০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

শঙ্কার মধ্যেই ভোট আজ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:২১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৪১২৪ বার দেখা হয়েছে

সংঘাত ও সহিংসতার শঙ্কার মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ। সকাল আটটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট নেওয়া হবে। ২৯টিতে ইভিএম এবং ৩১টিতে কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ নানা ঘটনায় ওইসব এলাকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভোটের সময় সংঘর্ষের বিষয় মাথায় রেখেই বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে নির্দিষ্ট এলাকায়। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বসুরহাট পৌরসভার সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৪ জেলার ৩৮ পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে আছেন। তাদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের তৎপরতার কারণেও ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের আচরণ, দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষসহ নানা ধরনের ঘটনা ভোটের সময় সংঘর্ষের শঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, চোরাগোপ্তা হামলা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এতে আহত-নিহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মূলত মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেই সংঘর্ষ বেশি হচ্ছে। শুক্রবারও সকালে শরীয়তপুরের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও আহত হয়েছে ১১ জন। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর আড়ানীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা হয়।

হবিগঞ্জের মাধবপুরে সরকারি দলের প্রার্থী লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে দুষ্কৃতকারীরা। বুধবার ঝিনাইদহ-শৈলকুপায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এক প্রার্থীর ভাই মারা গেছেন। এর ৫ ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রার্থী মারা যাওয়ায় ওই ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি।

প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন শতাধিক।

সহিংসতার শঙ্কায় ১৭টি পৌরসভা নির্বাচনে নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে ২৩টি পৌরসভায় মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপে সংঘাত-সহিংসতা বেড়েছে। তৃতীয় ধাপের বেশ কয়েকটি পৌরসভাতেও সহিংসতা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ২৩ পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতায় একজন মারা যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, দ্বিতীয় ধাপের যেসব পৌরসভা নিয়ে শঙ্কা আছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য দেওয়া হয়েছে। তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে আশা করছি আমাদের কঠোর প্রস্তুতির কারণে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার উপস্থিতিও বেশি থাকবে। 

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে। নারায়ণগঞ্জের তারাব, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা ও পিরোজপুর- এ চারটিতে ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বাকি ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে।

তবে ৬০টি পৌরসভার সবকটিতেই কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ২৯টি পৌরসভার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) শুক্রবার পৌঁছানো হয়েছে। বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হবে। সেগুলোতে আজ শনিবার ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ দুটি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নেই।

সবকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। অনেকগুলো পৌরসভায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এই ধাপের নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

প্রথম ধাপে ৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। 

শঙ্কা ছড়াচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা : ইসির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি জেলার ৩৮টি পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের বড় অংশ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া বিএনপিরও বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে রয়েছেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, দলীয় ও বিদ্রোহী দুই ধরনের প্রার্থীর পেছনে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের তৎপরতার কারণেও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। 

১৭ পৌরসভায় অতিরিক্ত ফোর্স : ইসি সূত্র আরও জানিয়েছে, সবগুলো পৌরসভায় পুলিশের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে র‌্যাবের টিম টহল দিচ্ছে। এক লাখের বেশি ভোটার বিশিষ্ট পৌরসভায় চার প্লাটুন বিজিবি, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ভোটার পর্যন্ত তিন প্লাটুন এবং ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ভোটার বিশিষ্ট পৌরসভায় দুই প্লাটুন এবং ১০ হাজারের কম ভোটারের পৌরসভায় এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১৭টি পৌরসভায় এ সংখ্যার চেয়ে আর বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পৌরসভাগুলো হচ্ছে- দিনাজপুর, মোহনগঞ্জ, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, কিশোরগঞ্জ, কুলিয়ারচর, সাভার, বসুরহাট, গুরুদাসপুর, খাগড়াছড়ি, মোংলাপোর্ট, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ছাতক, শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার।

প্রতিটি পৌরসভায় সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ১১ জন সদস্য ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। বগুড়ার তিনটি পৌরসভায় এ সংখ্যার অতিরিক্ত হিসাবে দুজন করে বাড়তি পুলিশ দেওয়া হলো। ৬০টি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৮০টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ৪০ হাজার ২৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ভোটার ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। 

বসুরহাট পৌরসভার সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ : আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বহুল আলোচিত বসুরহাট পৌরসভার সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি কেন্দ্রে শুক্রবার থেকে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন- প্রার্থী, ভোটার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় ২২০ পুলিশ, ৪ প্লাটুন বিজিবিও ২৪ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৯টি কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা তদারকি ও দিকনির্দেশনার দায়িত্বে থাকবেন নয়জন ম্যাজিস্ট্রেট। এ পৌরসভা নির্বাচনে ৩ জন মেয়র, ২৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৭ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের আবদুল কাদের মির্জা (নৌকা), বিএনপির কামাল উদ্দেশ্য (ধানের শীষ) ও জামায়াত সমর্থিত মোশাররফ হোসেন (মোবাইল ফোন)। 

মাধবপুরে আ.লীগ প্রার্থীর উপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ : আমাদের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্তকে লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা ছোড়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডাকবাংলোতে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত। তবে তিনি অক্ষত রয়েছেন। এ পৌরসভায় শনিবার ভোটগ্রহণ হবে। 

মাধবপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আদাঐর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক পাঠান জানান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সুব্রত পুরকায়েস্তকে নিয়ে নির্বাচনসংক্রান্ত আলোচনা করার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ শোনা যায়। পরপর তিনটি পেট্রোলবোমা ছোড়া হয়। তবে কে বা কারা এ কাজ করেছে তা তিনি দেখেননি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আলামত জব্দ করে।

আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্র্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্ত জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এ কাজ করেছেন। এ ঘটনায় মাধবপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মাধবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভেদরগঞ্জে দুই মেয়র সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ : ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি জানান, পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার পৌরসভার গৈড্যা এলাকায় আওয়ামী লীগ ও একই দলের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুপক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি এ পৌরসভায় ভোট হবে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল বাশার চোকদারের সমর্থকরা শুক্রবার ওই এলাকায় প্রচারণা চালাতে গেলে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা ও সংঘর্ষ হয়। আবুল বাসার চোকদার অভিযোগ করে বলেন, ৭নং ওয়ার্ডে আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ৭০-৮০ জন সমর্থক আমাদের ওপর আতর্কিত হামলা চালায়।

এ সময় আমার ১০ জন সমর্থক আহত হন। এমনকি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আমাকে নানা ধরনের হুমকি প্রদর্শন করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, ওই এলাকায় আমাদের লোকজন প্রচার চালাতে যাওয়ার পর বিদ্রোহী প্রার্থীর কিছু বহিরাগত লোকজন হঠাৎ করে আমাদের এক সমর্থকের ওপর হামলা করে। 

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম রশিদুল বারী বলেন, সংঘর্ষের খবর শুনে ওইে এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

সিলেটের ৭ পৌরসভায় ৯১টির মধ্যে ৭০ টি ঝুঁকিপূর্ণ : আমাদের সিলেট ব্যুরো জানায়, প্রচারণার শেষ সময়ে এসে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনায় সিলেট বিভাগের কয়েকটি পৌরসভায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ বিভাগের ৭ পৌরসভার ৯১ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টিরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে ২১ প্লাটুন বিজিবি সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫ হাজার সদস্য। পুলিশের সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা ও নির্দেশনা অনুযায়ী ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন ও ভোট দিতে পারেন- এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হবে সিলেটের ৭টি পৌরসভার নির্বাচনে।

দিনাজপুরের তিন পৌরসভার ৭৪টি ভোট কেন্দ্রের ২৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ : আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান- দিনাজপুর, বিরামপুর ও বীরগঞ্জ এ তিন পৌরসভায় ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আর সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে তিনটি পৌরসভায় মোতায়েন করা হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

দিনাজপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহীনুর ইসলাম প্রামাণিক জানান, জেলার ৩টি পৌরসভার ৭৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি ভোট কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে দিনাজপুর পৌরসভায় ১২টি কেন্দ্র, বিরামপুর পৌরসভায় ১১টি কেন্দ্র এবং বীরগঞ্জ পৌরসভায় ৫টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। এছাড়া শরীয়তপুর সদর পৌরসভার ১৮টির মধ্যে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন আমাদের শরীয়তপুর প্রতিনিধি। 

৬০ পৌরসভায় ভোট : দ্বিতীয় ধাপে যে ৬০টি পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে, সেগুলো হলো- চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া, কুষ্টিয়ার কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা, মিরপুর ও কুমারখালী, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, নারায়ণগঞ্জের তারাব, শরীয়তপুরের শরীয়তপুর সদর এবং কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী। এছাড়াও রয়েছে গাইবান্ধার গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুরের দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, মাগুরার মাগুরা সদর, ঢাকার সাভার, দিনাজপুরের বিরামপুর ও বীরগঞ্জ। নওগাঁর নজিপুর, পাবনার ভাগুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া ও ঈশ্বরদী, রাজশাহীর কাকনহাট, আড়ানী ও ভবানীগঞ্জভ সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নাটোরের নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুর ও গোপালপুর। বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও শেরপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও বেলকুচি, সুনামগঞ্জের ছাতক ও জগন্নাথপুর, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর, মেহেরপুরের গাংনী এবং ঝিনাইদহের শৈলকুপা।

খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ ও রায়গঞ্জ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ সদর ও কুলিয়ারচর, নরসিংদীর মনোহরদী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, বগুড়ার সান্তাহার, নোয়াখালীর বসুরহাট ও বাগেরহাটের মোংলাপোর্ট। 

শেয়ার করুন

x
English Version

শঙ্কার মধ্যেই ভোট আজ

আপডেট: ১১:২১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১

সংঘাত ও সহিংসতার শঙ্কার মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ। সকাল আটটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট নেওয়া হবে। ২৯টিতে ইভিএম এবং ৩১টিতে কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ নানা ঘটনায় ওইসব এলাকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভোটের সময় সংঘর্ষের বিষয় মাথায় রেখেই বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে নির্দিষ্ট এলাকায়। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বসুরহাট পৌরসভার সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৪ জেলার ৩৮ পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে আছেন। তাদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের তৎপরতার কারণেও ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের আচরণ, দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষসহ নানা ধরনের ঘটনা ভোটের সময় সংঘর্ষের শঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, চোরাগোপ্তা হামলা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এতে আহত-নিহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মূলত মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেই সংঘর্ষ বেশি হচ্ছে। শুক্রবারও সকালে শরীয়তপুরের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও আহত হয়েছে ১১ জন। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর আড়ানীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা হয়।

হবিগঞ্জের মাধবপুরে সরকারি দলের প্রার্থী লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে দুষ্কৃতকারীরা। বুধবার ঝিনাইদহ-শৈলকুপায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এক প্রার্থীর ভাই মারা গেছেন। এর ৫ ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রার্থী মারা যাওয়ায় ওই ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি।

প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন শতাধিক।

সহিংসতার শঙ্কায় ১৭টি পৌরসভা নির্বাচনে নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে ২৩টি পৌরসভায় মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপে সংঘাত-সহিংসতা বেড়েছে। তৃতীয় ধাপের বেশ কয়েকটি পৌরসভাতেও সহিংসতা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ২৩ পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতায় একজন মারা যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, দ্বিতীয় ধাপের যেসব পৌরসভা নিয়ে শঙ্কা আছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য দেওয়া হয়েছে। তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে আশা করছি আমাদের কঠোর প্রস্তুতির কারণে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার উপস্থিতিও বেশি থাকবে। 

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে। নারায়ণগঞ্জের তারাব, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা ও পিরোজপুর- এ চারটিতে ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বাকি ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে।

তবে ৬০টি পৌরসভার সবকটিতেই কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ২৯টি পৌরসভার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) শুক্রবার পৌঁছানো হয়েছে। বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হবে। সেগুলোতে আজ শনিবার ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ দুটি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নেই।

সবকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। অনেকগুলো পৌরসভায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এই ধাপের নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

প্রথম ধাপে ৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। 

শঙ্কা ছড়াচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা : ইসির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি জেলার ৩৮টি পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের বড় অংশ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া বিএনপিরও বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে রয়েছেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, দলীয় ও বিদ্রোহী দুই ধরনের প্রার্থীর পেছনে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের তৎপরতার কারণেও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। 

১৭ পৌরসভায় অতিরিক্ত ফোর্স : ইসি সূত্র আরও জানিয়েছে, সবগুলো পৌরসভায় পুলিশের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে র‌্যাবের টিম টহল দিচ্ছে। এক লাখের বেশি ভোটার বিশিষ্ট পৌরসভায় চার প্লাটুন বিজিবি, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ভোটার পর্যন্ত তিন প্লাটুন এবং ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ভোটার বিশিষ্ট পৌরসভায় দুই প্লাটুন এবং ১০ হাজারের কম ভোটারের পৌরসভায় এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১৭টি পৌরসভায় এ সংখ্যার চেয়ে আর বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পৌরসভাগুলো হচ্ছে- দিনাজপুর, মোহনগঞ্জ, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, কিশোরগঞ্জ, কুলিয়ারচর, সাভার, বসুরহাট, গুরুদাসপুর, খাগড়াছড়ি, মোংলাপোর্ট, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ছাতক, শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার।

প্রতিটি পৌরসভায় সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ১১ জন সদস্য ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। বগুড়ার তিনটি পৌরসভায় এ সংখ্যার অতিরিক্ত হিসাবে দুজন করে বাড়তি পুলিশ দেওয়া হলো। ৬০টি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৮০টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ৪০ হাজার ২৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ভোটার ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। 

বসুরহাট পৌরসভার সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ : আমাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বহুল আলোচিত বসুরহাট পৌরসভার সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি কেন্দ্রে শুক্রবার থেকে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন- প্রার্থী, ভোটার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় ২২০ পুলিশ, ৪ প্লাটুন বিজিবিও ২৪ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৯টি কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা তদারকি ও দিকনির্দেশনার দায়িত্বে থাকবেন নয়জন ম্যাজিস্ট্রেট। এ পৌরসভা নির্বাচনে ৩ জন মেয়র, ২৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৭ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের আবদুল কাদের মির্জা (নৌকা), বিএনপির কামাল উদ্দেশ্য (ধানের শীষ) ও জামায়াত সমর্থিত মোশাররফ হোসেন (মোবাইল ফোন)। 

মাধবপুরে আ.লীগ প্রার্থীর উপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ : আমাদের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্তকে লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা ছোড়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডাকবাংলোতে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত। তবে তিনি অক্ষত রয়েছেন। এ পৌরসভায় শনিবার ভোটগ্রহণ হবে। 

মাধবপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আদাঐর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক পাঠান জানান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সুব্রত পুরকায়েস্তকে নিয়ে নির্বাচনসংক্রান্ত আলোচনা করার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ শোনা যায়। পরপর তিনটি পেট্রোলবোমা ছোড়া হয়। তবে কে বা কারা এ কাজ করেছে তা তিনি দেখেননি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আলামত জব্দ করে।

আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্র্থী শ্রীধাম দাশ গুপ্ত জানান, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এ কাজ করেছেন। এ ঘটনায় মাধবপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মাধবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভেদরগঞ্জে দুই মেয়র সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ : ভেদরগঞ্জ (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি জানান, পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার পৌরসভার গৈড্যা এলাকায় আওয়ামী লীগ ও একই দলের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুপক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি এ পৌরসভায় ভোট হবে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল বাশার চোকদারের সমর্থকরা শুক্রবার ওই এলাকায় প্রচারণা চালাতে গেলে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা ও সংঘর্ষ হয়। আবুল বাসার চোকদার অভিযোগ করে বলেন, ৭নং ওয়ার্ডে আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ৭০-৮০ জন সমর্থক আমাদের ওপর আতর্কিত হামলা চালায়।

এ সময় আমার ১০ জন সমর্থক আহত হন। এমনকি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আমাকে নানা ধরনের হুমকি প্রদর্শন করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, ওই এলাকায় আমাদের লোকজন প্রচার চালাতে যাওয়ার পর বিদ্রোহী প্রার্থীর কিছু বহিরাগত লোকজন হঠাৎ করে আমাদের এক সমর্থকের ওপর হামলা করে। 

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম রশিদুল বারী বলেন, সংঘর্ষের খবর শুনে ওইে এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

সিলেটের ৭ পৌরসভায় ৯১টির মধ্যে ৭০ টি ঝুঁকিপূর্ণ : আমাদের সিলেট ব্যুরো জানায়, প্রচারণার শেষ সময়ে এসে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনায় সিলেট বিভাগের কয়েকটি পৌরসভায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ বিভাগের ৭ পৌরসভার ৯১ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টিরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে ২১ প্লাটুন বিজিবি সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫ হাজার সদস্য। পুলিশের সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা ও নির্দেশনা অনুযায়ী ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন ও ভোট দিতে পারেন- এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হবে সিলেটের ৭টি পৌরসভার নির্বাচনে।

দিনাজপুরের তিন পৌরসভার ৭৪টি ভোট কেন্দ্রের ২৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ : আমাদের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান- দিনাজপুর, বিরামপুর ও বীরগঞ্জ এ তিন পৌরসভায় ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আর সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে তিনটি পৌরসভায় মোতায়েন করা হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

দিনাজপুরের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহীনুর ইসলাম প্রামাণিক জানান, জেলার ৩টি পৌরসভার ৭৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি ভোট কেন্দ্রকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে দিনাজপুর পৌরসভায় ১২টি কেন্দ্র, বিরামপুর পৌরসভায় ১১টি কেন্দ্র এবং বীরগঞ্জ পৌরসভায় ৫টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। এছাড়া শরীয়তপুর সদর পৌরসভার ১৮টির মধ্যে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন আমাদের শরীয়তপুর প্রতিনিধি। 

৬০ পৌরসভায় ভোট : দ্বিতীয় ধাপে যে ৬০টি পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে, সেগুলো হলো- চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া, কুষ্টিয়ার কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা, মিরপুর ও কুমারখালী, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, নারায়ণগঞ্জের তারাব, শরীয়তপুরের শরীয়তপুর সদর এবং কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী। এছাড়াও রয়েছে গাইবান্ধার গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুরের দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, মাগুরার মাগুরা সদর, ঢাকার সাভার, দিনাজপুরের বিরামপুর ও বীরগঞ্জ। নওগাঁর নজিপুর, পাবনার ভাগুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া ও ঈশ্বরদী, রাজশাহীর কাকনহাট, আড়ানী ও ভবানীগঞ্জভ সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নাটোরের নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুর ও গোপালপুর। বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও শেরপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও বেলকুচি, সুনামগঞ্জের ছাতক ও জগন্নাথপুর, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর, মেহেরপুরের গাংনী এবং ঝিনাইদহের শৈলকুপা।

খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ ও রায়গঞ্জ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ সদর ও কুলিয়ারচর, নরসিংদীর মনোহরদী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, বগুড়ার সান্তাহার, নোয়াখালীর বসুরহাট ও বাগেরহাটের মোংলাপোর্ট।