২০২৫–২৬ অর্থবছর
করছাঁট-করছাঁদের বাজেটে পুঁজিবাজারে খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার!

- আপডেট: ০৬:৫৭:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / ১০৭১২ বার দেখা হয়েছে
আসছে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর খাতে আনতে যাচ্ছে নজিরবিহীন পরিবর্তন। ব্যক্তিগত আয়করে যেমন ছাড়ের ছোঁয়া রয়েছে, তেমনি করদাতাদের করজালের আওতায় আনতেও রয়েছে বেশ কিছু নতুন প্রস্তাব।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
তবে সবচেয়ে আলোচিত দিক হচ্ছে- এই বাজেট কতোটা পুঁজিবাজারবান্ধব? কর কাঠামোয় পরিবর্তনের ছায়া পড়েছে ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং বিশেষত পুঁজিবাজারেও। ফলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে- এই বাজেট কি পুঁজিবাজারকে গতি দেবে, না কি এতে ঝুঁকিও বাড়বে?
বাজেট প্রস্তাবনায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো- মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করা। দীর্ঘদিনের দাবির পর এমন ছাড় এই খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে গতি এনে দেবে। এটি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২২.৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকলেও, কর ছাড় পেতে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। আগে যেখানে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন, টিআইএনসহ কর্মচারী থাকা ইত্যাদি ছিল বাধ্যতামূলক, এবার শুধু আয় ব্যাংকের মাধ্যমে হলেই ছাড় মিলবে। এতে আরও কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে, যা বাজার সম্প্রসারণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বাজেটে ব্রোকারেজ হাউজের উৎসে কর কমিয়ে মাত্র ০.০৩ শতাংশ করায় বিনিয়োগকারীদের ট্রেডিং খরচ কমবে, যার ফলে বাজারে তারল্য বাড়তে পারে। একইসঙ্গে রিটার্ন দাখিলের শর্ত শিথিল করে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ সেবা পাওয়ার পথ খুলে দেওয়া হয়েছে- যেমন ক্রেডিট কার্ড, গ্যাস সংযোগ, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি। কর নিবন্ধন থাকলেই এসব সেবা মিলবে, যা কর-ভীত নতুন বিনিয়োগকারীদের বাজারে টানতে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন: এনআরবি ব্যাংকের ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা
তবে বাজেটে কিছু চ্যালেঞ্জিং দিকও রয়েছে। যেমন, ১৫২টি পণ্যে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করায় আমদানিনির্ভর উৎপাদনকারী কোম্পানির খরচ বাড়বে। এর প্রভাব কোম্পানির মুনাফা ও স্টক ভ্যালুয়েশনে নেতিবাচক হতে পারে। এছাড়া সিগারেট কোম্পানির উৎসে কর বাড়ানোয় তালিকাভুক্ত তামাক কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা কমে যেতে পারে। যদিও জনস্বার্থে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
বাজেটে আরও কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের করমুক্ত ব্যয় ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো, পারকুইজিট সীমা দ্বিগুণ করা এবং পারিবারিক দানের উপর কর মওকুফ করায়, মধ্যবিত্ত পেশাজীবীদের কর পরিশোধের মানসিকতা বাড়বে এবং বাড়তি অর্থ বাজারে প্রবাহিত হতে পারে। নতুন করদাতাদের জন্য ন্যূণতম কর মাত্র ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করাও একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ, যা তরুণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারমুখী করতে পারে।
সবমিলিয়ে বলা যায়, প্রস্তাবিত বাজেটটিকে পুঁজিবাজারবান্ধব বলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা ও দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তাবনা বাস্তব রূপ না পেলে সম্ভাবনাগুলো শুধু কাগজেই থেকে যাবে।
বাজেটের ভাষ্যে পুঁজিবাজারের জন্য সুবাতাস এলেও, সেটি বাস্তবে কতটা স্বস্তিদায়ক হবে তা নির্ভর করবে পরবর্তী কয়েক মাসের বাস্তব পদক্ষেপের ওপর। এখন সময় গভীর নজরদারির। কারণ, সম্ভাবনার দরজা খুললেও সেই পথে হাঁটতে হলে প্রয়োজন স্থিতিশীল নীতিমালা, দ্রুত সিদ্ধান্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি আস্থা।
বিজনেসজার্নাল/এইচকে