০৭:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিউজপ্রিন্ট ও কালি আমদানিতে শুল্ক কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:০২:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১
  • / ৪১৬৬ বার দেখা হয়েছে

নিউজপ্রিন্ট ও কালি আমদানিতে শুল্ক কর প্রত্যাহার চেয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। একইসঙ্গে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) থেকে অব্যাহতি, করপোরেট করহার কমানো, সরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন বিলের বিপরীতে ভ্যাটের চালান দেওয়া নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। নোয়াবের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সংবাদপত্রশিল্পে জরুরিভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রয়োজন।

বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় নোয়াবের পক্ষে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ. কে. আজাদ। জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় অংশ নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বক্তব্য দেন। দু’জনই নোয়াবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

একই সময়ে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সও (অ্যাটকো) প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়। অ্যাটকোর সিনিয়র সহসভাপতি ও ৭১ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বক্তব্য দেন। এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এতে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, সংবাদপত্রের কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট ও কালি আমদানিতে ভ্যাট ও অন্যান্য কর মিলিয়ে ৩০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এরমধ্যে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ আগাম আয়কর (এআইটি) ও আগাম কর (এটি) রয়েছে। অথচ অন্যান্য শিল্পখাত শূন্য শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পায়। করোনার কারণে সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা কমে গেছে। বিজ্ঞাপন আয়ও অনেক কমেছে।

তিনি জানান, মান খারাপ হওয়ায় দেশীয় কাগজ সংবাদপত্র ব্যবহার করতে পারে না। আবার দামও বেশি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়েছে। এরকম অবস্থায় সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার জরুরি।

তিনি বলেন, এ খাতে করপোরেট করহারও অনেক বেশি। টেপটাইলসহ অন্যান্য খাতে করপোরেট কর হার ১৫ শতাংশের কম। করোনার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি করপোরেট করহার কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে দেখলে, শিল্প হিসেবে সহানুভূতিশীল দৃষ্টিও দিতে হবে। এটি জনমানুষ ঘনিষ্ঠ সেবাধর্মী শিল্প। তিনি বলেন, নিউজপ্রিন্ট কাগজ ও কালি সংবাদপত্রের কাঁচামাল। অন্যান্য শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কম হলেও সংবাদপত্রকে কাঁচামাল আমদানিতে ৩০ শতাংশের মতো শুল্ক দিতে হয়। অন্যদিকে করপোরেট কর দিতে হয় ৩৫ শতাংশ। করোনার কারণে সংবাদপত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয় একেবারেই কমে গেছে। এই সময়ে টিকে থাকতে সহযোগিতা প্রয়োজন।

বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, সরকারের বিজ্ঞাপন কম। যেসব বিজ্ঞাপন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে, সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট কেটে রাখে। কিন্তু ভ্যাটের চালান দেয় না। এতে সংবাদপত্রের ওপর ভয়ংকর চাপ তৈরি হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের চালান দেওয়া নিশ্চিত হলে সংবাদপত্রের চাপ কমবে। এছাড়া বিজ্ঞাপনে অগ্রিম আয়কর কাটা হয় ৪ শতাংশ। তিনি করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এই অগ্রিম আয়কর থেকে অন্তত এক বছরের জন্য অব্যাহতি চান।

এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, সরকারি সংস্থা কেন ভ্যাটের চালান দেয় না সে বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
অ্যাটকোর সিনিয়র সহসভাপতি ও ৭১ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ৭৫ ভাগ বিজ্ঞাপন পাচার হয়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিদেশের টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এতে কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য পূরণ হলেও দেশের টেলিভিশন কোম্পানি ও রাজস্ব বিভাগ অর্থ পাচ্ছে না। বড় ধরনের জালিয়াতি হচ্ছে। এনবিআরের এ বিষয়টি দেখা উচিত।

বিজনেসজার্নাল/এসএ

শেয়ার করুন

x
English Version

নিউজপ্রিন্ট ও কালি আমদানিতে শুল্ক কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব

আপডেট: ১১:০২:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১

নিউজপ্রিন্ট ও কালি আমদানিতে শুল্ক কর প্রত্যাহার চেয়েছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। একইসঙ্গে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) থেকে অব্যাহতি, করপোরেট করহার কমানো, সরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন বিলের বিপরীতে ভ্যাটের চালান দেওয়া নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। নোয়াবের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সংবাদপত্রশিল্পে জরুরিভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রয়োজন।

বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় নোয়াবের পক্ষে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ. কে. আজাদ। জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় অংশ নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বক্তব্য দেন। দু’জনই নোয়াবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

একই সময়ে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সও (অ্যাটকো) প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়। অ্যাটকোর সিনিয়র সহসভাপতি ও ৭১ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বক্তব্য দেন। এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এতে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, সংবাদপত্রের কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট ও কালি আমদানিতে ভ্যাট ও অন্যান্য কর মিলিয়ে ৩০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এরমধ্যে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ আগাম আয়কর (এআইটি) ও আগাম কর (এটি) রয়েছে। অথচ অন্যান্য শিল্পখাত শূন্য শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পায়। করোনার কারণে সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা কমে গেছে। বিজ্ঞাপন আয়ও অনেক কমেছে।

তিনি জানান, মান খারাপ হওয়ায় দেশীয় কাগজ সংবাদপত্র ব্যবহার করতে পারে না। আবার দামও বেশি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়েছে। এরকম অবস্থায় সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার জরুরি।

তিনি বলেন, এ খাতে করপোরেট করহারও অনেক বেশি। টেপটাইলসহ অন্যান্য খাতে করপোরেট কর হার ১৫ শতাংশের কম। করোনার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি করপোরেট করহার কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে দেখলে, শিল্প হিসেবে সহানুভূতিশীল দৃষ্টিও দিতে হবে। এটি জনমানুষ ঘনিষ্ঠ সেবাধর্মী শিল্প। তিনি বলেন, নিউজপ্রিন্ট কাগজ ও কালি সংবাদপত্রের কাঁচামাল। অন্যান্য শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কম হলেও সংবাদপত্রকে কাঁচামাল আমদানিতে ৩০ শতাংশের মতো শুল্ক দিতে হয়। অন্যদিকে করপোরেট কর দিতে হয় ৩৫ শতাংশ। করোনার কারণে সংবাদপত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয় একেবারেই কমে গেছে। এই সময়ে টিকে থাকতে সহযোগিতা প্রয়োজন।

বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, সরকারের বিজ্ঞাপন কম। যেসব বিজ্ঞাপন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে, সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট কেটে রাখে। কিন্তু ভ্যাটের চালান দেয় না। এতে সংবাদপত্রের ওপর ভয়ংকর চাপ তৈরি হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের চালান দেওয়া নিশ্চিত হলে সংবাদপত্রের চাপ কমবে। এছাড়া বিজ্ঞাপনে অগ্রিম আয়কর কাটা হয় ৪ শতাংশ। তিনি করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এই অগ্রিম আয়কর থেকে অন্তত এক বছরের জন্য অব্যাহতি চান।

এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের সদস্য (ভ্যাট নীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, সরকারি সংস্থা কেন ভ্যাটের চালান দেয় না সে বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
অ্যাটকোর সিনিয়র সহসভাপতি ও ৭১ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ৭৫ ভাগ বিজ্ঞাপন পাচার হয়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিদেশের টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এতে কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য পূরণ হলেও দেশের টেলিভিশন কোম্পানি ও রাজস্ব বিভাগ অর্থ পাচ্ছে না। বড় ধরনের জালিয়াতি হচ্ছে। এনবিআরের এ বিষয়টি দেখা উচিত।

বিজনেসজার্নাল/এসএ