পাঠকদের জানা সুবিধার্থে বলে রাখা ভালো যে, সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া নিয়ে প্রথম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০০৫ সালে। বিএনপির প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে তখন ৬৬টি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়। এরপর ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে পাওয়ার গ্রিড, ডেসকো, তিতাস গ্যাসসহ পাঁচটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এরপর ২০১০ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৬ থেকে ২৬টিতে নামিয়ে আনে। কোম্পানিগুলোকে ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। এরপর বাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্লস। আর পুনরায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (রিপিট আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)।
যেসব কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত আছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি., গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম লি., বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লি., সোনারগাঁও হোটেল, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, লিকুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লি., সিলেট গ্যাস ফিল্ড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লি., বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড লি. এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লি.।
এ ছাড়া রয়েছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগং ডকইয়ার্ড, কর্ণফুলী পেপার মিলস, বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লি., ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি., বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, টেলিটক, বাংলাদেশ কেব্ল শিল্প লিমিটেড ও টেলিফোন শিল্প সংস্থা।
ব্যাংক খাতের মধ্যে রয়েছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও বিডিবিএল এবং ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংকের আরও শেয়ার ছাড়া। জানা গেছে, টেলিটক, কর্ণফুলী পেপার মিল, বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর ও স্যানিটারিওয়্যার, ছাতক সিমেন্ট কারখানাসহ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার বিপক্ষে বিএসইসি।
এ ছাড়াও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির বৈঠকে বর্তমান অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রমালিকানাধীন পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ার ছাড়ার জন্য ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু এর মধ্যে রূপালী ব্যাংকের প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে রয়েছে। নতুন করে ব্যাংকটির আরও ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়তে চায় সরকার। এর বাইরে ধাপে ধাপে বাকি চারটি ব্যাংকেরও ২৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণারও কোনো বাস্তবায়ন আজও হয়নি।
বিএসইসি বাজারে আসার মতো কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সম্প্রতি আলাদা করে চিঠি পাঠিয়েছে। যেমন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডি শংকর মজুমদারকে পাঠানো এক চিঠিতে বিএসইসি বলেছে, ‘আপনার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মানদণ্ডের ক্রমাগত উৎকর্ষ অর্জন এবং রূপকল্প ২০৪১–এর বাস্তবায়নে বৈশ্বিক বাজারে পদার্পণের জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি অতীব জরুরি।’
বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা তাগিদ দিয়েই যাচ্ছি। এবার কিছু কোম্পানির ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী।’
সরকারি কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম গত শনিবার এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেন, অর্থমন্ত্রী চাচ্ছেন সরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে আনতে, কিন্তু কোম্পানিগুলোর পর্ষদ চায় না। এসব কোম্পানির পরিচালনায় গতিশীলতা আনতে পর্ষদগুলো ভেঙে দেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন: ট্রেজারি বন্ড লেনদেনে জিডিপিতে অবদান বাড়বে: শিবলী রুবাইয়াত
বছরের পর বছর বৈঠক হচ্ছে এবং একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে যার ফল হচ্ছে শূন্য। পুঁজিবাজারে আসতে দেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন সময়সীমাও যার কোনো তোয়াক্কা করে না সরকারি প্রতিষ্ঠান।
আদতে এ সব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসলে বাজার, বিনিয়োগকারী এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সবাই লাভবান হবে। কিন্তু হচ্ছে এর উল্টো যেসব কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। উল্টো পুঁজিবাজারে ভরে গেছে দূর্বল কোম্পানিতে যার মাসূল দিচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
উল্লেখ্য, গত শনিবার গোল টেবিল বৈঠকে প্রখ্যাত অর্থনীতিবীদ আবু আহমেদ বলেন, ‘বহুজাতিক বা বড় কোম্পানিগুলো যদি পুঁজিবাজারে না আসে তবে মার্কেটে উন্নয়ন সম্ভব না। বর্তমানে পুঁজিবাজার চলছে দুর্বল কোম্পানিগুলো নিয়ে’।
ঢাকা/এসএ
সূত্র: প্রথম আলো