০৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাংক সংস্কার কমিটি গঠনের উদ্যোগ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:১৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৪১২৬ বার দেখা হয়েছে

আদালতের নির্দেশে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুর্বলতা খুঁজতে ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় অনিয়ম, আদায় পদ্ধতিতে দুর্বলতা খুঁজে বের করবে। একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট এ কমিটি গঠনের আদেশ দেন। প্রায় ২১ বছর পর ব্যাংকিং খাত সংস্কারে এই কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
নতুন কমিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের বিষয় খতিয়ে দেখবে। এছাড়া তারা অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
শক্তিশালীকরণ, গ্রাহক সেবার মান বাড়ানো ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জবাবদিহিতার বিষয়ও দেখবে। এগুলো নিয়ে কমিটি তাদের মতামত ও সুপারিশ দেবে। তাদের  মত ও সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়ার  নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে এক রিটের বিপরীতে হাইকোর্ট ব্যাংকিং খাতে একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেন। এর ভিত্তিতে গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকিং খাতের জন্য কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসেছে। এতে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্বলতা শনাক্ত করে সেগুলো প্রতিকারের বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ করতে একটি ব্যাংকিং খাতবিষয়ক কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ চিঠি পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচ্য কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক সংস্কার কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এর পর আর কোনো সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়নি। এরপর প্রায় ২১ বছর পার হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পর দেশে ব্যাংকিং খাত সংস্কারে আবার একটি নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
২০১৩ সালে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ধরা পড়লে ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনর দাবি ওঠে। এরপর ব্যাংকিং খাতে একে একে বড় বড় দুর্নীতির চিত্র প্রকাশিত হতে থাকলে এ কমিশন গঠনের দাবি আরও জোরালো হয়। ওই সময় থেকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সুশাসনের জন্য নাগরিকসহ (সুজন) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন আলোচনায় ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সুপারিশ করেন। কিন্তু কোনোক্রমেই সরকার এই কমিশন গঠন করেনি। এমনকি  সরকারের দুই মেয়াদের দুই অর্থমন্ত্রী ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বললেও তা এতদিন বাস্তবায়িত হয়নি।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। এরপর ২০১৭ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের জুনে জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় একটি ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন গঠিত হয়নি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সিপিডির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে ১০টি বড় জালিয়াতির ঘটনায় ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এরপর কমিশন গঠনের দাবি আরও জোরালো হয়।
২০১৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ব্যাংকিং কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। এতে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, সুদ মওকুফ বিষয়ে তদন্ত এবং সুপারিশ প্রণয়নে কমিশনের মতামত নেওয়ার কথা বলা হয়।  একই সঙ্গে অর্থ পাচারের বিষয়েও তদন্ত করতে আবেদন করা হয় রিটে। সংগঠনটি তখন ব্যাংক খাতের গত ২০ বছরের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের তথ্য তুলে ধরে। সেই রিটের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের নভেম্বরে হাইকোর্ট সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশ বাংককে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেন। এতে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন, বিতরণ ও আদায় পদ্ধতির দুর্বলতা খুঁজতে হবে। এজন্য কমিটিতে দক্ষ ব্যাংকার, সাবেক ব্যাংকার ও প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের রাখতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটি যেসব মতামত ও সুপারিশ করবে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ভিত্তিতে গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একটি কমিটি গঠনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর গত বছরের ২২ ফেব্র“য়ারি এক অনুষ্ঠানে সিপিডি বলেছে, শুধু ব্যাংকিং কমিটি গঠন করলেই হবে না। একে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কমিটির সদস্য খোঁজার কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকজন সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকারের কাছে চিঠি দিয়ে মতামত চেয়েছে। তাদের মত পাওয়ার পর  পর্যালোচনা করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১৯৯৯ সালের ব্যাংক সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গত ৯ ডিসেম্বর ফেসবুকের ওয়ালে তাদের প্রতিবেদনের কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘আমার মতে এই রিপোর্টের কিছু বিষয় যুগোপযোগী করা দরকার। যেমন বাজার অর্থনীতিতে শেয়ার কিনে একটি ব্যাংকের মালিকানা দখল করার সুযোগ থাকে। কিন্তু এ সুযোগের অপব্যবহার করে এ খাতে একচেটিয়া দখলদার তৈরি হওয়া যে বিপজ্জনক এবং তার প্রতিকারের কিছু নিয়মনীতি থাকা দরকার তা প্রতিবেদনটিতে নেই। অলাভজনক খেলাপি প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য দেউলিয়া আইনের সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারেও তেমনটা বলা হয়নি। বড় অঙ্কের জালিয়াতি ও বিদেশে পাচারের অর্থ ব্যাংকিং খাতের মধ্য দিয়ে কী করে হাত বদল হয় তা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমের বিষয়ও তখন আলোচনায় আসেনি। তার চেয়ে বড় কথা হলো এত আয়োজন ও পরিশ্রম  করে তৈরি সংস্কারের রিপোর্ট তো লাইব্রেরিতে সেলফবন্দি হয়ে থেকে লাভ নেই যদি বাস্তবায়ন না হয়। এই রিপোর্টের বেশকিছু সুপারিশ এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রবিধি হিসাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, কিন্তু পরে ব্যাংকিং আইনে রূপান্তরিত করা হয়নি বলে সেগুলো আর কার্যকর থাকেনি। বরং ব্যাংকিং আইনে বিধিনিষেধগুলো আরও শিথিল করার ফলে অনিয়মের সুযোগ বেড়ে গেছে।’

শেয়ার করুন

x
English Version

ব্যাংক সংস্কার কমিটি গঠনের উদ্যোগ

আপডেট: ১১:১৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১

আদালতের নির্দেশে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দুর্বলতা খুঁজতে ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় অনিয়ম, আদায় পদ্ধতিতে দুর্বলতা খুঁজে বের করবে। একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট এ কমিটি গঠনের আদেশ দেন। প্রায় ২১ বছর পর ব্যাংকিং খাত সংস্কারে এই কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
নতুন কমিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের বিষয় খতিয়ে দেখবে। এছাড়া তারা অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
শক্তিশালীকরণ, গ্রাহক সেবার মান বাড়ানো ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জবাবদিহিতার বিষয়ও দেখবে। এগুলো নিয়ে কমিটি তাদের মতামত ও সুপারিশ দেবে। তাদের  মত ও সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়ার  নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে এক রিটের বিপরীতে হাইকোর্ট ব্যাংকিং খাতে একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেন। এর ভিত্তিতে গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকিং খাতের জন্য কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসেছে। এতে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্বলতা শনাক্ত করে সেগুলো প্রতিকারের বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ করতে একটি ব্যাংকিং খাতবিষয়ক কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ চিঠি পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচ্য কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক সংস্কার কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এর পর আর কোনো সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়নি। এরপর প্রায় ২১ বছর পার হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পর দেশে ব্যাংকিং খাত সংস্কারে আবার একটি নতুন কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
২০১৩ সালে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ধরা পড়লে ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনর দাবি ওঠে। এরপর ব্যাংকিং খাতে একে একে বড় বড় দুর্নীতির চিত্র প্রকাশিত হতে থাকলে এ কমিশন গঠনের দাবি আরও জোরালো হয়। ওই সময় থেকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সুশাসনের জন্য নাগরিকসহ (সুজন) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন আলোচনায় ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সুপারিশ করেন। কিন্তু কোনোক্রমেই সরকার এই কমিশন গঠন করেনি। এমনকি  সরকারের দুই মেয়াদের দুই অর্থমন্ত্রী ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বললেও তা এতদিন বাস্তবায়িত হয়নি।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। এরপর ২০১৭ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের জুনে জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় একটি ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন গঠিত হয়নি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সিপিডির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে ১০টি বড় জালিয়াতির ঘটনায় ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এরপর কমিশন গঠনের দাবি আরও জোরালো হয়।
২০১৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ব্যাংকিং কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। এতে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, সুদ মওকুফ বিষয়ে তদন্ত এবং সুপারিশ প্রণয়নে কমিশনের মতামত নেওয়ার কথা বলা হয়।  একই সঙ্গে অর্থ পাচারের বিষয়েও তদন্ত করতে আবেদন করা হয় রিটে। সংগঠনটি তখন ব্যাংক খাতের গত ২০ বছরের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের তথ্য তুলে ধরে। সেই রিটের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের নভেম্বরে হাইকোর্ট সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশ বাংককে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠনের আদেশ দেন। এতে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ অনুমোদন, বিতরণ ও আদায় পদ্ধতির দুর্বলতা খুঁজতে হবে। এজন্য কমিটিতে দক্ষ ব্যাংকার, সাবেক ব্যাংকার ও প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের রাখতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটি যেসব মতামত ও সুপারিশ করবে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ভিত্তিতে গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল একটি কমিটি গঠনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরপর গত বছরের ২২ ফেব্র“য়ারি এক অনুষ্ঠানে সিপিডি বলেছে, শুধু ব্যাংকিং কমিটি গঠন করলেই হবে না। একে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কমিটির সদস্য খোঁজার কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকজন সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংকারের কাছে চিঠি দিয়ে মতামত চেয়েছে। তাদের মত পাওয়ার পর  পর্যালোচনা করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১৯৯৯ সালের ব্যাংক সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গত ৯ ডিসেম্বর ফেসবুকের ওয়ালে তাদের প্রতিবেদনের কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘আমার মতে এই রিপোর্টের কিছু বিষয় যুগোপযোগী করা দরকার। যেমন বাজার অর্থনীতিতে শেয়ার কিনে একটি ব্যাংকের মালিকানা দখল করার সুযোগ থাকে। কিন্তু এ সুযোগের অপব্যবহার করে এ খাতে একচেটিয়া দখলদার তৈরি হওয়া যে বিপজ্জনক এবং তার প্রতিকারের কিছু নিয়মনীতি থাকা দরকার তা প্রতিবেদনটিতে নেই। অলাভজনক খেলাপি প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য দেউলিয়া আইনের সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারেও তেমনটা বলা হয়নি। বড় অঙ্কের জালিয়াতি ও বিদেশে পাচারের অর্থ ব্যাংকিং খাতের মধ্য দিয়ে কী করে হাত বদল হয় তা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রমের বিষয়ও তখন আলোচনায় আসেনি। তার চেয়ে বড় কথা হলো এত আয়োজন ও পরিশ্রম  করে তৈরি সংস্কারের রিপোর্ট তো লাইব্রেরিতে সেলফবন্দি হয়ে থেকে লাভ নেই যদি বাস্তবায়ন না হয়। এই রিপোর্টের বেশকিছু সুপারিশ এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রবিধি হিসাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, কিন্তু পরে ব্যাংকিং আইনে রূপান্তরিত করা হয়নি বলে সেগুলো আর কার্যকর থাকেনি। বরং ব্যাংকিং আইনে বিধিনিষেধগুলো আরও শিথিল করার ফলে অনিয়মের সুযোগ বেড়ে গেছে।’