০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ব্যর্থ ব্যবসায়ী থেকে বড় পর্দার হিরো ইরফান খান

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:০৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০
  • / ৪৩৫৮ বার দেখা হয়েছে

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খান (৫৪) মারা গেছেন।

বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালে তিনি মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধিরুবাই আম্বানি হাসপাতালে মারা যান তিনি। সেখানেই কোলন ইনফেকশন সমস্যা নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ইরফান।

ব্রেনে টিউমার নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে লড়াই করছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে ‘আংরেজি মিডিয়াম’ ছবির মধ্যে দিয়ে ফিরেও এসেছিলেন এই শক্তিমান অভিনেতা। কিন্তু আবারও অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ইনফেকশন নিয়ে। তবে এবার আর ফেরা হল না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের জয়পুরে একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইরফান খান। ইরফানের মা, বেগম তন্ক হাকিম পরিবার থেকে এসেছিলেন এবং এবং তার মরহুম পিতা জাগিরদার তন্ম জেলার বাসিন্দা ছিলেন সেখানে পাগড়ির ব্যবসা করতেন। তিনি ১৯৮৪ সালে নয়া দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে স্কলারশিপের অর্জন করেন, যদিও তিনি তখন এমএ ডিগ্রীর জন্য অধ্যয়নরত ছিলেন।

বড় হয়ে ইরফান খান প্রথমে ক্রিকেটার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তার পর ছোটখাট ব্যবসার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। এরপর এম.এ কোর্সে ভর্তি হন। এম.এ কোর্সে পড়াশোনা চলাকালীন সময়েই ১৯৮৪তে ইরফানের কাছে আসে এক সুবর্ণ সুযোগ। তিনি নিউ দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপসহ সুযোগ পেয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ড্রামাটিক আর্টসে ডিপ্লোমা করেন।

ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে পাশ করার পর ইরফান খান মুম্বাইয়ে চলে এলেন। সেখানে  তিনি টেলিভিশন সিরিয়াল দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করলেন, যদিও প্রথমদিকে তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

মুম্বাইয়ে আসার পর তিনি একে একে অভিনয় করলেন চাণৌক্য, ভারাত এক খোঁজ, সারা জাহা হামারা, বানেগী আপনে বাত, চন্দ্রকান্ত, শ্রীকান্ত, আনুগুঞ্জ, স্টার বেস্টসেলারস ও স্পার্স নামক টিভি সিরিয়ালে। স্টারপ্লাসের ‘ডার’ নামক এক সিরিজের প্রধান ভিলেন ছিলেন ইরফান। এতে তিনি কে কে মেননের বিপরীতে এক সাইকো সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

১৯৮৮ সালে এসে তাঁর ক্যারিয়ার নতুন দিকে মোড় নেয়া শুরু করে। ডিরেক্টর মিরা নায়ের তাঁকে তাঁর সিনেমা সালাম বোম্বেতে একটি অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল তার চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত ফিল্মের এডিটিংয়ে বাদ চলে যায়। সালাম বোম্বে সিনেমাটি পরে ইন্ডিয়া থেকে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। সিনেমাটি ইন্ডিয়ার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতেছিল। তবে সিনেমার এডিটিংয়ে তাঁর চরিত্র বাদ পড়লেও থেমে থাকেননি ইরফান খান। ঠিকই পরে মন জয় করে নিয়েছিলেন বলিউডের।

অসুস্থ হওয়ার পর এক টুইটে ইরফান লেখেন, ‘জীবনে জয়ী হওয়ার সাধনায় মাঝে মধ্যে ভালবাসার গুরুত্ব ভুলে যাই আমরা। তবে দুর্বল সময় আমাদের তা মনে করিয়ে দেয়।  জীবনের পরবর্তী ধাপে পা রাখার আগে তাই খানিক ক্ষণ থমকে দাঁড়াতে চাই আমি। অফুরন্ত ভালবাসা দেওয়ার জন্য এবং পাশা থাকার জন্য আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আপনাদের এই ভালবাসাই আমার যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়েছে। তাই ফের আপনাদের কাছেই ফিরছি। অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকলকে।’

ফিরে এসেছিলেন ইরফান। তার শেষ মুক্তি পাওয়া ছবি “আংরেজি মিডিয়াম’ লকডাউনের জেরে থিয়েটারে রিলিজ হয়নি। দুই ছেলে আর আর স্ত্রীকে রেখে ইরফান পাড়ি দিলেন নতুন দুনিয়ায়।

এর আগে ২০১৮ সালে ইরফান খান নিউরোনডকট্রিন টিউমারে আক্রান্ত হন। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ভারতের জয়পুরে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ইরফান খানের মা সাইদা বেগম। লকডাউনের কারণে মায়ের শেষ বিদায়েও অংশগ্রহণ করা হয়নি তার।

বিজে//

শেয়ার করুন

x
English Version

ব্যর্থ ব্যবসায়ী থেকে বড় পর্দার হিরো ইরফান খান

আপডেট: ০৭:০৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০

ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খান (৫৪) মারা গেছেন।

বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালে তিনি মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধিরুবাই আম্বানি হাসপাতালে মারা যান তিনি। সেখানেই কোলন ইনফেকশন সমস্যা নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ইরফান।

ব্রেনে টিউমার নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে লড়াই করছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে ‘আংরেজি মিডিয়াম’ ছবির মধ্যে দিয়ে ফিরেও এসেছিলেন এই শক্তিমান অভিনেতা। কিন্তু আবারও অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ইনফেকশন নিয়ে। তবে এবার আর ফেরা হল না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের জয়পুরে একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইরফান খান। ইরফানের মা, বেগম তন্ক হাকিম পরিবার থেকে এসেছিলেন এবং এবং তার মরহুম পিতা জাগিরদার তন্ম জেলার বাসিন্দা ছিলেন সেখানে পাগড়ির ব্যবসা করতেন। তিনি ১৯৮৪ সালে নয়া দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে স্কলারশিপের অর্জন করেন, যদিও তিনি তখন এমএ ডিগ্রীর জন্য অধ্যয়নরত ছিলেন।

বড় হয়ে ইরফান খান প্রথমে ক্রিকেটার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তার পর ছোটখাট ব্যবসার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। এরপর এম.এ কোর্সে ভর্তি হন। এম.এ কোর্সে পড়াশোনা চলাকালীন সময়েই ১৯৮৪তে ইরফানের কাছে আসে এক সুবর্ণ সুযোগ। তিনি নিউ দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপসহ সুযোগ পেয়ে যান। সেখান থেকে তিনি ড্রামাটিক আর্টসে ডিপ্লোমা করেন।

ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে পাশ করার পর ইরফান খান মুম্বাইয়ে চলে এলেন। সেখানে  তিনি টেলিভিশন সিরিয়াল দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করলেন, যদিও প্রথমদিকে তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

মুম্বাইয়ে আসার পর তিনি একে একে অভিনয় করলেন চাণৌক্য, ভারাত এক খোঁজ, সারা জাহা হামারা, বানেগী আপনে বাত, চন্দ্রকান্ত, শ্রীকান্ত, আনুগুঞ্জ, স্টার বেস্টসেলারস ও স্পার্স নামক টিভি সিরিয়ালে। স্টারপ্লাসের ‘ডার’ নামক এক সিরিজের প্রধান ভিলেন ছিলেন ইরফান। এতে তিনি কে কে মেননের বিপরীতে এক সাইকো সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

১৯৮৮ সালে এসে তাঁর ক্যারিয়ার নতুন দিকে মোড় নেয়া শুরু করে। ডিরেক্টর মিরা নায়ের তাঁকে তাঁর সিনেমা সালাম বোম্বেতে একটি অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল তার চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত ফিল্মের এডিটিংয়ে বাদ চলে যায়। সালাম বোম্বে সিনেমাটি পরে ইন্ডিয়া থেকে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। সিনেমাটি ইন্ডিয়ার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতেছিল। তবে সিনেমার এডিটিংয়ে তাঁর চরিত্র বাদ পড়লেও থেমে থাকেননি ইরফান খান। ঠিকই পরে মন জয় করে নিয়েছিলেন বলিউডের।

অসুস্থ হওয়ার পর এক টুইটে ইরফান লেখেন, ‘জীবনে জয়ী হওয়ার সাধনায় মাঝে মধ্যে ভালবাসার গুরুত্ব ভুলে যাই আমরা। তবে দুর্বল সময় আমাদের তা মনে করিয়ে দেয়।  জীবনের পরবর্তী ধাপে পা রাখার আগে তাই খানিক ক্ষণ থমকে দাঁড়াতে চাই আমি। অফুরন্ত ভালবাসা দেওয়ার জন্য এবং পাশা থাকার জন্য আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আপনাদের এই ভালবাসাই আমার যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়েছে। তাই ফের আপনাদের কাছেই ফিরছি। অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকলকে।’

ফিরে এসেছিলেন ইরফান। তার শেষ মুক্তি পাওয়া ছবি “আংরেজি মিডিয়াম’ লকডাউনের জেরে থিয়েটারে রিলিজ হয়নি। দুই ছেলে আর আর স্ত্রীকে রেখে ইরফান পাড়ি দিলেন নতুন দুনিয়ায়।

এর আগে ২০১৮ সালে ইরফান খান নিউরোনডকট্রিন টিউমারে আক্রান্ত হন। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ভারতের জয়পুরে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ইরফান খানের মা সাইদা বেগম। লকডাউনের কারণে মায়ের শেষ বিদায়েও অংশগ্রহণ করা হয়নি তার।

বিজে//