১০:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্ড ছাড়তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ লাগবে ন্যূণতম ২০০ কোটি টাকা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৫২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৫৪০২ বার দেখা হয়েছে

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে ও পণ্য বৈচিত্র্য আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের বন্ড অনুমোদনের ক্ষেত্রে দুটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে বিএসইসি। যেসব ব্যাংকের বন্ড অনুমোদন পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে পাবে, তাদের এ দুটি শর্ত পালন করতে হবে। সংবাদ সূত্রঃ প্রথম আলো

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে যেসব ব্যাংকের বন্ড অনুমোদন করা হচ্ছে, সেসব বন্ডকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার শর্ত দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতার শর্তও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর প্রতিটিকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন বিএসইসি বলছে, নতুন করে বন্ডের অনুমোদন পেতে হলে শেয়ারবাজারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।

গত ডিসেম্বর থেকে যেসব ব্যাংকের বন্ড অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেসব ব্যাংককে এ দুই শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিএসইসি বলছে, এখন থেকে যেসব ব্যাংক মূলধন সংগ্রহের জন্য বিএসইসির কাছে আসবে, তাদেরই এ দুই শর্ত পরিপালন করতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে পতন ঠেকাতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর জন্য সেটি ছিল ঐচ্ছিক। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক এ সুযোগ কাজে লাগায়নি।

এখন ব্যাংকগুলো যখন তাদের মূলধন বাড়াতে বন্ড ইস্যুর অনুমোদনের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করছে, তখন বিএসইসি এ দুটি শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। ফলে বন্ডের অনুমোদন পেতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বিশেষ তহবিলের আওতায় শেয়ারবাজারে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতেই হবে। ব্যাংকগুলো ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের শর্ত পরিপালন করা ছাড়া অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে না। অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুর আগে ব্যাংকগুলোকে এ শর্ত পূরণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘ব্যাংকের বন্ড অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ তহবিলের আওতায় ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপালনের শর্ত দিয়েছি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিকল্প লেনদেন বা অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু হলে সেখানে তালিকাভুক্তির শর্ত দিয়েছি। বন্ডের অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো যত দিন শেয়ারবাজারে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের শর্ত পূরণ না করবে, তত দিন বন্ডের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে না।’

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিএসইসি চারটি ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে ৬০০ কোটি টাকা করে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা করে ৮০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটিকে ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারের নির্ধারিত বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখা হয়। এমনকি ২০০ কোটি টাকার তহবিলকে ব্যাংকের মূল আর্থিক বিবরণী, বাজারভিত্তিক পুনর্মূল্যায়ন ও নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাইরে রাখা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের একাধিক ধারা শিথিল করে শেয়ারবাজারের জন্য এ সুবিধা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত একাধিক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ব্যাংকগুলো নানা উপায়ে এ তহবিল গঠন করতে পারবে। প্রথমত নিজস্ব অর্থে এ তহবিল গঠন করা যাবে। এ ছাড়া ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা নবায়ন করা যাবে। ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের অর্থ শেয়ারবাজারের কোন কোন খাতে কী পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছিল, তহবিলে অর্থ ব্যবহারের জন্য আলাদা বিও হিসাব খুলতে হবে। ওই হিসাবের বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য এবং তহবিলের ব্যবহার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে তদারক করবে। তহবিলটি একটি ঘূর্ণমান তহবিল। ব্যাংক নিজে বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব তহবিল ব্যবহার করতে পারবে।

তহবিলের অর্থের ৪০ শতাংশ ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে, সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য ২০ শতাংশ, অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ শতাংশ এবং বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসকে ঋণের জন্য ব্যবহার করা যাবে। শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ডে এ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এ তহবিলের অর্থ দিয়ে নিজ ব্যাংকের শেয়ার কেনা যাবে না।

শেয়ার করুন

x
English Version

বন্ড ছাড়তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ লাগবে ন্যূণতম ২০০ কোটি টাকা

আপডেট: ১০:৫২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী ২০২১

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে ও পণ্য বৈচিত্র্য আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের বন্ড অনুমোদনের ক্ষেত্রে দুটি শর্ত বেঁধে দিয়েছে বিএসইসি। যেসব ব্যাংকের বন্ড অনুমোদন পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে পাবে, তাদের এ দুটি শর্ত পালন করতে হবে। সংবাদ সূত্রঃ প্রথম আলো

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে যেসব ব্যাংকের বন্ড অনুমোদন করা হচ্ছে, সেসব বন্ডকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার শর্ত দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতার শর্তও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর প্রতিটিকে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন বিএসইসি বলছে, নতুন করে বন্ডের অনুমোদন পেতে হলে শেয়ারবাজারে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।

গত ডিসেম্বর থেকে যেসব ব্যাংকের বন্ড অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেসব ব্যাংককে এ দুই শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিএসইসি বলছে, এখন থেকে যেসব ব্যাংক মূলধন সংগ্রহের জন্য বিএসইসির কাছে আসবে, তাদেরই এ দুই শর্ত পরিপালন করতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে পতন ঠেকাতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর জন্য সেটি ছিল ঐচ্ছিক। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক এ সুযোগ কাজে লাগায়নি।

এখন ব্যাংকগুলো যখন তাদের মূলধন বাড়াতে বন্ড ইস্যুর অনুমোদনের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করছে, তখন বিএসইসি এ দুটি শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। ফলে বন্ডের অনুমোদন পেতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বিশেষ তহবিলের আওতায় শেয়ারবাজারে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতেই হবে। ব্যাংকগুলো ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের শর্ত পরিপালন করা ছাড়া অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে না। অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরুর আগে ব্যাংকগুলোকে এ শর্ত পূরণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘ব্যাংকের বন্ড অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ তহবিলের আওতায় ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপালনের শর্ত দিয়েছি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিকল্প লেনদেন বা অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু হলে সেখানে তালিকাভুক্তির শর্ত দিয়েছি। বন্ডের অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো যত দিন শেয়ারবাজারে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের শর্ত পূরণ না করবে, তত দিন বন্ডের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে না।’

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিএসইসি চারটি ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে ৬০০ কোটি টাকা করে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা করে ৮০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটিকে ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারের নির্ধারিত বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখা হয়। এমনকি ২০০ কোটি টাকার তহবিলকে ব্যাংকের মূল আর্থিক বিবরণী, বাজারভিত্তিক পুনর্মূল্যায়ন ও নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাইরে রাখা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের একাধিক ধারা শিথিল করে শেয়ারবাজারের জন্য এ সুবিধা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত একাধিক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ব্যাংকগুলো নানা উপায়ে এ তহবিল গঠন করতে পারবে। প্রথমত নিজস্ব অর্থে এ তহবিল গঠন করা যাবে। এ ছাড়া ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা নবায়ন করা যাবে। ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের অর্থ শেয়ারবাজারের কোন কোন খাতে কী পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছিল, তহবিলে অর্থ ব্যবহারের জন্য আলাদা বিও হিসাব খুলতে হবে। ওই হিসাবের বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য এবং তহবিলের ব্যবহার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে তদারক করবে। তহবিলটি একটি ঘূর্ণমান তহবিল। ব্যাংক নিজে বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব তহবিল ব্যবহার করতে পারবে।

তহবিলের অর্থের ৪০ শতাংশ ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে, সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নতুন পোর্টফোলিও গঠনের জন্য ২০ শতাংশ, অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ শতাংশ এবং বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসকে ঋণের জন্য ব্যবহার করা যাবে। শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ডে এ তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এ তহবিলের অর্থ দিয়ে নিজ ব্যাংকের শেয়ার কেনা যাবে না।