০২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ ব্যাংক খাত

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:৪০:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মে ২০১৮
  • / ৪৩৭৫ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পূর্ববর্তী দেশের ব্যাংকিং ব্যাপক মুনাফায় থাকলেও বিগত বছরগুলোতে এ খাতের মুনাফায় ক্রমশ কমে আসছে। বিনিয়োগকারীদের ভরসার অন্যতম খাত হিসাবে পরিচিত এ ব্যাংকিং নানা কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে নির্ভরযোগ্য এ খাত থেকে আশানুরুপ মুনাফা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া যারা পূর্বে এ খাতের শেয়ার অতিরিক্ত দরে কিনেছিলেন তারা বড় অংকের লোকসানে রয়েছেন। মুলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরশীলতা, পুঁজিবাজারে মুনাফা কমে যাওয়া, উচ্চ সুদে অর্থ সংগ্রহ, খেলাপী ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, মূলধন ঘাটতি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে নতুন উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে অনাগ্রহ ও বিভিন্ন শিল্পে মন্দাবস্থা এর অন্যতম কারন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তাদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের ব্যাংকিং খাতে বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করার ফলে শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিতে সাহস পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণও খেলাপি ঋণে পরিণত হচ্ছে।
জানা গেছে, আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালের ব্যবসায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫৩ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) কমেছে। কোন ব্যাংকের এ মুনাফা ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ব্যাংকের এমন পতনকে পুঁজিবাজারের জন্য দুঃসংবাদ বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকগুলোর ২০১৭ সালের সমন্বিত হিসাব বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তাদের মতে, গত বছর ঋণ কেলেঙ্কারীতে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যা বাজারের জন্য দুঃসংবাদ। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও কঠোরভাবে ঋণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে ১৬টি বা ৫৩ শতাংশ ব্যাংকের ইপিএস কমেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ইপিএস কমেছে এবি ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৯৮ শতাংশ ইপিএস কমেছে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ কমেছে সাউথইস্ট ব্যাংকের। আর ৪৯ শতাংশ লোকসান বেড়ে ৩য় স্থানে রয়েছে আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক।
এদিকে সবচেয়ে বেশি ইপিএস হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। আগের বছরের থেকে ৩৯ শতাংশ বেড়ে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ১২.২৮ টাকা। এরপরে ব্র্যাক ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ৬.০৭ টাকা, সিটি ব্যাংকের ৩.৯০ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৩.৮৯ টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩.৮৯ টাকা, উত্তরা ব্যাংকের ৩.৮৩ টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ৩.৬০ টাকা, যমুনা ব্যাংকের ৩.৩৮ টাকা, আল-আরাফাহ ব্যাংকের ৩.১৫ টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩.১৪ টাকা ও ইসলামী ব্যাংকের ৩.০৬ টাকা হয়েছে। ২০১৭ সালে এই ১১টি ব্যাংকের ইপিএস ৩ টাকার বেশি হয়েছে।
২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি হারে ইপিএস বেড়েছে রূপালি ব্যাংকের। আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ১৪৫ শতাংশ। এরপরে ৩৯ শতাংশ বেড়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। আর ২৯ শতাংশ বেড়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
২০১৭ সালের ব্যবসায় সবচেয়ে কম ইপিএস হয়েছে এবি ব্যাংকের। ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ০.০৫ টাকা। এরপরে প্রাইম ব্যাংকের ১.১৮ টাকা ও সাউথইস্ট ব্যাংকের ১.২৭ টাকা টাকা ইপিএস হয়েছে। গত বছরে শুধুমাত্র এই ব্যাংকগুলোর ইপিএস ১.৫০ টাকার নিচে হয়েছে।
এদিকে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকখাতের কোম্পানিগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানের তুলনায় স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করছেন বেশি। অনেক ব্যাংক আবার ডিভিডেন্ডও কমিয়ে দিয়েছে। ২০১৭ সাল শেষে দেখা গেছে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ১৪টি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে। এর বিপরীতে ৯ ব্যাংক ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে। আর ৫টি ব্যাংক ক্যাশ ও স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে। ২টি ব্যাংক ডিভিডেন্ড প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।
কারণ হিসেবে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাসেল-৩ এর শর্তপূরণ, অ্যান্ডভান্সড ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ইস্যু, পর্যাপ্ত প্রভিশনিং, এনপিএল কাভারেজ, তারল্য সংকট এবং নির্বাচনী বছরের কারণে ডিপোজিট শক্তিশালীকরণের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। তাছাড়া ২০১৭ সালে নিট আয়ও কমেছে অনেক ব্যাংকের। এর কারণে ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড সুপারিশের সিদ্ধান্ত ছিল অধিকাংশ ব্যাংকের।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবসা বাড়ছে। সাধারণত কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য। আমাদের আরও নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আসছে। যেগুলো ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী করবে। মূলধন শক্তিশালী করার পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট স্টক ডিভিডেন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাত বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। যেখানে ব্যাংকের ডিপোজিট শক্তিশালীকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ই আব্দুল মুহাইমেন বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ডিভিডেন্ড কমানোর কারণ হিসাবে বলেছিলেন, আমরা বেশকিছু কারণে ডিভিডেন্ড কমিয়েছি। এই জন্যে শেয়ারহোল্ডারদের সাময়িক কষ্ট হবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই কষ্ট থাকবে না। এটা আমাদের টেকসই ব্যাংকিংয়ের জন্য করতেই হচ্ছে।
পাশাপাশি ব্যাসেল-৩, পর্যাপ্ত প্রভিশনিং, এনপিএল কাভারেজ, কস্টিংসহ বেশকিছু শক্ত পরিকল্পনা নেওয়ার কারণে ম্যানেজমেন্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। সেই হিসাবে ২০১৫ সালে তাদের ঝুঁকিকৃত সম্পদের ১০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১০.৬২৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১১.২৬ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১১.৮৭৫ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে এই সংরক্ষণের পরিমাণ হবে ১২.৫০ শতাংশ।
অন্যদিকে, তালিকাভুক্ত ১৫ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৭ সালের সমাপ্ত বছরে স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, রূপালি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক।
স্টক ডিভিডেন্ড প্রকৃতপক্ষে কোন ডিভিডেন্ড না বলে সারা বিশ্বব্যাপি সমাদৃত। কারন এক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের কোন ধরনের সম্পদ প্রদান করতে হয় না। শুধুমাত্র শেয়ারহোল্ডারদের বিও হিসাবে শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেই হয়। যে কারনে ক্যাশ ডিভিডেন্ডকে উৎসাহিত করা হয়। এছাড়া ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানের উপর একটি কোম্পানির সক্ষমতা বোঝা যায়।
দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি দেওয়ান নুরুল ইসলাম বলেন, প্রকৃতপক্ষে স্টক ডিভিডেন্ডে শেয়ারহোল্ডারদের কোন বেনিফিট নেই এবং এটি কোন ডিভিডেন্ড না। যে কারনে বিনিয়োগকারীরা সাধারনত ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রত্যাশা করে। তবে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কারনে স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারে। এছাড়া মূলধন বাড়ানোও উদ্দেশ্য হতে পারে।
এদিকে স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর ২০১৭ সালের মুনাফার একাংশ দিয়ে পরিশোধিত মূলধন ও বাকি অংশ দিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হবে। তবে রূপালি ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ মুনাফার থেকে বেশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায়, ব্যাংক ২টির রিজার্ভ কমবে।

অর্থকথা/এইচজেড

শেয়ার করুন

x
English Version

বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ ব্যাংক খাত

আপডেট: ০৩:৪০:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মে ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পূর্ববর্তী দেশের ব্যাংকিং ব্যাপক মুনাফায় থাকলেও বিগত বছরগুলোতে এ খাতের মুনাফায় ক্রমশ কমে আসছে। বিনিয়োগকারীদের ভরসার অন্যতম খাত হিসাবে পরিচিত এ ব্যাংকিং নানা কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে নির্ভরযোগ্য এ খাত থেকে আশানুরুপ মুনাফা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া যারা পূর্বে এ খাতের শেয়ার অতিরিক্ত দরে কিনেছিলেন তারা বড় অংকের লোকসানে রয়েছেন। মুলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরশীলতা, পুঁজিবাজারে মুনাফা কমে যাওয়া, উচ্চ সুদে অর্থ সংগ্রহ, খেলাপী ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, মূলধন ঘাটতি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে নতুন উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে অনাগ্রহ ও বিভিন্ন শিল্পে মন্দাবস্থা এর অন্যতম কারন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তাদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের ব্যাংকিং খাতে বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করার ফলে শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিতে সাহস পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণও খেলাপি ঋণে পরিণত হচ্ছে।
জানা গেছে, আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালের ব্যবসায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫৩ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) কমেছে। কোন ব্যাংকের এ মুনাফা ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ব্যাংকের এমন পতনকে পুঁজিবাজারের জন্য দুঃসংবাদ বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকগুলোর ২০১৭ সালের সমন্বিত হিসাব বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
তাদের মতে, গত বছর ঋণ কেলেঙ্কারীতে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যা বাজারের জন্য দুঃসংবাদ। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও কঠোরভাবে ঋণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে ১৬টি বা ৫৩ শতাংশ ব্যাংকের ইপিএস কমেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ইপিএস কমেছে এবি ব্যাংকের। ব্যাংকটির ৯৮ শতাংশ ইপিএস কমেছে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ কমেছে সাউথইস্ট ব্যাংকের। আর ৪৯ শতাংশ লোকসান বেড়ে ৩য় স্থানে রয়েছে আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক।
এদিকে সবচেয়ে বেশি ইপিএস হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। আগের বছরের থেকে ৩৯ শতাংশ বেড়ে ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ১২.২৮ টাকা। এরপরে ব্র্যাক ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ৬.০৭ টাকা, সিটি ব্যাংকের ৩.৯০ টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৩.৮৯ টাকা, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩.৮৯ টাকা, উত্তরা ব্যাংকের ৩.৮৩ টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ৩.৬০ টাকা, যমুনা ব্যাংকের ৩.৩৮ টাকা, আল-আরাফাহ ব্যাংকের ৩.১৫ টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩.১৪ টাকা ও ইসলামী ব্যাংকের ৩.০৬ টাকা হয়েছে। ২০১৭ সালে এই ১১টি ব্যাংকের ইপিএস ৩ টাকার বেশি হয়েছে।
২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি হারে ইপিএস বেড়েছে রূপালি ব্যাংকের। আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকটির ইপিএস বেড়েছে ১৪৫ শতাংশ। এরপরে ৩৯ শতাংশ বেড়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। আর ২৯ শতাংশ বেড়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
২০১৭ সালের ব্যবসায় সবচেয়ে কম ইপিএস হয়েছে এবি ব্যাংকের। ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে ০.০৫ টাকা। এরপরে প্রাইম ব্যাংকের ১.১৮ টাকা ও সাউথইস্ট ব্যাংকের ১.২৭ টাকা টাকা ইপিএস হয়েছে। গত বছরে শুধুমাত্র এই ব্যাংকগুলোর ইপিএস ১.৫০ টাকার নিচে হয়েছে।
এদিকে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকখাতের কোম্পানিগুলো ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানের তুলনায় স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করছেন বেশি। অনেক ব্যাংক আবার ডিভিডেন্ডও কমিয়ে দিয়েছে। ২০১৭ সাল শেষে দেখা গেছে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ১৪টি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে। এর বিপরীতে ৯ ব্যাংক ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে। আর ৫টি ব্যাংক ক্যাশ ও স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে। ২টি ব্যাংক ডিভিডেন্ড প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।
কারণ হিসেবে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাসেল-৩ এর শর্তপূরণ, অ্যান্ডভান্সড ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ইস্যু, পর্যাপ্ত প্রভিশনিং, এনপিএল কাভারেজ, তারল্য সংকট এবং নির্বাচনী বছরের কারণে ডিপোজিট শক্তিশালীকরণের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। তাছাড়া ২০১৭ সালে নিট আয়ও কমেছে অনেক ব্যাংকের। এর কারণে ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড সুপারিশের সিদ্ধান্ত ছিল অধিকাংশ ব্যাংকের।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবসা বাড়ছে। সাধারণত কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য। আমাদের আরও নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আসছে। যেগুলো ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবসাকে আরও শক্তিশালী করবে। মূলধন শক্তিশালী করার পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট স্টক ডিভিডেন্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাত বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। যেখানে ব্যাংকের ডিপোজিট শক্তিশালীকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ই আব্দুল মুহাইমেন বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ডিভিডেন্ড কমানোর কারণ হিসাবে বলেছিলেন, আমরা বেশকিছু কারণে ডিভিডেন্ড কমিয়েছি। এই জন্যে শেয়ারহোল্ডারদের সাময়িক কষ্ট হবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এই কষ্ট থাকবে না। এটা আমাদের টেকসই ব্যাংকিংয়ের জন্য করতেই হচ্ছে।
পাশাপাশি ব্যাসেল-৩, পর্যাপ্ত প্রভিশনিং, এনপিএল কাভারেজ, কস্টিংসহ বেশকিছু শক্ত পরিকল্পনা নেওয়ার কারণে ম্যানেজমেন্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। সেই হিসাবে ২০১৫ সালে তাদের ঝুঁকিকৃত সম্পদের ১০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১০.৬২৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১১.২৬ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১১.৮৭৫ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে এই সংরক্ষণের পরিমাণ হবে ১২.৫০ শতাংশ।
অন্যদিকে, তালিকাভুক্ত ১৫ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৭ সালের সমাপ্ত বছরে স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, রূপালি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক।
স্টক ডিভিডেন্ড প্রকৃতপক্ষে কোন ডিভিডেন্ড না বলে সারা বিশ্বব্যাপি সমাদৃত। কারন এক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের কোন ধরনের সম্পদ প্রদান করতে হয় না। শুধুমাত্র শেয়ারহোল্ডারদের বিও হিসাবে শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেই হয়। যে কারনে ক্যাশ ডিভিডেন্ডকে উৎসাহিত করা হয়। এছাড়া ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানের উপর একটি কোম্পানির সক্ষমতা বোঝা যায়।
দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি দেওয়ান নুরুল ইসলাম বলেন, প্রকৃতপক্ষে স্টক ডিভিডেন্ডে শেয়ারহোল্ডারদের কোন বেনিফিট নেই এবং এটি কোন ডিভিডেন্ড না। যে কারনে বিনিয়োগকারীরা সাধারনত ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রত্যাশা করে। তবে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কারনে স্টক ডিভিডেন্ড দিতে পারে। এছাড়া মূলধন বাড়ানোও উদ্দেশ্য হতে পারে।
এদিকে স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর ২০১৭ সালের মুনাফার একাংশ দিয়ে পরিশোধিত মূলধন ও বাকি অংশ দিয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হবে। তবে রূপালি ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ মুনাফার থেকে বেশি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায়, ব্যাংক ২টির রিজার্ভ কমবে।

অর্থকথা/এইচজেড