০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড ইস্যুতে জল্পনা-কল্পনা!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ ২০২১
  • / ৫১৪০ বার দেখা হয়েছে

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিভিডেন্ড সিদ্ধান্ত কি পরিবর্তন হচ্ছে। এ প্রশ্ন এখন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের মুখে। কারন বাংলাদেশ ব্যাংকের লভ্যাংশ ইস্যুতে এক সিদ্ধান্তে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করছে। যা সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দরপতন হয়। মুলত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া আদেশ পরিবর্তনের অনুরোধ পর্যালোচনার কথা জানালেও সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনীহা তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রস্তাব যাওয়ার খবরে গত মঙ্গলবার উত্থান হলেও সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকায় বুধবার এই খাতে দেখা গেছে স্থবিরতা। একই পরিস্থিতি আর্থিক খাতে। অন্যদিকে লোকসানি ও বন্ধ একের পর এক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ পুনর্গঠন করে চলেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই খবরে এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুঙ্গে। প্রায় প্রতিদিনই এক দিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ছে বেশ কিছু লোকসানি প্রতিষ্ঠানের দর। আগামীতে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো চালু হলে ভালো লভ্যাংশ দেবে এমন গুজবে দাম বাড়িয়ে হলেও শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা।

দুর্বল কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন কম হওয়ায় সেগুলোর দর বৃদ্ধিতেও সূচকে প্রভাব পড়ে কম। কিন্তু ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দর কমলে সূচকে বেশ প্রভাব পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ১৩১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি আর এর চেয়ে কমসংখ্যক ১২৬টির দর পতনের পরও সূচক পড়ে গেছে পুঁজিবাজারে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া আদেশ পাল্টাতে অনুরোধের পর সিদ্ধান্ত এখনও জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক খাতে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম কমেছে ৯টির। ছয়টির দর আগের দিনের মতোই আছে। বাকি ১৫টির দর বেড়েছে। আর্থিক খাতে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর কমেছে ১৩টির, পাল্টায়নি সাতটির। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেড়েছে। বিমা খাত সে তুলনায় ছিল চাঙা। ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টিরই দর বেড়েছে। কমেছে পাঁচটির। সমসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দর আগের মতোই আছে।

বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়া বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ৪ টাকার শেয়ার এক দিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ার সুযোগ ছিল ৪০ পয়সা। বেড়েছেও তা।

এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির নতুন পর্ষদ পুনর্গনের পর এই কোম্পানিটির শেয়ার দরও ছুঁয়েছে এক দিন বাড়ার প্রান্তসীমা। শেয়ার দর ১২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেডেরও দর পরপর তিন দিন ছুঁয়েছে দর বৃদ্ধির প্রান্তসীমা। শেয়ার দর ২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ৬০ পয়সা। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। ৪ টাকা ৭০ পয়সার শেয়ারের দর বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ১০ পয়সা।

দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁকার বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনে বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘যারা জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন তারা জেনে শুনে ঝুঁকি নিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিএসইসি একটি পর্যায় থেকে লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানিগুলো চালু করার সম্ভাবনা যাচাইয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করছে। এটাকে আগামীতে শেয়ারের দর বাড়বে ভেবে যারা বিনিয়োগ করছেন তারা একদিকে নিজের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে ফেলছেন, অপরদিকে লোকসানের পথে হাঁটছেন।’
বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ‘বিএসইসি যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কোম্পানিগুলো চালু হোক সেটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘জেড ক্যাটাগরির শেয়ার আজ কেনার ১০ দিন পর বিক্রির উপযুক্ত হবে। এখন শেয়ারের দর বাড়ছে, ফলে যাদের হাতে বেশিসংখ্যক শেয়ার আছে, তারা সেগুলো বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছেন। আর সেগুলো কিনছেন গুজবে পড়া বিনিয়োগকারীরা ‘এখন যারা শেয়ার কিনছেন, তাদের বিক্রির সময় তখন আর দর পাবেন না। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ভেবে বিনিয়োগ করা উচিত।’

শেয়ার করুন

x
English Version

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিভিডেন্ড ইস্যুতে জল্পনা-কল্পনা!

আপডেট: ১০:০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ ২০২১

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিভিডেন্ড সিদ্ধান্ত কি পরিবর্তন হচ্ছে। এ প্রশ্ন এখন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের মুখে। কারন বাংলাদেশ ব্যাংকের লভ্যাংশ ইস্যুতে এক সিদ্ধান্তে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করছে। যা সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দরপতন হয়। মুলত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া আদেশ পরিবর্তনের অনুরোধ পর্যালোচনার কথা জানালেও সিদ্ধান্ত জানাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনীহা তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রস্তাব যাওয়ার খবরে গত মঙ্গলবার উত্থান হলেও সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকায় বুধবার এই খাতে দেখা গেছে স্থবিরতা। একই পরিস্থিতি আর্থিক খাতে। অন্যদিকে লোকসানি ও বন্ধ একের পর এক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ পুনর্গঠন করে চলেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই খবরে এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুঙ্গে। প্রায় প্রতিদিনই এক দিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ছে বেশ কিছু লোকসানি প্রতিষ্ঠানের দর। আগামীতে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো চালু হলে ভালো লভ্যাংশ দেবে এমন গুজবে দাম বাড়িয়ে হলেও শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা।

দুর্বল কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন কম হওয়ায় সেগুলোর দর বৃদ্ধিতেও সূচকে প্রভাব পড়ে কম। কিন্তু ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দর কমলে সূচকে বেশ প্রভাব পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ১৩১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি আর এর চেয়ে কমসংখ্যক ১২৬টির দর পতনের পরও সূচক পড়ে গেছে পুঁজিবাজারে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়া আদেশ পাল্টাতে অনুরোধের পর সিদ্ধান্ত এখনও জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক খাতে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম কমেছে ৯টির। ছয়টির দর আগের দিনের মতোই আছে। বাকি ১৫টির দর বেড়েছে। আর্থিক খাতে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর কমেছে ১৩টির, পাল্টায়নি সাতটির। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেড়েছে। বিমা খাত সে তুলনায় ছিল চাঙা। ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টিরই দর বেড়েছে। কমেছে পাঁচটির। সমসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দর আগের মতোই আছে।

বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়া বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ৪ টাকার শেয়ার এক দিনে সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ার সুযোগ ছিল ৪০ পয়সা। বেড়েছেও তা।

এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির নতুন পর্ষদ পুনর্গনের পর এই কোম্পানিটির শেয়ার দরও ছুঁয়েছে এক দিন বাড়ার প্রান্তসীমা। শেয়ার দর ১২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেডেরও দর পরপর তিন দিন ছুঁয়েছে দর বৃদ্ধির প্রান্তসীমা। শেয়ার দর ২ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ৬০ পয়সা। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। ৪ টাকা ৭০ পয়সার শেয়ারের দর বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ১০ পয়সা।

দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁকার বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনে বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘যারা জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন তারা জেনে শুনে ঝুঁকি নিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিএসইসি একটি পর্যায় থেকে লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানিগুলো চালু করার সম্ভাবনা যাচাইয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করছে। এটাকে আগামীতে শেয়ারের দর বাড়বে ভেবে যারা বিনিয়োগ করছেন তারা একদিকে নিজের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে ফেলছেন, অপরদিকে লোকসানের পথে হাঁটছেন।’
বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ‘বিএসইসি যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কোম্পানিগুলো চালু হোক সেটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘জেড ক্যাটাগরির শেয়ার আজ কেনার ১০ দিন পর বিক্রির উপযুক্ত হবে। এখন শেয়ারের দর বাড়ছে, ফলে যাদের হাতে বেশিসংখ্যক শেয়ার আছে, তারা সেগুলো বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছেন। আর সেগুলো কিনছেন গুজবে পড়া বিনিয়োগকারীরা ‘এখন যারা শেয়ার কিনছেন, তাদের বিক্রির সময় তখন আর দর পাবেন না। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ভেবে বিনিয়োগ করা উচিত।’