০১:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে সম্মত বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:০০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২২৭১৯ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে সংকটে পড়া ব্যাংক তুলনামূলক ভালো ব্যাংক থেকে ধার পেতে যাচ্ছে। আমানত বা প্লেসমেন্ট হিসেবে দুর্বল ব্যাংকে এ অর্থ রাখবে ভালো ব্যাংক। এর জন্য প্রথমে দুর্বল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত, পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। চুক্তিপত্রের বিপরীতে এসব ব্যাংক নির্ধারিত মেয়াদে বিশেষ ধার পাবে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

প্রাথমিকভাবে চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মতি জানিয়ে পাঁচ ব্যাংককে আজ বৃহস্পতিবার চিঠি দেওয়া হবে। এগুলো হলো– বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এতদিন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত বিশেষ ধার চেয়ে আট ব্যাংক চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এগুলোসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা। এ অবস্থায় সাময়িক সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর দুর্বল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোট নিয়ে রাখবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো ব্যাংক সংকটে পড়লে সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ধার দেওয়া মানে সরাসরি টাকা ছাপানোর মতো। এতে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়ে। এমনিতেই এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা না দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করছে। এর মানে, বাজারের টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি প্রভাব পড়বে না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মানে হলো, কোনো কারণে এসব ব্যাংক ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই টাকা দেবে।

আরও পড়ুন: এখনও অমিমাংসিত ৯৬’র শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মামলা!

জানা যায়, নগদ টাকার সংকট মেটাতে বিশেষ ধার চেয়ে আরও আবেদন করেছে– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক। গত ৩ আগস্ট এক্সিম ব্যাংককে তিন মাসের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বিশেষ ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাড়ে ১০ শতাংশ সুদে ওই অর্থ দেওয়া হয়। ব্যাংককে এখনই টাকা দেওয়া হচ্ছে না। আর ইসলামী ব্যাংকের নগদ প্রবাহ ভালো থাকায় আপাতত বিশেষ ধার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেশ আগ থেকে সমস্যাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে ১১ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে, এগুলোসহ কয়েকটি থেকে টাকা তোলার ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে আমানতকারীদের অনেকে টাকা নিয়ে ভালো ব্যাংকে জমা করছেন। এ কারণে কিছু ব্যাংক চরম সংকটে পড়ছে। আবার কিছু ব্যাংকে প্রচুর উদ্বৃত্ত রয়েছে। মূলত উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংকই সংকটে পড়া ব্যাংককে টাকার ব্যবস্থা করবে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ৫ আগস্ট পতনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। এ কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। আবার অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে নানামুখী গুজবের কারণে মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছিল। তবে এখন আবার ব্যাংকে টাকা জমার পরিমাণ বাড়ছে।

প্রচলনে থাকা টাকা তথা ‘নোটস ইন সার্কুলেশন’ কমে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৩ কোটিতে নেমেছে। সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে গত ১৮ আগস্ট ৩ লাখ ২২ হাজার ২৭১ কোটিতে উঠেছিল। এর মানে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফিরেছে নিট ৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে সম্মত বাংলাদেশ ব্যাংক

আপডেট: ০১:০০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে সংকটে পড়া ব্যাংক তুলনামূলক ভালো ব্যাংক থেকে ধার পেতে যাচ্ছে। আমানত বা প্লেসমেন্ট হিসেবে দুর্বল ব্যাংকে এ অর্থ রাখবে ভালো ব্যাংক। এর জন্য প্রথমে দুর্বল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত, পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। চুক্তিপত্রের বিপরীতে এসব ব্যাংক নির্ধারিত মেয়াদে বিশেষ ধার পাবে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

প্রাথমিকভাবে চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মতি জানিয়ে পাঁচ ব্যাংককে আজ বৃহস্পতিবার চিঠি দেওয়া হবে। এগুলো হলো– বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এতদিন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত বিশেষ ধার চেয়ে আট ব্যাংক চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এগুলোসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা। এ অবস্থায় সাময়িক সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর দুর্বল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোট নিয়ে রাখবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো ব্যাংক সংকটে পড়লে সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ধার দেওয়া মানে সরাসরি টাকা ছাপানোর মতো। এতে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়ে। এমনিতেই এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা না দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করছে। এর মানে, বাজারের টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি প্রভাব পড়বে না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মানে হলো, কোনো কারণে এসব ব্যাংক ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই টাকা দেবে।

আরও পড়ুন: এখনও অমিমাংসিত ৯৬’র শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মামলা!

জানা যায়, নগদ টাকার সংকট মেটাতে বিশেষ ধার চেয়ে আরও আবেদন করেছে– ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক। গত ৩ আগস্ট এক্সিম ব্যাংককে তিন মাসের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বিশেষ ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাড়ে ১০ শতাংশ সুদে ওই অর্থ দেওয়া হয়। ব্যাংককে এখনই টাকা দেওয়া হচ্ছে না। আর ইসলামী ব্যাংকের নগদ প্রবাহ ভালো থাকায় আপাতত বিশেষ ধার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেশ আগ থেকে সমস্যাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে ১১ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে, এগুলোসহ কয়েকটি থেকে টাকা তোলার ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে আমানতকারীদের অনেকে টাকা নিয়ে ভালো ব্যাংকে জমা করছেন। এ কারণে কিছু ব্যাংক চরম সংকটে পড়ছে। আবার কিছু ব্যাংকে প্রচুর উদ্বৃত্ত রয়েছে। মূলত উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংকই সংকটে পড়া ব্যাংককে টাকার ব্যবস্থা করবে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ৫ আগস্ট পতনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। এ কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। আবার অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে নানামুখী গুজবের কারণে মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছিল। তবে এখন আবার ব্যাংকে টাকা জমার পরিমাণ বাড়ছে।

প্রচলনে থাকা টাকা তথা ‘নোটস ইন সার্কুলেশন’ কমে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৩ কোটিতে নেমেছে। সরকার পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে গত ১৮ আগস্ট ৩ লাখ ২২ হাজার ২৭১ কোটিতে উঠেছিল। এর মানে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফিরেছে নিট ৭ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।

ঢাকা/এসএইচ