০৮:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

১০ বার ধরন পাল্টেছে করোনাভাইরাস, বললেন দুই বাঙালি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:১০:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২০
  • / ৪৫২৪ বার দেখা হয়েছে

বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত ১০ বার নিজের ধরন পাল্টেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক ইনস্টিটিউটের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ইনস্টিটিউটটির দুই বাঙালি গবেষক জানিয়েছেন, এর মধ্যে ‘এ২এ’ নামের ধরনটিই বিশ্বজুড়ে অন্য সবাইকে পেছনে ফেলেছে। তারা বলেন, মানবদেহের ফুসফুসের কোষে দল বেঁধে হানা দিতে দক্ষ ‘এ২এ’ সংক্রমণ ও পরিণতি ডেকে আনার ক্ষেত্রেও বিশেষ পারদর্শী।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জেনোমিকসের পার্থপ্রতিম মজুমদার ও নিধান কুমার বিশ্বাসের এ গবেষণাটি শিগগিরই ভারতের কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) জার্নালে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।

দুই বাঙালি গবেষকের মতে, ১০ বছর আগে যে সার্স-সিওভি ভাইরাস ৮ হাজার জনের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে আটশ’র মতো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সেটিরও ফুসফুসের কোষে প্রবেশে দক্ষতা ছিল; তবে ‘এ২এ’ এর মতো অতটা নয়।

শক্তিশালী হওয়ায় নতুন করোনাভাইরাসের এ ধরনটি এখন দুনিয়াজুড়ে রাজত্ব করছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

কোভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জেনোমিকসের (এনআইবিজি) এ গবেষণা বেশ কাজে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতীয় এ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, মাত্র চার মাসে ভাইরাসটি তার আদি ‘ও’ ধরন থেকে ‘এ২’, ‘এ২এ’, ‘এ৩’, ‘বি’, ‘বি১’-র মতো ১০টি রূপ ধারণ করেছে।

ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫টি দেশের ৩ হাজার ৬৩৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে ভাইরাস নমুনার আরএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করে আদিটিসহ মোট ১১টি ধরন পেয়েছেন তারা।

সংগৃহীত মোট নমুনার আরএনএ বিশ্লেষণ করে ১ হাজার ৮৪৮টি (৫০ শতাংশ) সংক্রমণের ক্ষেত্রে ‘এ২এ’ পেয়েছেন তারা। ‘ও’ পাওয়া গেছে ৫৮২ নমুনায়, ‘বি১’ পাওয়া গেছে ৫০৫টি নমুনায়।

এই গবেষণায় ভারতের ৩৫টি নমুনার ১৬টিতেই ‘এ২এ’ পাওয়া গেছে। ‘এ৩’ পাওয়া গেছে ১৩টিতে, ‘ও’ পাওয়া গেছে ৫টিতে।

গবেষক দলের সদস্য পার্থ বলেন, চীনে সংক্রমণ ঘটিয়েছে ‘ও; ২৪ জানুয়ারি প্রথম ‘এ২এ’ এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। আর মার্চের শেষ নাগাদ এটি দুনিয়াজুড়ে অন্য ধরনগুলোকে টপকে যায়।

তিনি আরও বলেন, এটি (এ২এ) সার্স-সিওভি২ এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হয়ে উঠে।

অপর সদস্য নিধান জানান, চীনের পর ইরানে ভাইরাসটির ধরন ‘এ৩,’-এ বদলে যায়। এরপর ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রে ‘এ২এ’-ই আঘাত হেনেছে। ভারতে ভাইরাসটি এসেছেও সেখান থেকে।‘এ২এ’ এবং ‘ও’ দুটোই শক্তিশালী; তবে ‘এ২এ’ বেশি শক্তি ধরে, বলেছেন নিধান।

এনআইবিজির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক পার্থ বলেন, বেঁচে থাকতে হলে ভাইরাসকে অবশ্যই কোনো না কোনো প্রাণীর শরীরে সংক্রমিত হতে হবে।

রূপ পরিবর্তন বা মিউটেশনের ফলে সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা কমে যায়, তবে ব্যতিক্রমও আছে।

তবে কোনো কোনো মিউটেশনে ভাইরাস আরও দক্ষ হয়ে ওঠে এবং বেশি মানুষের মধ্য ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের মিউটেশন সংক্রমণের গতি বাড়িয়ে কখনো কখনও আদি ধরনকেও ছাড়িয়ে যায়। সার্স-সিওভি২ এর ক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটেছে, বলেন পার্থ।

বিজে/জেডআই

শেয়ার করুন

x
English Version

১০ বার ধরন পাল্টেছে করোনাভাইরাস, বললেন দুই বাঙালি

আপডেট: ০৪:১০:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২০

বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত ১০ বার নিজের ধরন পাল্টেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক ইনস্টিটিউটের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ইনস্টিটিউটটির দুই বাঙালি গবেষক জানিয়েছেন, এর মধ্যে ‘এ২এ’ নামের ধরনটিই বিশ্বজুড়ে অন্য সবাইকে পেছনে ফেলেছে। তারা বলেন, মানবদেহের ফুসফুসের কোষে দল বেঁধে হানা দিতে দক্ষ ‘এ২এ’ সংক্রমণ ও পরিণতি ডেকে আনার ক্ষেত্রেও বিশেষ পারদর্শী।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জেনোমিকসের পার্থপ্রতিম মজুমদার ও নিধান কুমার বিশ্বাসের এ গবেষণাটি শিগগিরই ভারতের কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) জার্নালে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।

দুই বাঙালি গবেষকের মতে, ১০ বছর আগে যে সার্স-সিওভি ভাইরাস ৮ হাজার জনের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে আটশ’র মতো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সেটিরও ফুসফুসের কোষে প্রবেশে দক্ষতা ছিল; তবে ‘এ২এ’ এর মতো অতটা নয়।

শক্তিশালী হওয়ায় নতুন করোনাভাইরাসের এ ধরনটি এখন দুনিয়াজুড়ে রাজত্ব করছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

কোভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিকেল জেনোমিকসের (এনআইবিজি) এ গবেষণা বেশ কাজে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতীয় এ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, মাত্র চার মাসে ভাইরাসটি তার আদি ‘ও’ ধরন থেকে ‘এ২’, ‘এ২এ’, ‘এ৩’, ‘বি’, ‘বি১’-র মতো ১০টি রূপ ধারণ করেছে।

ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫টি দেশের ৩ হাজার ৬৩৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে ভাইরাস নমুনার আরএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করে আদিটিসহ মোট ১১টি ধরন পেয়েছেন তারা।

সংগৃহীত মোট নমুনার আরএনএ বিশ্লেষণ করে ১ হাজার ৮৪৮টি (৫০ শতাংশ) সংক্রমণের ক্ষেত্রে ‘এ২এ’ পেয়েছেন তারা। ‘ও’ পাওয়া গেছে ৫৮২ নমুনায়, ‘বি১’ পাওয়া গেছে ৫০৫টি নমুনায়।

এই গবেষণায় ভারতের ৩৫টি নমুনার ১৬টিতেই ‘এ২এ’ পাওয়া গেছে। ‘এ৩’ পাওয়া গেছে ১৩টিতে, ‘ও’ পাওয়া গেছে ৫টিতে।

গবেষক দলের সদস্য পার্থ বলেন, চীনে সংক্রমণ ঘটিয়েছে ‘ও; ২৪ জানুয়ারি প্রথম ‘এ২এ’ এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। আর মার্চের শেষ নাগাদ এটি দুনিয়াজুড়ে অন্য ধরনগুলোকে টপকে যায়।

তিনি আরও বলেন, এটি (এ২এ) সার্স-সিওভি২ এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হয়ে উঠে।

অপর সদস্য নিধান জানান, চীনের পর ইরানে ভাইরাসটির ধরন ‘এ৩,’-এ বদলে যায়। এরপর ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রে ‘এ২এ’-ই আঘাত হেনেছে। ভারতে ভাইরাসটি এসেছেও সেখান থেকে।‘এ২এ’ এবং ‘ও’ দুটোই শক্তিশালী; তবে ‘এ২এ’ বেশি শক্তি ধরে, বলেছেন নিধান।

এনআইবিজির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক পার্থ বলেন, বেঁচে থাকতে হলে ভাইরাসকে অবশ্যই কোনো না কোনো প্রাণীর শরীরে সংক্রমিত হতে হবে।

রূপ পরিবর্তন বা মিউটেশনের ফলে সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা কমে যায়, তবে ব্যতিক্রমও আছে।

তবে কোনো কোনো মিউটেশনে ভাইরাস আরও দক্ষ হয়ে ওঠে এবং বেশি মানুষের মধ্য ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের মিউটেশন সংক্রমণের গতি বাড়িয়ে কখনো কখনও আদি ধরনকেও ছাড়িয়ে যায়। সার্স-সিওভি২ এর ক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটেছে, বলেন পার্থ।

বিজে/জেডআই