০৬:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ইয়েমেনের ভূমি নিয়ে মুখোমুখি সৌদি-ওমান

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:০২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৭১ বার দেখা হয়েছে

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকারের কাছ থেকে ইয়েমেনের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় হাউথি বিদ্রোহীরা। দখল-পুনর্দখলকে কেন্দ্রে করে দেশটিতে চলছে গৃহযুদ্ধ। সেই যুদ্ধ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে পশ্চিমাঞ্চলীয় আল মাহরা প্রদেশ।

প্রদেশটির সীমান্ত রয়েছে সৌদি আরব এবং ওমানের সঙ্গে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দু’দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মাহরা। নিয়ন্ত্রণও চাচ্ছে রিয়াদ এবং মাস্কট।

সম্প্রতি মাহরার জনগণের মধ্যে নজিরবিহীন বিভেদ লক্ষ্য করা গেছে। মাহরা এবং সোকোট্রার জেনারেল কাউন্সিলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত দুটি গোষ্ঠীর সমর্থনে আলাদা আলাদা সমাবেশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

কুমসিত উপজাতির শেখ, আবুউদ আবদৌদের বাড়িতে একটি জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ হয়। 

কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। তখন থেকে এর চেয়ারপার্সনের দায়িত্বে রয়েছেন আবদুল্লাহ বিন ইসা আল আফরার। তিনি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করছেন। তাকে বাদ দিয়ে আবদৌদের বাড়িতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়।

নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করে আল আফরার সমর্থনে আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নতৃন নেতৃত্ব ঘোষণাকে কাউন্সিলের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

কাউন্সিলের নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। নানা ধরনের রাজনৈতিক মতানৈক্য রয়েছে মাহরায়। তবে এবারের বিতর্ক এমন সময় হয়েছে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত সাউথার্ন ট্রান্সজিশনাল কাউন্সিলের বাহিনী সাকোট্রার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এতে সহায়তা করেছেন আল আফরার।

আনাদোলু এজেন্সিকে আল মাহরার যুব বিষয়ক প্রাদেশিক ডেপুটি বদর কালশাত বলেন, আল আফরার পদক্ষেপের কারণে কাউন্সিলের অবস্থান স্পষ্ট এবং নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব নিধারণের জন্য সমাবেশ হয়েছে। সেখানে অংশ নিয়েছেন কাউন্সিলের সমর্থকরা।

তেল করিডোর

ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল রফতানির কৌশলগত রুট হরমুজ প্রণালী ঘিরে অস্থিরতার কারণে বিকল্প উপায় বের করার জন্য সৌদি আরবের ওপর অতিরিক্ত চাপ রয়েছে।

২০১৮ সালের আগস্টে ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, সৌদি আরব থেকে আল মাহরার নিশতুন সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত পাইপলাইন তৈরি করতে চায় রিয়াদ। যার মাধ্যমে সরাসরি আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগরে তেল পাঠানো নিশ্চিতের পরিকল্পনা সৌদি প্রশাসনের।

সাবেক ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ পাইপলাইন তৈরি, করিডোর নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের পর নিজেদের বহু পুরনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২০১৪ সালে শুরু হওয়া ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধকে অন্যতম সুযোগ হিসেবে দেখে আসছে রিয়াদ।

আনাদোলু এজেন্সিকে আবাদ স্ট্যাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুহাম্মদ বলেন, আরব সাগরে আল মাহরাকে কৌশলগত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করছে সৌদি আরব। যা ইরান নিয়ন্ত্রিত হরমুজ প্রণালী থেকে অনেক দূরে। একইসঙ্গে তেহরানের উপকূলকে মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালের সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে রিয়াদ।

আল মাহরায় নিজেদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০১৭ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ওই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়ে চলছে সৌদি আরব। আল মাহরার বিভিন্ন স্থাপনা, নিশতুন বন্দর, সারফিত বন্দর, শিহেন বর্ডার ক্রসির এবং আল ঘায়েদা বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রিয়াদ। ওইসব এলাকায় এবং স্থানীয় উপকূল অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে দেশটি।

ওই এলাকায় করিডোর, পাইপলাইন এবং স্থাপনা নির্মাণের সম্ভবতা যাচাইও করেছে সৌদি এরামকো কোম্পানি। ইয়েমেনের গণমাধ্যম জানায়, এরপর ২০১৮ সালের জুনে আল মাহরা পরিদর্শন করেন সৌদি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আল-জারের।

মুহাম্মদ বলেন, সৌদি প্রকল্পে ইয়েমেনের সরকার আপত্তি জানায়নি। বরং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপসাগরীয় যে কোনো প্রকল্পে সানার স্বার্থ রক্ষা, প্রাদেশিক সার্বভৌমত্ব, সরকারের অধিকার এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা সমুন্নত রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়, আঞ্চলিক এবং জাতিগত বিভেদ এড়িয়ে চলার ওপরও।

ওমানের উদ্বেগ

আল মাহরায় বিদেশিদের উপস্থিতি ওমানের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। কিন্তু ওই অঞ্চলে সৌদি আরবের উপস্থিতি মাসকাটের স্বার্থকে সম্ভাব্য হুমকিতে ফেলেছে।

আল মাহরায় সৌদির উদ্দেশ্যকে প্রতিহত এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় ঐতিহ্য অনুযায়ী স্থানীয়দের মানবিক সহায়তা এবং তাদের ওমানের নাগরিকত্ব দিয়ে যাচ্ছে মাসকাট। যাতে ওমানের নাগরিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরও প্রসার হয় এবং গভীর হয়।

আনাদোলু এজেন্সিকে ইয়েমেনি গবেষক মুতাহার আল সুফারি বলেন, ওমান বিশ্বাস করে আল মাহরায় সৌদি এবং আমিরাতি বাহিনীর উপস্থিতি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

তিনি বলেন, ওমান সমাবেশে, উপজাতি এবং স্থানীয়দের সমর্থন এবং প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে বিষয়টি এখন গোপন কিছু নয়। গেল বছর ওমান আল মাহরিয়া টিভি প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে আল মাহরা এবং সোকোট্রায় সৌদি-আমিরাতি বাহিনীর উপস্থিতির সমালোচনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়।

আল মাহরার প্রদেশে মুহাম্মদ আলি ইয়াসিরকে নতুন গভর্নর নিযুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট আবদে রাব্বু মানসুর হাদি এবং তার সরকার। 

কালশাত জোর দিয়ে বলেন, নিজের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নতুন গভর্নর উপজাতি এবং অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলোকে শক্তিশালী করে প্রাদেশিক নিয়ন্ত্রণ অনুকূলে রাখতে সক্ষম হন।

আল সুফারি বিশ্বাস করেন, ইয়েমেন এবং সৌদি সরকার নতুন গভর্নর নিযুক্ত করার মাধ্যমে ওমানকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে চেয়েছে। যদিও নতুন গভর্নরের সঙ্গে রিয়াদের আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। তবে ইয়েমেন এবং সৌদির সে পদক্ষেপ খুব একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে পারেনি। কারণ ওই অঞ্চলে সৌদি তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। যার কারণে বেড়েছে বিক্ষোভ।

ভবিষ্যত পরিস্থিতি

মুহাম্মদ বলেন, ইয়েমেন যতদিন নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্ব ফিরে না পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল মাহরার নিয়ে উপসাগরীয় অনিশ্চয়তা এবং প্রতিযোগিতা চলবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সৌদি আরব আল মাহরায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের কারণে।’ ওই অঞ্চলে ওমান এবং সৌদি সমর্থিত গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তাক্ত সংঘাত হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তা সত্ত্বেও, কালশাত বলেন, মতামত এবং মতবিরোধ বিভাজন পর্যন্ত পৌঁছাবে না। কারণ আল মাহরারের বাসিন্দারা উপজাতি রীতিনীতিতে বিশ্বাসী। যা তাদের বিভেদ এবং সংঘাত থেকে দূরে রেখে একতাবদ্ধ রাখতে সহায়তা করে। রাজনৈতিক বিষয় তাদের ততটা প্রভাবিত করতে পারে না।

যদিও আল সুফারি বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যত সংঘাত নির্ভর করে সৌদি আরব ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়ায় কি না, ইয়েমেনের সরকার এবং স্থানীয় পক্ষগুলোকে ক্ষমতায়িত করতে জটিল কোনো চুক্তিতে যায় কি না তার উপর। সৌদি এবং ওমানের মধ্যে কিছু সমঝোতা হয়তো রয়েছে, তবে সেগুলোর সফলতা সীমিত এবং অস্থায়ী।

তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে, মাহরি সম্প্রদায়ের সঙ্গে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর বিভাজনও দেখা দিতে পারে। আঞ্চলিক মেরুকরণের কারণে প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়েও বিরোধ হতে পারে। এ অবস্থায় বিভাজন বা বিরোধ আর শান্তিপূর্ণ থাকবে না। এতে যুক্ত হতে পারে ভয়াবহ সংঘর্ষ এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি।

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।

শেয়ার করুন

x
English Version

ইয়েমেনের ভূমি নিয়ে মুখোমুখি সৌদি-ওমান

আপডেট: ০৬:০২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী ২০২১

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকারের কাছ থেকে ইয়েমেনের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় হাউথি বিদ্রোহীরা। দখল-পুনর্দখলকে কেন্দ্রে করে দেশটিতে চলছে গৃহযুদ্ধ। সেই যুদ্ধ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে পশ্চিমাঞ্চলীয় আল মাহরা প্রদেশ।

প্রদেশটির সীমান্ত রয়েছে সৌদি আরব এবং ওমানের সঙ্গে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দু’দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মাহরা। নিয়ন্ত্রণও চাচ্ছে রিয়াদ এবং মাস্কট।

সম্প্রতি মাহরার জনগণের মধ্যে নজিরবিহীন বিভেদ লক্ষ্য করা গেছে। মাহরা এবং সোকোট্রার জেনারেল কাউন্সিলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত দুটি গোষ্ঠীর সমর্থনে আলাদা আলাদা সমাবেশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

কুমসিত উপজাতির শেখ, আবুউদ আবদৌদের বাড়িতে একটি জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ হয়। 

কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। তখন থেকে এর চেয়ারপার্সনের দায়িত্বে রয়েছেন আবদুল্লাহ বিন ইসা আল আফরার। তিনি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করছেন। তাকে বাদ দিয়ে আবদৌদের বাড়িতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়।

নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করে আল আফরার সমর্থনে আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নতৃন নেতৃত্ব ঘোষণাকে কাউন্সিলের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

কাউন্সিলের নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। নানা ধরনের রাজনৈতিক মতানৈক্য রয়েছে মাহরায়। তবে এবারের বিতর্ক এমন সময় হয়েছে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত সাউথার্ন ট্রান্সজিশনাল কাউন্সিলের বাহিনী সাকোট্রার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এতে সহায়তা করেছেন আল আফরার।

আনাদোলু এজেন্সিকে আল মাহরার যুব বিষয়ক প্রাদেশিক ডেপুটি বদর কালশাত বলেন, আল আফরার পদক্ষেপের কারণে কাউন্সিলের অবস্থান স্পষ্ট এবং নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব নিধারণের জন্য সমাবেশ হয়েছে। সেখানে অংশ নিয়েছেন কাউন্সিলের সমর্থকরা।

তেল করিডোর

ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল রফতানির কৌশলগত রুট হরমুজ প্রণালী ঘিরে অস্থিরতার কারণে বিকল্প উপায় বের করার জন্য সৌদি আরবের ওপর অতিরিক্ত চাপ রয়েছে।

২০১৮ সালের আগস্টে ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, সৌদি আরব থেকে আল মাহরার নিশতুন সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত পাইপলাইন তৈরি করতে চায় রিয়াদ। যার মাধ্যমে সরাসরি আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগরে তেল পাঠানো নিশ্চিতের পরিকল্পনা সৌদি প্রশাসনের।

সাবেক ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ পাইপলাইন তৈরি, করিডোর নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের পর নিজেদের বহু পুরনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২০১৪ সালে শুরু হওয়া ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধকে অন্যতম সুযোগ হিসেবে দেখে আসছে রিয়াদ।

আনাদোলু এজেন্সিকে আবাদ স্ট্যাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুহাম্মদ বলেন, আরব সাগরে আল মাহরাকে কৌশলগত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করছে সৌদি আরব। যা ইরান নিয়ন্ত্রিত হরমুজ প্রণালী থেকে অনেক দূরে। একইসঙ্গে তেহরানের উপকূলকে মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালের সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে রিয়াদ।

আল মাহরায় নিজেদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০১৭ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ওই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়ে চলছে সৌদি আরব। আল মাহরার বিভিন্ন স্থাপনা, নিশতুন বন্দর, সারফিত বন্দর, শিহেন বর্ডার ক্রসির এবং আল ঘায়েদা বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রিয়াদ। ওইসব এলাকায় এবং স্থানীয় উপকূল অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সেনা উপস্থিতি বাড়িয়েছে দেশটি।

ওই এলাকায় করিডোর, পাইপলাইন এবং স্থাপনা নির্মাণের সম্ভবতা যাচাইও করেছে সৌদি এরামকো কোম্পানি। ইয়েমেনের গণমাধ্যম জানায়, এরপর ২০১৮ সালের জুনে আল মাহরা পরিদর্শন করেন সৌদি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আল-জারের।

মুহাম্মদ বলেন, সৌদি প্রকল্পে ইয়েমেনের সরকার আপত্তি জানায়নি। বরং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপসাগরীয় যে কোনো প্রকল্পে সানার স্বার্থ রক্ষা, প্রাদেশিক সার্বভৌমত্ব, সরকারের অধিকার এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা সমুন্নত রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়, আঞ্চলিক এবং জাতিগত বিভেদ এড়িয়ে চলার ওপরও।

ওমানের উদ্বেগ

আল মাহরায় বিদেশিদের উপস্থিতি ওমানের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। কিন্তু ওই অঞ্চলে সৌদি আরবের উপস্থিতি মাসকাটের স্বার্থকে সম্ভাব্য হুমকিতে ফেলেছে।

আল মাহরায় সৌদির উদ্দেশ্যকে প্রতিহত এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় ঐতিহ্য অনুযায়ী স্থানীয়দের মানবিক সহায়তা এবং তাদের ওমানের নাগরিকত্ব দিয়ে যাচ্ছে মাসকাট। যাতে ওমানের নাগরিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরও প্রসার হয় এবং গভীর হয়।

আনাদোলু এজেন্সিকে ইয়েমেনি গবেষক মুতাহার আল সুফারি বলেন, ওমান বিশ্বাস করে আল মাহরায় সৌদি এবং আমিরাতি বাহিনীর উপস্থিতি দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

তিনি বলেন, ওমান সমাবেশে, উপজাতি এবং স্থানীয়দের সমর্থন এবং প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে বিষয়টি এখন গোপন কিছু নয়। গেল বছর ওমান আল মাহরিয়া টিভি প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে আল মাহরা এবং সোকোট্রায় সৌদি-আমিরাতি বাহিনীর উপস্থিতির সমালোচনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়।

আল মাহরার প্রদেশে মুহাম্মদ আলি ইয়াসিরকে নতুন গভর্নর নিযুক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট আবদে রাব্বু মানসুর হাদি এবং তার সরকার। 

কালশাত জোর দিয়ে বলেন, নিজের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নতুন গভর্নর উপজাতি এবং অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলোকে শক্তিশালী করে প্রাদেশিক নিয়ন্ত্রণ অনুকূলে রাখতে সক্ষম হন।

আল সুফারি বিশ্বাস করেন, ইয়েমেন এবং সৌদি সরকার নতুন গভর্নর নিযুক্ত করার মাধ্যমে ওমানকে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে চেয়েছে। যদিও নতুন গভর্নরের সঙ্গে রিয়াদের আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। তবে ইয়েমেন এবং সৌদির সে পদক্ষেপ খুব একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে পারেনি। কারণ ওই অঞ্চলে সৌদি তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। যার কারণে বেড়েছে বিক্ষোভ।

ভবিষ্যত পরিস্থিতি

মুহাম্মদ বলেন, ইয়েমেন যতদিন নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্ব ফিরে না পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আল মাহরার নিয়ে উপসাগরীয় অনিশ্চয়তা এবং প্রতিযোগিতা চলবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সৌদি আরব আল মাহরায় শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের কারণে।’ ওই অঞ্চলে ওমান এবং সৌদি সমর্থিত গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তাক্ত সংঘাত হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তা সত্ত্বেও, কালশাত বলেন, মতামত এবং মতবিরোধ বিভাজন পর্যন্ত পৌঁছাবে না। কারণ আল মাহরারের বাসিন্দারা উপজাতি রীতিনীতিতে বিশ্বাসী। যা তাদের বিভেদ এবং সংঘাত থেকে দূরে রেখে একতাবদ্ধ রাখতে সহায়তা করে। রাজনৈতিক বিষয় তাদের ততটা প্রভাবিত করতে পারে না।

যদিও আল সুফারি বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যত সংঘাত নির্ভর করে সৌদি আরব ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়ায় কি না, ইয়েমেনের সরকার এবং স্থানীয় পক্ষগুলোকে ক্ষমতায়িত করতে জটিল কোনো চুক্তিতে যায় কি না তার উপর। সৌদি এবং ওমানের মধ্যে কিছু সমঝোতা হয়তো রয়েছে, তবে সেগুলোর সফলতা সীমিত এবং অস্থায়ী।

তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে, মাহরি সম্প্রদায়ের সঙ্গে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোর বিভাজনও দেখা দিতে পারে। আঞ্চলিক মেরুকরণের কারণে প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়েও বিরোধ হতে পারে। এ অবস্থায় বিভাজন বা বিরোধ আর শান্তিপূর্ণ থাকবে না। এতে যুক্ত হতে পারে ভয়াবহ সংঘর্ষ এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি।

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি।