১০:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তাহীনতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:০৫:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৫০ বার দেখা হয়েছে

পূর্ণাঙ্গ সীমানা প্রাচীরের অভাব, অপ্রতুল নিরাপত্তাকর্মী এবং পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সংশ্লিষ্ট সকলেই। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর হলেও নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যার ফলে বহিরাগতদের নিত্য আনাগোনা এমনকি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা সীমানা প্রাচীর তৈরির দাবি জানালেও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের পিছন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের ডান পাশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান হল পর্যন্ত নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। প্রতিষ্ঠার পর খুঁটি ও কাঁটাতারের নামমাত্র প্রাচীর দিলেও নজরদারির অভাবে সেই খুঁটি থাকলেও কাঁটাতার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এতে অতি সহজেই বহিরাগতরা প্রবেশ করছে ক্যাম্পাসে।

এছাড়া বৈদ্যুতিক সংযোগের আওতায় নেই পুরো ক্যাম্পাস। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে মূল ফটক থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত লাইটিং’র ব্যবস্থা করা হলেও বছর না যেতেই সিংহভাগ অকেজো হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীরও রয়েছে সংকটে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলেও তার বেশিরভাগই অচল।

বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তির সাথে সুসম্পর্ক থাকায় বাহিরের কিছু ব্যক্তিদের হলের ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া হলের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের প্রায় সময়ই অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের মধ্য দিয়ে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারে বহিরাগতরা। যার ফলে আমাদেরই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা কর্মীর অভাবে সুষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না জানিয়ে নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় আমরা বহিরাগতদের বিষয়ে পুরোপুরি কাজ করতে পারছি না। বর্তমানে আনসার বাহিনীর সদস্য ৩১ জন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ২৯ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমার দপ্তরে আরো প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন কর্মী দরকার।’

সিসি ক্যামেরার বিষয় নিয়ে আইসিটি সেলের প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে মোট ২১ টি সিসিটিভি ক্যামেরা। এর মধ্যে সচল রয়েছে ১৮ টি আর ৩ টিতে রয়েছে হার্ডওয়্যারগত সমস্যা। এছাড়া আরো ৮ থেকে ১০ টি ক্যামেরা প্রয়োজন রয়েছে। মুক্তমঞ্চ, মসজিদ এবং শহীদ মিনারের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে।’

সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তা জোরদারে বিঘ্নিত ঘটছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু সীমানা প্রাচীর নেই তাই বহিরাগতদের ঠেকানো কঠিন হয়ে যায়। তবে এ বিষয়ে ইউজিসি’র সাথে বাজেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আশাকরি দ্রুতই এর সমাধান আসবে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘সীমানা প্রাচীর তৈরি করতে হলে আমাদের আনুমানিক দেড় থেকে দুই কোটি টাকার প্রকল্পের প্রয়োজন। আর নিরাপত্তা কর্মীদের বিষয়ে ইউজিসিতে বিভিন্ন পদের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ইউজিসি থেকে নিরাপত্তা কর্মীদের পদ দিলেই আমরা নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিতে পারবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে সিসি ক্যামেরার জন্য চাহিদা হাতে পেয়েছি, দ্রুত সমাধানে আসবে।’

শেয়ার করুন

x
English Version

নিরাপত্তাহীনতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট: ০৫:০৫:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১

পূর্ণাঙ্গ সীমানা প্রাচীরের অভাব, অপ্রতুল নিরাপত্তাকর্মী এবং পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সংশ্লিষ্ট সকলেই। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর হলেও নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যার ফলে বহিরাগতদের নিত্য আনাগোনা এমনকি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা সীমানা প্রাচীর তৈরির দাবি জানালেও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের পিছন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের ডান পাশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান হল পর্যন্ত নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। প্রতিষ্ঠার পর খুঁটি ও কাঁটাতারের নামমাত্র প্রাচীর দিলেও নজরদারির অভাবে সেই খুঁটি থাকলেও কাঁটাতার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এতে অতি সহজেই বহিরাগতরা প্রবেশ করছে ক্যাম্পাসে।

এছাড়া বৈদ্যুতিক সংযোগের আওতায় নেই পুরো ক্যাম্পাস। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে মূল ফটক থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত লাইটিং’র ব্যবস্থা করা হলেও বছর না যেতেই সিংহভাগ অকেজো হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীরও রয়েছে সংকটে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলেও তার বেশিরভাগই অচল।

বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তির সাথে সুসম্পর্ক থাকায় বাহিরের কিছু ব্যক্তিদের হলের ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া হলের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের প্রায় সময়ই অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের মধ্য দিয়ে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারে বহিরাগতরা। যার ফলে আমাদেরই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা কর্মীর অভাবে সুষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না জানিয়ে নিরাপত্তা শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় আমরা বহিরাগতদের বিষয়ে পুরোপুরি কাজ করতে পারছি না। বর্তমানে আনসার বাহিনীর সদস্য ৩১ জন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ২৯ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমার দপ্তরে আরো প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন কর্মী দরকার।’

সিসি ক্যামেরার বিষয় নিয়ে আইসিটি সেলের প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে মোট ২১ টি সিসিটিভি ক্যামেরা। এর মধ্যে সচল রয়েছে ১৮ টি আর ৩ টিতে রয়েছে হার্ডওয়্যারগত সমস্যা। এছাড়া আরো ৮ থেকে ১০ টি ক্যামেরা প্রয়োজন রয়েছে। মুক্তমঞ্চ, মসজিদ এবং শহীদ মিনারের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে।’

সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তা জোরদারে বিঘ্নিত ঘটছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু সীমানা প্রাচীর নেই তাই বহিরাগতদের ঠেকানো কঠিন হয়ে যায়। তবে এ বিষয়ে ইউজিসি’র সাথে বাজেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আশাকরি দ্রুতই এর সমাধান আসবে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘সীমানা প্রাচীর তৈরি করতে হলে আমাদের আনুমানিক দেড় থেকে দুই কোটি টাকার প্রকল্পের প্রয়োজন। আর নিরাপত্তা কর্মীদের বিষয়ে ইউজিসিতে বিভিন্ন পদের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ইউজিসি থেকে নিরাপত্তা কর্মীদের পদ দিলেই আমরা নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিতে পারবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে সিসি ক্যামেরার জন্য চাহিদা হাতে পেয়েছি, দ্রুত সমাধানে আসবে।’