলাদেশির নাম রয়েছে। ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপারসে ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। ২০১৮ একই পেপারসের সংযোজনীতে ২২ বাংলাদেশির নাম পাওয়া যায়। অন্যদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রাক্কলন অনুযায়ী কর ফাঁকি দিতে, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করতে, কোম্পানির মুনাফা লুকাতে এবং অন্যান্য কারণে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে অনেক সময় পণ্যের প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে বছরে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়।

শেয়ার করুন

x
English Version

বছরে ৬০০০ কোটি টাকার কর হারাচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট: ১১:৪৭:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ নভেম্বর ২০২০

করের স্বর্গ বলে পরিচিত দেশে মুনাফা এবং সম্পদ স্থানান্তর করে বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিচ্ছে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতারা। কর ফাঁকির এ পরিমাণ মোট কর রাজস্বের সাড়ে ৩ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ের ৬২ শতাংশ ও শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ১৪ শতাংশের সমপরিমাণ। এ পরিমাণ অর্থ চিকিৎসা ব্যবস্থায় থাকা প্রায় ৪ লাখ নার্সের বার্ষিক বেতনের সমান। ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক (টিজেএন) নামে কর ফাঁকি বিরোধী একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম শুক্রবার বিশ্বব্যাপী কর ন্যায্যতা নিয়ে ‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস-২০২০ : ট্যাক্স জাস্টিস ইন দ্য টাইম অব কভিড-১৯’ নামে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ প্রাক্কলন রয়েছে।

টিজেএন জানিয়েছে, দেশভিত্তিক প্রাক্কলনের সমন্বয়ে বিশ্বের কর ন্যায্যতার ওপর এটি তাদের প্রথম রিপোর্ট। ২০০৩ সালে এ নেটওয়ার্ক বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দেশভিত্তিক মুনাফা ও করের বিষয়ে ডাটা বা উপাত্ত প্রকাশের দাবি জানায়। প্রায় ২০ বছর এ বিষয়ে তাদের ব্যাপক প্রচারণার পর এ বছরের জুলাই মাসে ধনী দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি এ বিষয়ে ২০১৬ সালের উপাত্ত প্রকাশ করে। যদিও এসব উপাত্ত সামগ্রিকভাবে এবং বেনামে। কোম্পানিগুলোর আলাদা কোনো ডাটা এখানে নেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর সারাবিশ্বে এভাবে কর ফাঁকির ৪২৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ যেসব দেশে করহার শূন্য বা খুবই কম (করের স্বর্গে) সেসব দেশে চলে যায়। এই পরিমাণ অর্থ প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ নার্সের সারা বছরের বেতনের সমান। প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ কর ফাঁকি হয়, তা একজন নার্সের এক বছরের বেতনের সমান। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এক বছরে ১ দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের মুনাফা তাদের মূল কোম্পানির পরিবর্তে শূন্য অথবা কম করের দেশে স্থানান্তর করে ২৪৫ বিলিয়ন ডলার কর ফাঁকি দিয়েছে। ব্যক্তি করদাতারা কর এড়াতে বা অনেক কম দিতে তাদের ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ এসব দেশে সংরক্ষণ করেছেন, যার মাধ্যমে তারা নিজ দেশে ১৮২ বিলিয়ন ডলারের কর এড়াতে পেরেছেন।

বাংলাদেশের ওপর টিজেএনের প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানি ও ব্যক্তি করদাতাদের মাধ্যমে বছরে ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৫ ডলার কর ফাঁকির মাধ্যমে মুনাফা ও সম্পদ স্থানান্তর হয়েছে বিভিন্ন করের স্বর্গে। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরলে এর পরিমাণ ৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানির অংশ ৫ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা এবং ব্যক্তির অংশ ২৫০ কোটি টাকা। কর ফাঁকির পরিমাণ বাংলাদেশের মোট কর আয় ২ হাজার কোটি ডলারের সাড়ে ৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মোট কর আয়ের সঙ্গে মেলে, যার পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা।

টিজেএনের প্রতিবেদন সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (আয়কর নীতি) আলমগীর হোসেন সমকালকে বলেন, কোন তথ্যের ভিত্তিতে এ ধরনের কর ফাঁকির প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা পরিস্কার নয়। এ প্রাক্কলনের পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করা যাবে না। তবে বহুজাতিক কোম্পানির কর ফাঁকি প্রতিরোধে ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন করা হয়েছে এবং এনবিআরের এ বিষয়ে একটি সেল কাজ করছে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) আমিনুর রহমান মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন করের স্বর্গে মুনাফা এবং সম্পদ স্থানান্তর হতে পারে। সমকালকে তিনি বলেন, শুধু ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন করে এ প্রবণতা ঠেকানো যাবে না। ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। কর ফাঁকি দিয়ে দেশে থাকলে যে ক্ষতি হয়, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বিদেশে পাচার করলে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, বিভিন্ন দেশে থাকা অত্যন্ত কম কর বা কর না থাকার সুবিধা কোম্পানিগুলো নিচ্ছে। অনেক দেশ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে নাগরিকত্ব দিচ্ছে। ফলে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে উদীয়মান দেশগুলো কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান জাতীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো কোনো বহুপক্ষীয় সংস্থা গঠনের মাধ্যমে এর সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে করের স্বর্গ বিবেচনায় ১৫টি দেশের নাম আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে। এসব দেশে অন্য দেশ থেকে কর ফাঁকির অর্থ বেশি চলে যাচ্ছে। দেশগুলো হলো- কেইম্যান আইল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, চীন, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, বারমুডা, সুইজারল্যান্ড, পুয়েরতোরিকো এবং জার্সেই। প্রতিবেদনে ১৩৩ দেশের ওপর আর্থিক গোপনীয়তা সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। এই সূচকে এক নম্বর অবস্থানে কেইম্যান আইল্যান্ডস। বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪তম। কর ফাঁকি দিতে বিভিন্ন দেশ থেকেও বাংলাদেশে অর্থ এসেছে। অন্য দেশ বাংলাদেশের কারণে বছরে কর হারাচ্ছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ডলার বা প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

এর আগে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে অর্থ পাচারের তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে প্রকাশ করে। আইসিআইজে ২০১৩ সালে অফশোর কোম্পানির উদ্যোক্তা এমন ৩২ জন বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করে। ২০১৬ সালে আইসিআইজের পানামা পেপারসের ডাটাবেজে ৫৬ জন বাংলাদেশির নাম রয়েছে। ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপারসে ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। ২০১৮ একই পেপারসের সংযোজনীতে ২২ বাংলাদেশির নাম পাওয়া যায়। অন্যদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রাক্কলন অনুযায়ী কর ফাঁকি দিতে, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করতে, কোম্পানির মুনাফা লুকাতে এবং অন্যান্য কারণে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে অনেক সময় পণ্যের প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে বছরে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়।