কর সংস্কার যৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় প্রতিবাদ দুঃখজনক

- আপডেট: ০৪:২২:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / ১০৩০২ বার দেখা হয়েছে
ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) বিলুপ্ত করে করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনা দুই ভাগে বিভক্ত করায় যে প্রতিবাদ হচ্ছে তা না করাই ভালো বলে মন্তব্য করেছেন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেছেন, যৌক্তিক দাবি থাকলে তা সরকারের কাছে পেশ করা যেতে পারে, তবে এ ধরনের প্রতিবাদ দুর্নীতির উদ্দেশ্যে হলে তা হবে দুঃখজনক।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
আজ শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত আইএমএফের ঋণ ছাড় হওয়াতে উন্নয়ন সহযোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে— শীর্ষক ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার এই সংস্কার অর্থনীতিতে সুফল দেবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এই ধরনের রাজস্ব কাঠামো রয়েছে। বিগত সরকার আমাদের মাথায় ১০৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ রেখে গেছে। বর্তমানে আমরা প্রতি বছর গড়ে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করছি। আগামীতে এ ঋণ পরিশোধের হার আরও বাড়বে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করায় আমরা আশা করি টাকার মূল্য হারাবে না। তবে মাফিয়া চক্র যেন ডলার মজুদ করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে দেশে মাফিয়া ইকোনমির শাসন ছিল। এখন আশা করি তার অবসান হয়েছে। চোখের সামনে সবচেয়ে ভালো ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক লুষ্ঠিত হয়েছে। চোর-ডাকাতরা বৈদেশিক মুদ্রায় এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গোটা জাতি বেকায়দায় আছে। তবে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা চ্যালেঞ্জের হবে।
ছায়া সংসদে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেছেন, প্রতীকী অর্থে আইএমএফের ঋণ একটি সার্টিফিকেটের মতো কাজ করে। এটি পেলে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সহায়তাসহ বিভিন্ন ঋণে আগ্রহী হয়। তবে শুধু আইএমএফের শর্ত মানলেই ঋণ পাওয়া যাবে— এমন নয়। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার না থাকলে উন্নয়ন সহযোগীরা আগ্রহ হারাতে পারে। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে যেসব পরামর্শ দেশ ও জনস্বার্থের পরিপন্থি, তা গ্রহণ করা উচিত নয়। বিশেষ করে জনকল্যাণমূলক ভর্তুকি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে সতর্কতা জরুরি।
আরও পড়ুন: ২১ মে থেকে ফের চালু হচ্ছে নভোএয়ার
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময় আইএমএফের ঋণ নেওয়ার পেছনে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছিল। সে সময় দেশের সম্পদ লুট করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে কিছু সুবিধাভোগী আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুরে বাড়ি-গাড়ি ও ব্যবসা গড়ে তোলে। সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে—ওভার ইনভয়েসিং করে বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দেশে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সফটওয়্যার ও আইটি সেবা বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয় এবং ক্যাপাসিটি চার্জের নামে শত শত কোটি টাকা কোনো বিদ্যুৎ না পেয়েই বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে।
ছায়া সংসদে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ইকবাল আহসান, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহ ও সাংবাদিক আরিফুজ্জামান মামুন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
ঢাকা/এসএইচ