অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা ও সংকটের মূলে রয়েছে স্বেচ্ছাচারী রাজনীতি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

- আপডেট: ০৪:২৯:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
- / ১০৩৪৭ বার দেখা হয়েছে
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা ও সংকটের মূলে রয়েছে স্বেচ্ছাচারী রাজনীতি ও অনাচারী অর্থনীতি। বিগত সরকারের সময়ে অনাচারী অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাচারী অর্থনীতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) পরিকল্পনা কমিশনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিটির বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে যতটুকু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এটার বিপরীতে উন্নয়নের একটি বয়ান সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই অনাচারী অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাচারী রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছিল। এটার ফলে অনাচারের যে চক্রাকার আবহ সৃষ্টি হয়েছিল, তা ভাঙার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, শেষ বিচারের রাজনৈতিক সংস্কার ঠিক না হলে, আমাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, কর্মদক্ষতা এবং সুশাসনের পথে বাধা সৃষ্টি হবে। আমরা বর্তমান যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে তা নির্ধারণ করবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের কতটা স্বস্তি দিচ্ছে। অর্থাৎ এ সংস্কারগুলোর পরিধি, ধারাবাহিকতা এবং গতি কি হবে তা নির্ধারিত হবে সরকার বর্তমান অর্থনীতির কতখানি আশ্বস্ত থাকে এবং জনগণ কতখানি স্বস্তিতে থাকে। যদিও চরম বিচারে রাজনৈতিক নেয়ামক কিন্তু রাজনীতিকে অর্থনৈতিক ভঙ্কুরোতা সে জায়গায় নাও রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে চলমান বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইতিবাচক সংস্কার পদ্ধতি ও কার্যক্রম আমরা লক্ষ্য করছি। একই সাথে রাজনৈতিক বলেন প্রাতিষ্ঠানিক বলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আসছে। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি পলিসি বা দলের উপর আমরা যখন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করি তখন তার অর্থনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের রাজনৈতিক ভূমিকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভূমিকাকেও সংকুচিত কবার পথ সৃষ্টি করি। সেহেতু এ বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনার মধ্যে রাখতে হচ্ছে। এইসব বিষয় শ্বেতপত্র প্রনয়ন কমিটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে কাজ করছে।
বৈঠকে ইএফআরের সাংবাদিক নেতারা অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাছে নানা প্রকার সংস্কার সুপারিশ তুলে ধরেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিশাল অনিয়ম তা রোধে করণীয়। মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির পরিমাণ নির্ধারণে পদ্ধতিগত সংস্কার। রাষ্ট্রের ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য প্রবাহের পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং ডেটার সহজলভ্যতার ক্ষেত্র প্রণয়ন’সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়।
প্রণয়ন কমিটির সদস্য ডক্টর জাহিদ হাসান বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য কিছু বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু ব্যাপকতা ও গভীরতা বলে একটা বিষয় আছে। এখন আমরা ব্যাপকতার চাইতে গভীরতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। রেলপথ, পানিপথ, সড়ক পথ ছাড়াও অদৃশ্য কিছু পথ রয়েছে। এখন এই সকল পথের গভীরতা বিবেচনায় সংস্কার অগ্রগতি পরিচালনা হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে আমাদের মাটির কাছাকাছি থাকতে হবে খুব বেশি আকাশচুম্বী প্রত্যাশা করা উচিত হবে না। তবে জবাবদিহিতার পদ্ধতিগত সংস্কারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই ব্যাপারে প্রণয়ন কমিটি একটি দৃশ্যমান পদ্ধতি প্রণয়নে কাজ করছে।
আরও পড়ুন: আমানত সুরক্ষা আইন পরিবর্তন করা হবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির আরেক সদস্য ডক্টর সেলিম রায়হান বলেন, দেশের সার্বিক সংকটের সমস্যাটা মোটা দাগে চিহ্নিত করলে দেখা যাবে এটা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৪ সালের একটি অগণতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে। তখন থেকেই উন্নয়নের বয়ানে ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা চামচা পুঁজিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রকল্প ভিত্তিক দুর্নীতি, ব্যয় ভিত্তিক দুর্নীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে হরিলুট হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক অর্থনীতির যে আবহও সৃষ্টি হয়েছে। তা রাজনীতি আমলা ও ব্যবসায়ীরা একটি অ্যালেন্স তৈরি করে করেছে। তারাই মূলত এই উন্নয়ন বয়ানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার প্রয়োজন ছিল তারা তাদের স্বার্থের কারণে এই সংস্কার গুলোকে কখনোই সামনে আসতে দেয় নি। কারণ এই সংস্কারগুলো তাদের স্বার্থে বিঘ্ন ঘটাবে।
অধ্যাপক তামিম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রাজনৈতিক বিবেচনায় পক্ষপাতদুষ্ট মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মেগা চুরি হয়েছে। এই জন্য বড় প্রকল্প নিয়ে আসে, ছোট প্রকল্প দেখা যায় না। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত পিএমও অফিস থেকে আসে।
ঢাকা/এসএইচ