আ.লীগ সরকারের প্রশ্রয়ে পুঁজিবাজারে যত অনিয়ম-লুটতরাজ হয়েছে: হেলাল উদ্দিন

- আপডেট: ০৫:০০:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১০৪৩৪ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজারে গত ১৫ বছরে যে অনিয়ম ও লুটতরাজ হয়েছে, তার সবই আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশ্রয় ও যোগসাজসে হয়েছে। সাবেক সরকার প্রধানও এ দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজারের জামান মার্কেটে পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ইনোভা সিকিউরিটিজের নতুন শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক এসব কথা বলেন।
ইনোভা সিকিউরিটিজের পরিচালক সাইফুজ্জামান সুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থসূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান। এ ছাড়াও ভৈরব পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ, ভৈরব বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিনিয়োগকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, যখন গণতন্ত্র ও জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকে না, নানা কৌশলে মানুষের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তৎকালীন সরকার এভাবে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তাদের অনুগত ও পা চাটা ব্যক্তিদের বসিয়েছিল। পুঁজিবাজারও তার ব্যতিক্রম নয়।
হেলাল উদ্দিন বলেন, গত দেড় দশকে পুঁজিবাজারে শেয়ারের যোগান যতটা বেড়েছে, চাহিদা ততটা বাড়েনি। এ সময়ে বাজারে যেসব আইপিও এসেছে, তার বড় অংশই নিম্নমানের। এ কারণে বাজারে প্রকৃত চাহিদা তৈরি হয়নি। অনেকে অন্যের দেখাদেখি বিনিয়োগ করে পরে সব হারিয়ে বসে থাকে। বিএসইসির বর্তমান কমিশন বাজারে সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। যদি তারা বাজার ফাউল প্লে বন্ধ করতে পারে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে, বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, আমি কমিশনকে বলেছি- ভালো শেয়ার নিশ্চিত না হয়ে বাজার যাতে নতুন শেয়ার না আনে। কারণ বাজারে ঘি-য়ের চেয়ে ছাইয়ের দাম বেশি হলে ঘি নিয়ে কেউ সেই বাজারে আসবে না।
আরও পড়ুন: ‘সূচক কমলেই বিএসইসি চেয়ারম্যানকে সরাতে হবে-এমন দাবি ঠিক না’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জিয়াউর রহমান বলেন, গত সরকারের সময়ে পুঁজিবাজারে যত ইনস্ট্রুমেন্ট আছে, তার প্রতিটির অপব্যবহার করা হয়েছে। তৎকালীন কমিশন শুধু দুষ্টচক্রকে প্রশ্রয়ই দেয়নি, অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ম ও কারসাজির পথও বাতলে দিয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে যে নাজুক অবস্থা চলছে তার অন্যতম কারণ গত ১৫ বছরের অনিয়ম ও দুর্নীতি। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই শেয়ারবাজারে কারসাজি ও দুর্নীতি হয়। তবে সেখানে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অপরাধ করে সবাই পার পেয়ে গেছে। গত সরকারের সময়ে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। আমরা অনেক অন্যায়ের ব্যাপারে অনেকবার শিবলী কমিশনকে জানিয়েছি। কিন্তু শিবলী কমিশন তা গুরুত্ব দেয়নি। বলেছে প্রসেসের ব্যাপার আছে।
রোড-শো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএসইসির টাকায় রোড-শো করার পেছনে বড় কারণ আমলা আর মন্ত্রীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা। কারণ উনি (শিবলী রুবাইয়াত) গভর্নর হতে চেয়েছিলেন, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন রোড-শোর আরেকটি বিষয় হতে পারে বিদেশে টাকা পাচার।
অর্থসূচক সম্পাদক বলেন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে গেলে শেয়ারের দরপতন হয়। ফলে একটি বড় অংশের মানুষ ব্যাংক নিরাপদ মনে করে ব্যাংকে টাকা রাখেন। এর কারণেও বাজারে মূলধনের ঘাটতি হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আমরা যে সুযোগ পেয়েছি সময়টাকে যদি কাজে লাগাতে পারি পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীর দায়িত্ব হলো কারসাজির বিরুদ্ধে সতর্ক হওয়া। আমাদের বড় দুর্ভাগ্য আমাদের বিনিয়োগকারীরা অলস। শেয়ার কেনার আগে তারা যাচাই করেন না। ফলে তারা অনেক সময় দেউলিয়া হয়ে যায়৷ বিনিয়োগকারীদের প্রচুর স্টাডি করতে হবে। অনেক দূরদর্শী হতে হবে। যে পড়ালেখা করে যাচাই বাছাই করে বিনিয়োগ করবে সে এই বাজারে সফল হবে। আর যে মানুষের পরামর্শে বিনিয়োগ করবে তার লুজার হবার সম্ভাবনাই বেশি।
ঢাকা/এসএইচ