০১:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়ার আশঙ্কা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮
  • / ৪৩৩৪ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকিং ব্যবস্যায় যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন না করলে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েক বছর ধরে ঋণের প্রবৃদ্ধি যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে অনেক কম হারে বাড়ছে আমানত। ২০১৫ সালের জুনে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭ শতাংশ আর আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল একই সময়ে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ১ শতাংশ সেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়বে। মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘ট্রেজারি অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি দক্ষতার সঙ্গে ট্রেজারি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আলী হোসেন প্রধানিয়া, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী, বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ বারিকুল্লাহ।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মো: নেহাল আহমেদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

কর্মশালার উদ্বোধন করে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে বিষয়টি সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে ডলারের দাম একটু উর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংক পুরো বিষয়টি নজরদারি করছে, যাতে এটি আর না বাড়ে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে বর্তমানে অ্যাডভান্সড ডিপোজিট রেশিও (এডি) ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হলে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ হতে হবে।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকাররা ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদেরকে ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতার পরিচয় না দিলে পুরো ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, স্বার্থের বাইরে ঋণপত্র খুলে পরে তারা বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার সংস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ফান্ডের জোগান চায়। এতে বাজারে ডলারের ওপর চাপ পড়ে। এতে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মীদের ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের সঠিক তথ্য দিতে হবে। এটি না করলে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে আনতে হবে। বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য নিষিদ্ধ থাকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় ভুল নীতির কারণে ২০০৭ সালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক। এ কারণে ট্রেজারি ব্যব্স্থাপনায় কোনো ভুল করলে চলবে না।

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় জড়িত ব্যাংকারদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহজ হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা বৈশ্বিকভাবে তাল মিলিয়ে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শেয়ার করুন

x
English Version

ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়ার আশঙ্কা

আপডেট: ০৪:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকিং ব্যবস্যায় যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন না করলে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েক বছর ধরে ঋণের প্রবৃদ্ধি যে হারে বাড়ছে তার চেয়ে অনেক কম হারে বাড়ছে আমানত। ২০১৫ সালের জুনে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭ শতাংশ আর আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল একই সময়ে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ১ শতাংশ সেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়বে। মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘ট্রেজারি অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তিনি দক্ষতার সঙ্গে ট্রেজারি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আলী হোসেন প্রধানিয়া, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী, বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ বারিকুল্লাহ।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মো: নেহাল আহমেদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

কর্মশালার উদ্বোধন করে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে বিষয়টি সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে ডলারের দাম একটু উর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংক পুরো বিষয়টি নজরদারি করছে, যাতে এটি আর না বাড়ে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে বর্তমানে অ্যাডভান্সড ডিপোজিট রেশিও (এডি) ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে না হলে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ হতে হবে।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকাররা ব্যাংকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদেরকে ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতার পরিচয় না দিলে পুরো ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, স্বার্থের বাইরে ঋণপত্র খুলে পরে তারা বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার সংস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ফান্ডের জোগান চায়। এতে বাজারে ডলারের ওপর চাপ পড়ে। এতে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় কর্মরত কর্মীদের ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের সঠিক তথ্য দিতে হবে। এটি না করলে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে আনতে হবে। বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য নিষিদ্ধ থাকা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় ভুল নীতির কারণে ২০০৭ সালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক। এ কারণে ট্রেজারি ব্যব্স্থাপনায় কোনো ভুল করলে চলবে না।

প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় জড়িত ব্যাংকারদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহজ হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা বৈশ্বিকভাবে তাল মিলিয়ে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।