১২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

আমাদের সভ্যতা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে, জলবায়ু সম্মেলনে ড. ইউনূস

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:০২:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১০২৪৮ বার দেখা হয়েছে

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আমাদের সভ্যতা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেননা, আমরা আত্ম-ধ্বংসাত্মক মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। একটি নতুন সভ্যতার স্ব-সংরক্ষিত ও স্ব-শক্তিশালী সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক এবং যুবশক্তিকে সংগঠিত করতে হবে।

আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই গ্রহের মানব বাসিন্দারাই এই গ্রহের ধ্বংসের কারণ। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করছি। আমরা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছি, যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। আর আমরা এটিকে অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দেই। আর এই অর্থনৈতিক কাঠামো আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের টিকে থাকতে হলে অন্য সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। একটি ভিন্ন জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এটি জিরো ওয়েস্টের (শূন্য উচ্ছিষ্ট) ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে। এটি ব্যবহারকে প্রয়োজনীয় চাহিদার মধ্যে সীমিত করবে, কোন অবশিষ্ট  উচ্ছিষ্ট থাকবে না। আর এ জীবনধারাও শূন্য কার্বনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে, যা কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি নয়, শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য শক্তি।

আরও পড়ুন: একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বললেন সেনাপ্রধান

তিনি আরও বলেন, ‘এটি এমন এক অর্থনীতি হবে, যা প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত শূন্য লাভের ওপর ভিত্তি করে অর্থাৎ সামাজিক ব্যবসার ওপর তৈরি হবে। একে সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অ-লাভজনক ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ এবং মানবজাতির সুরক্ষার দিকে মনোনিবেশ করবে। সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিত হবে না বরং গুণগতভাবে উন্নত হবে। এটি তরুণদের জন্য উদ্যোক্তা হয়ে উঠাকে আরও সহজতর করবে। উদ্যোক্তাদের নতুন শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা প্রস্তুত হবে। চাকরিপ্রার্থী তৈরির উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক শিক্ষাতে প্রতিস্থাপিত হবে।’

তরুণদের ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বে বেড়ে উঠার পরামর্শ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিবেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন একটি নতুন জীবনধারা, যা কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে না। এটি মানুষ পছন্দ করবে। তরুণরা সেই জীবনধারা পছন্দ করবে। প্রতিটি তরুণ থ্রি জিরো ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে -শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, আর শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে এবং নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব তৈরি করবে। প্রতিটি ব্যক্তি থ্রি জিরো ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং সারা জীবন থ্রি জিরো ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। এটি নতুন সভ্যতা তৈরি করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যা করতে হবে তা হলো গ্রহের নিরাপত্তা এবং এতে বসবাসকারী সবার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করা। আর এটা করবে আজকের তরুণ প্রজন্ম। তারা তাদের গ্রহকে ভালোবাসে।’

উল্লেখ্য, জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে সোমবার (১১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীরা আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অবতরণ করেন। এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বেলা ১১টার দিকে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

আমাদের সভ্যতা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে, জলবায়ু সম্মেলনে ড. ইউনূস

আপডেট: ০৩:০২:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৯ এ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আমাদের সভ্যতা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেননা, আমরা আত্ম-ধ্বংসাত্মক মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। একটি নতুন সভ্যতার স্ব-সংরক্ষিত ও স্ব-শক্তিশালী সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক এবং যুবশক্তিকে সংগঠিত করতে হবে।

আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এই গ্রহের মানব বাসিন্দারাই এই গ্রহের ধ্বংসের কারণ। আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করছি। আমরা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছি, যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। আর আমরা এটিকে অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দেই। আর এই অর্থনৈতিক কাঠামো আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের টিকে থাকতে হলে অন্য সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। একটি ভিন্ন জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এটি জিরো ওয়েস্টের (শূন্য উচ্ছিষ্ট) ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে। এটি ব্যবহারকে প্রয়োজনীয় চাহিদার মধ্যে সীমিত করবে, কোন অবশিষ্ট  উচ্ছিষ্ট থাকবে না। আর এ জীবনধারাও শূন্য কার্বনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে, যা কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি নয়, শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য শক্তি।

আরও পড়ুন: একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বললেন সেনাপ্রধান

তিনি আরও বলেন, ‘এটি এমন এক অর্থনীতি হবে, যা প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত শূন্য লাভের ওপর ভিত্তি করে অর্থাৎ সামাজিক ব্যবসার ওপর তৈরি হবে। একে সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অ-লাভজনক ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ এবং মানবজাতির সুরক্ষার দিকে মনোনিবেশ করবে। সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিত হবে না বরং গুণগতভাবে উন্নত হবে। এটি তরুণদের জন্য উদ্যোক্তা হয়ে উঠাকে আরও সহজতর করবে। উদ্যোক্তাদের নতুন শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা প্রস্তুত হবে। চাকরিপ্রার্থী তৈরির উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক শিক্ষাতে প্রতিস্থাপিত হবে।’

তরুণদের ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বে বেড়ে উঠার পরামর্শ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিবেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন একটি নতুন জীবনধারা, যা কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে না। এটি মানুষ পছন্দ করবে। তরুণরা সেই জীবনধারা পছন্দ করবে। প্রতিটি তরুণ থ্রি জিরো ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে -শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, আর শুধুমাত্র সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে এবং নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব তৈরি করবে। প্রতিটি ব্যক্তি থ্রি জিরো ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং সারা জীবন থ্রি জিরো ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। এটি নতুন সভ্যতা তৈরি করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যা করতে হবে তা হলো গ্রহের নিরাপত্তা এবং এতে বসবাসকারী সবার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করা। আর এটা করবে আজকের তরুণ প্রজন্ম। তারা তাদের গ্রহকে ভালোবাসে।’

উল্লেখ্য, জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে সোমবার (১১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীরা আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অবতরণ করেন। এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বেলা ১১টার দিকে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

ঢাকা/এসএইচ