দরপতনের বৃত্তে পুঁজিবাজার: অনিয়ম তদন্তে ব্যস্ত বিএসইসি
- আপডেট: ০৬:২৪:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১১৬৩৫ বার দেখা হয়েছে
ফের টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর সোমবারও কমেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচকের মান। পাশাপাশি উভয় বাজারেই কমেছে লেনদেন। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস শেষে এ তথ্য জানা যায়।
টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হচ্ছে। বিনিয়োগকারদের অভিযোগ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নবগঠিত কমিশন বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে কমিশন গঠনের শুরুটা ভালো হলেও দিন দিন তার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বাজারের কারসাজি ও অনিয়ম দূরীকরণে বিএসইসি ব্যবস্থা নেবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিএসইসির এটাও বুঝতে হবে, এ বাজার অনেক স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। দেশের অন্য যেকোন খাতের সঙ্গে তালমিলিয়ে সমান গতিতে এখানে পদক্ষেপ নেয়া যায় না। আর তাই এখানে হাক-ডাক দিয়ে প্রতিদিনই তদন্ত কমিটি ঘোষণার মানে নেই। বিএসইসির বুঝা উচিত, তদন্তের এসব ঘোষণা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিণতিতে আমরা সব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাচ্ছি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শেয়ারবাজারের বড় বিনিয়োগকারীরা সাইডলাইনে বসে রয়েছেন। যেহেতু শেয়ারবাজারের অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত কার্যক্রম চলছে, তাই সবাই যার যার পূর্বের হিসেব নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। কারণ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রায় সবাই কম বেশি কোন না কোন শেয়ার দর উঠা-নামায় ভূমিকা রাখে। বিএসইসির তদন্ত রিপোর্টে আবার কেউ ফেঁসে যায় কিনা সেই আতঙ্কে শেয়ার কেনা-বেচা থেকে দূরে রয়েছে।
এছাড়া যারা গেল ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা কমানোর পেছনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল, তারা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যেতে চাইছে। পরিণতিতে দিনশেষে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে একাধিক বিনিয়োগকারী জানান, পুঁজিবাজারের টানা দরপতন কিছুতেই থামছে না। দিন যতই যাচ্ছে পতনের মাত্রা তত বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বেড়েই চলেছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েক দিন পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন দেখা গেলেও এখন টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। ফলে বাজার নিয়ে নতুন করে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
আরও পড়ুন: সালমান এফ রহমান ও এস আলমের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে বিএসইসি
তারা বলছেন, একদিকে মূলধন হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা তার ওপর সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর ফোর্সড সেল। পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে এখন তাদের ঋণের টাকা তুলে নিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোর্সড সেল বা জোরপূবক বিক্রি করে দিচ্ছে। কোনো কোনো হাউজ আবার বিনিয়োগকারীদের না জানিয়েই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে মন্দা বাজারে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ পরিশোধের তাগিদ দিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ফলে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ডিএসই বিএসইসি’র নিরব আচরনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
সাইদুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এ কেমন পুঁজিবাজার। দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি ততই হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন ভুমিকা দেখছি না। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের নতুন করে ২৫-৩০ শতাংশ পুঁজি উধাও হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের জন্য পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে বিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বিনিয়োগকারীদের এ অভিযোগকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন।
এসব বিষয়ে মুঠোফোনে আলাপকালে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র ফারহানা ফারুকী বিজনেস জার্নালকে বলেন, বাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপটটা সবারই জানা আছে। এই মুহুর্তে বাজারে বিনিযোগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশন দায়িত্ব্য নেয়ার পর থেকে সে লক্ষ্যেই দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরই বিনিয়োগকারীরা এর সুফল পাবেন।
আজ ডিএসইতে সোমবার কমেছে সব কয়টি সূচকের মান। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪৯ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট ও ডিএস-৩০ সূচক ৭ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে যথাক্রমে ৫ হাজার ৬২৯ দশমিক ৫৪ পয়েন্টে ও ২ হাজার ৯২ দশমিক ৫১ পয়েন্টে। আর ডিএসইএস সূচক ৬ দশমিক ২৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২১৫ দশমিক ১০ পয়েন্টে।
ডিএসইতে এদিন কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। এদিন লেনদেন হয়েছে ৬২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার। আর গত কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেন কমেছে ৫৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকার।
আরও পড়ুন: ডিএসই’র পরিচালক পদে থাকতে চান না মাজেদুর রহমান
লেনদেনের শীর্ষে ছিল লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড। এছাড়া অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড, তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইস-ক্রিম পিএলসি, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি ও দ্য ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পিএলসি ছিল শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায়।
এছাড়া সোমবার ডিএসইতে ৩৯৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৬৭টি কোম্পানির, কমেছে ৩০৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
অন্যদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার সিএসইতে সোমবার সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭২ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট ও সিএসসিএক্স সূচক ১০৩ দশমিক ২৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৬ হাজার ৬৪ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে ও ৯ হাজার ৬৮৪ দশমিক ১৯ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসআই সূচক ১২ দশমিক ০২ পয়েন্ট ও সিএসই-৫০ সূচক ৯ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১ হাজার ২১ দশমিক ০৯ পয়েন্টে ও ১ হাজার ১৯০ দশমিক ২৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর সিএসই-৩০ সূচক ৭০ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩ হাজার ৩৪ দশমিক ০৯ পয়েন্টে।
সিএসইতে এদিন কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার। আর এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেন কমেছে ২ লাখ টাকা। আজ ২২৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯টির, কমেছে ১৭০টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি কোম্পানির শেয়ারদর।
ঢাকা/এইচকেজনি