০৮:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ বন্ধ হচ্ছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:২৭:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১০২৮৫ বার দেখা হয়েছে

খেলাপি হলেও বিশেষ বিবেচনায় নিয়মিত দেখানোর যে সুযোগ ছিল, তা অবশেষে বন্ধ হচ্ছে। আগামী এপ্রিল থেকে চলতি বা মেয়াদি সব ঋণের কিস্তি পরিশোধের তারিখ পার হলেই তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হবে। ২০১৯ সাল থেকে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে কিস্তি পরিশোধের তারিখের ছয় মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিবেচনা হয়ে আসছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

নতুন নিয়মে তিন থেকে ছয় মাস কিস্তি না দিলেই খেলাপি ঋণের প্রথম পর্যায় তথা ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড’ বিবেচিত হবে, যা বর্তমানে ৯ মাস পর্যন্ত। এ ছাড়া সব ধরনের ঋণের প্রভিশন সংরক্ষণের হার অভিন্ন করা হচ্ছে। গতকাল এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ঋণ ছয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই তা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আইনে কোনো পরিবর্তন না এনে ২০১৯ সালের এপ্রিলে এক নির্দেশনার মাধ্যমে কৌশলে খেলাপি কম দেখানোর সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পরামর্শে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, মেয়াদি ঋণ বকেয়া হিসাবের ক্ষেত্রে বাড়তি ছয় মাস সময় পাবে। এর মানে, কিস্তি পরিশোধের শেষ তারিখের ছয় মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গণনা করা হবে। এই নিয়মে প্রকৃতপক্ষে এক বছর পর খেলাপি হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক থেকে তিন মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গণনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আগের মতো নির্দিষ্ট আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে গেলেই স্থগিতাদেশ পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঢালাওভাবে কোনো বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে না। নিয়ম কঠোর করার কারণে খেলাপি ঋণ এক লাফে অনেক বেড়ে গত সেপ্টেম্বর শেষে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে। গত ডিসেম্বরে যেখানে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: টিসিবির পণ্য পাবে ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক: অর্থ উপদেষ্টা

আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয়। যত বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, ততবেশি প্রভিশন রাখার নিয়ম রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন শিথিলতা ছিল। আর ঋণ বিতরণের সময়ও প্রভিশন রাখতে হয়, যা সাধারণ প্রভিশন হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ প্রভিশন রাখার বিধান আছে। আগামী এপ্রিল থেকে সব ধরনের নিয়মিত ঋণের প্রভিশন রাখতে হবে ১ শতাংশ। ভিন্ন ভিন্ন প্রভিশনিংয়ের কারণে এক খাতের ঋণ বিতরণ করে আরেক খাতে দেখানোর নজির রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণ বকেয়া হওয়ার তিন মাস আগ পর্যন্ত শ্রেণীকৃত হওয়ার আগের অবস্থা তথা স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট (এসএমএ) হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশন রাখতে হবে এখনকার মতোই ৫ শতাংশ। এ ছাড়া তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে এখন থেকে একটি ঋণ সাব-স্ট্যান্ডার্ড বিবেচিত হবে। এ ধরনের ঋণে প্রভিশন রাখতে হবে ২০ শতাংশ। ছয় মাসের পর থেকে ১২ বছর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ঋণে ৫০ শতাংশ। ১২ মাসের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের ঋণে প্রভিশন রাখতে হবে শতভাগ। ব্যাংকগুলোর অর্জিত মুনাফা বা উদ্যোক্তাদের জোগান দেওয়া মূলধন থেকে এই প্রভিশন রাখতে হয়। ঋণ আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত এই প্রভিশন আয় খাতে নেওয়া যায় না।

ঢাকা/এসএইচ

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x

খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ বন্ধ হচ্ছে

আপডেট: ০১:২৭:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

খেলাপি হলেও বিশেষ বিবেচনায় নিয়মিত দেখানোর যে সুযোগ ছিল, তা অবশেষে বন্ধ হচ্ছে। আগামী এপ্রিল থেকে চলতি বা মেয়াদি সব ঋণের কিস্তি পরিশোধের তারিখ পার হলেই তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হবে। ২০১৯ সাল থেকে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে কিস্তি পরিশোধের তারিখের ছয় মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিবেচনা হয়ে আসছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

নতুন নিয়মে তিন থেকে ছয় মাস কিস্তি না দিলেই খেলাপি ঋণের প্রথম পর্যায় তথা ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড’ বিবেচিত হবে, যা বর্তমানে ৯ মাস পর্যন্ত। এ ছাড়া সব ধরনের ঋণের প্রভিশন সংরক্ষণের হার অভিন্ন করা হচ্ছে। গতকাল এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ঋণ ছয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই তা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আইনে কোনো পরিবর্তন না এনে ২০১৯ সালের এপ্রিলে এক নির্দেশনার মাধ্যমে কৌশলে খেলাপি কম দেখানোর সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পরামর্শে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, মেয়াদি ঋণ বকেয়া হিসাবের ক্ষেত্রে বাড়তি ছয় মাস সময় পাবে। এর মানে, কিস্তি পরিশোধের শেষ তারিখের ছয় মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গণনা করা হবে। এই নিয়মে প্রকৃতপক্ষে এক বছর পর খেলাপি হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক থেকে তিন মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গণনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আগের মতো নির্দিষ্ট আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে গেলেই স্থগিতাদেশ পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঢালাওভাবে কোনো বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে না। নিয়ম কঠোর করার কারণে খেলাপি ঋণ এক লাফে অনেক বেড়ে গত সেপ্টেম্বর শেষে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে। গত ডিসেম্বরে যেখানে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: টিসিবির পণ্য পাবে ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক: অর্থ উপদেষ্টা

আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয়। যত বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, ততবেশি প্রভিশন রাখার নিয়ম রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন শিথিলতা ছিল। আর ঋণ বিতরণের সময়ও প্রভিশন রাখতে হয়, যা সাধারণ প্রভিশন হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ প্রভিশন রাখার বিধান আছে। আগামী এপ্রিল থেকে সব ধরনের নিয়মিত ঋণের প্রভিশন রাখতে হবে ১ শতাংশ। ভিন্ন ভিন্ন প্রভিশনিংয়ের কারণে এক খাতের ঋণ বিতরণ করে আরেক খাতে দেখানোর নজির রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণ বকেয়া হওয়ার তিন মাস আগ পর্যন্ত শ্রেণীকৃত হওয়ার আগের অবস্থা তথা স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট (এসএমএ) হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশন রাখতে হবে এখনকার মতোই ৫ শতাংশ। এ ছাড়া তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে এখন থেকে একটি ঋণ সাব-স্ট্যান্ডার্ড বিবেচিত হবে। এ ধরনের ঋণে প্রভিশন রাখতে হবে ২০ শতাংশ। ছয় মাসের পর থেকে ১২ বছর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ঋণে ৫০ শতাংশ। ১২ মাসের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের ঋণে প্রভিশন রাখতে হবে শতভাগ। ব্যাংকগুলোর অর্জিত মুনাফা বা উদ্যোক্তাদের জোগান দেওয়া মূলধন থেকে এই প্রভিশন রাখতে হয়। ঋণ আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত এই প্রভিশন আয় খাতে নেওয়া যায় না।

ঢাকা/এসএইচ