জমির জাল দলিলসহ প্রসপেক্টাসে বানোয়াট তথ্য ও মিথ্যা বিবৃতি প্রদান
এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও শাহজালাল ইক্যুইটিকে বিশাল অঙ্কের জরিমানা
- আপডেট: ০৪:৪০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৩
- / ১১০৫৩ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় থাকা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের প্রত্যেক পরিচালককে ৫০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়াও প্রসপেক্টাসে মিথ্যা বিবৃতি দেয়ায় কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার শাহজালাল ইক্যুইটিকে ৫০ লাখ, কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিবকে ২৫ লাখ টাকা করে এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আরও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মুলত, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে জমির জাল দলিল, মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদন এবং শেয়ারের অর্থ জমার দেওয়ার মিথ্যা বিবৃতির প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি। আর এ কারণেই কমিশন কোম্পানিটির এমডিসহ প্রত্যেক পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার, সিএফও ও কোম্পানি সচিবকে মোট ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এছাড়া কোম্পানিটির নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকেও সতর্ক করে দিয়েছে কমিশন।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
এ প্রসঙ্গে জানতে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড’র কোম্পানি সচিব ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিজনেস জার্নালকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি শুনেছি, কিন্তু বিএসইসি থেকে এ সংক্রান্ত কোন অর্ডার বা চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে, কমিশন বুক-বিল্ডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আইপিওর মাধ্যমে ৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজকে অনুমতি দেয়া হয়। এতে শেয়ারের কাট-অফ মূল্য নির্ধারণের জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারীরা ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করে।
এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বিএসইসির শর্ত অনুযায়ী, সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা প্রতিটি শেয়ার ২০ টাকায় কিনতে পারবেন।
তবে, পাবলিক সাবস্ক্রিপশন শুরুর একদিন আগে অভিযোগের ভিত্তিতে বিএসইসি আইপিও প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয় এবং অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি কমিশনে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
বিএসইসির তদন্তের আগে, ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিও নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
এফআরসি অভিযোগ করেছিল, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ শেয়ারের বেশি মূল্য পাওয়ার জন্য সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি করেছে। কাউন্সিল মে মাসে বিএসইসির কাছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রসপেক্টাস এবং নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী সম্পর্কে একটি উপস্থাপনা প্রদান করে।
আরও পড়ুন: বিকালে আসছে ১৭ কোম্পানির ডিভিডেন্ড ও ইপিএস
এর আগে অন্যের সম্পত্তিকে নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে দাখিল করা ও সম্পত্তির অবিশ্বাস্য অতিমূল্যায়নের অভিযোগে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের আইপিওর অনুমোদন স্থগিত করা হয় শেয়ার ছাড়ার ঠিক আগের দিন। গত বছরের ৩১শে আগষ্ট কমিশন সভা থেকে কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছেড়ে টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। ১৬ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি লটারীর মাধ্যমে শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন ছিলো। প্রাথমিক শেয়ার বাজার থেকে ৯৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করার কথা ছিলো। কিন্তু কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অন্যের সম্পত্তি নিজের বলে দাখিল করা ও সম্পত্তির অবিশ্বাস্য অতিমূল্যায়নের অভিযোগ উঠে । এ অভিযোগের প্রমাণপত্র সহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় একটি জাতীয় দৈনিকে। এর পরপরই বিএসইসি আইপিও প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয় এই বছরের ১৫ জানুয়ারি।
যে অভিযোগের কারণে আইপিওর প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কারওয়ান বাজার মৌজাস্থিত ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ সম্পত্তিটির মালিক রাজধানীর ১১/৮/সি, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট নিবাসী একেএম খোরশেদ আলমের সম্পত্তির ওপর রয়েছে ৮ তলা ভবন। এটি বন্ধক রেখে অগ্রণী ব্যাংক আমিনকোর্ট শাখা থেকে ঋণ নিয়েছেন তিনি। যে দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তিটি অগ্রণী ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখেছেন সেটির নম্বর-৩৩৫২। দলিলটি সম্পাদিত হয়েছে ২০১৩ সালে তেজগাঁও সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। তৎকালিন সাব-রেজিস্ট্রার এসএম সোহেল রানা মিলনের স্বাক্ষরে দলিলটির নিবন্ধন হয়। দলিলটি ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ হওয়ায় সম্পত্তির মূল্যমান ছিল অনির্ধারিত। এই দলিলের সম্পত্তিই ‘নিজের’ দাবি করে আইপিওর অনুমোদন পায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড নামের ওষুধ কোম্পানি।
কোম্পানির প্রসপেক্টাস অনুসারে, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২১-২১ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরে এর সম্পদের মূল্য ১১৯ শতাংশ বেড়েছে। অধিকন্তু, ২০২১ অর্থবছরে সম্পদ মূল্য ৭৩ শতাংশ বেশি দেখিয়েছে।
এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৮ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এটি প্রাথমিকভাবে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, ক্রিম, চোখের পণ্য, ইনজেকশন সহ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনের সাথে জড়িত।
বিজনেস জার্নালি/ঢাকা/এসআর