ফ্যাসিবাদের দোসররা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

- আপডেট: ১২:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১০২৭১ বার দেখা হয়েছে
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর, দুষ্কৃতকারী, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
সারাদেশে চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোনো শয়তান যেন পালাতে না পারে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর রাজারবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের উপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরার এদেশের জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে লুটপাট করে অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। যারাই তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে তাদেরকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে, দলীয় বাহিনীর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে লেলিয়ে দিয়েছে, অন্যায়ভাবে মামলা-হামলা দিয়ে হেনস্তা করেছে। গণমাধ্যমগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে শায়েস্তা করেছে। অনুগত পুঁজিবাদী শ্রেণি তৈরি করে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। সিভিল সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে।
‘এক কথায় ফ্যাসিস্ট সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। বর্তমানে তারা বিগত ১৬ বছরে তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ ব্যবহার করে অপশক্তির সম্পৃক্ততায় নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী, নরহত্যায় জড়িত বিশেষ হেলমেট বাহিনী, ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসররা, অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারী, ষড়যন্ত্রকারী, দুষ্কৃতকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী, দুদকের মামলায় আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সরকারের পুলিশ বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আইনি প্রক্রিয়ায় এসব অপরাধীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রেপ্তার করেছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। সারাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতাকারী এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীসমূহের সমন্বয়ে গত ৮ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশের অভিযান সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি করা হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপিত জয়েন্ট অপারেশন সেন্টারের মাধ্যমে অপারেশন ডেভিল হান্টের সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করা হবে।
আরও পড়ুন: দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৪তম
তিনি আরও বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করবেন। সিএমএম আদালত, এমএম আদালত, সিজেএম আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্পেশাল আদালতের বিচারক, আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত। এছাড়াও সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৮ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করেছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামারি ট্রায়ালের জন্য আপনারা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সচেতন নাগরিক। আপনাদের দেশের জনগণ, সরকার এবং নিজ নিজ দায়িত্বের প্রতি জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা ও কমিটমেন্ট রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপনাদের অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় ভূমিকা পালন করা দরকার। আমরা কোনো অপরাধীকে রাস্তায়, বাজারে, মাঠে, ময়দানে, রাজপথে দেখতে চাই না। প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে চাই। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই। আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে বলব। অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে আমি বলব, কোনো শয়তান যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে না যেতে পারে।
‘আইনজীবীদের আমি বলব, আপনারা আদালতে দায়ের করা প্রতিটি মামলার ধার্য তারিখে ও সময়ে উপস্থিত থাকুন। প্রসিকিউটিং এজেন্সির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ রাখুন। কোনোভাবেই যেন কোনো সন্ত্রাসী জামিন না পায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে আইজিপির টিম মামলাভিত্তিক অগ্রগতি নিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটরদের সঙ্গে ১৫ দিন পর পর বসতে পারেন অগ্রগতি, গ্যাপ, ডকুমেন্ট, নথি পর্যালোচনা ও আদালতে উপস্থাপনের জন্য। আমরা দেখেছি রাজনৈতিক বিরোধীদের নিধনের জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার হাজার হাজার মামলায় নিরীহ, নিষ্পাপ সাধারণ মানুষকে আদালতের প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বছরের পর বছর জেলে আটকে রেখেছে। নিষ্পাপ মানুষকে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে। এই অন্যায় আচরণের বিচার হয়ত একদিন হবে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী, মানুষের বুকে গুলি করে ঝাঝরাকারী, হেলমেট বাহিনী, দুষ্কৃতকারী, উসকানিদাতা, জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শনকারী ও দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার করে আদালতে যাবে আর তথ্যের সীমাবদ্ধতা কিংবা এজেন্সিগুলো ব্যর্থতার কারণে জামিন হয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়বে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
একই অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরের বিষয়গুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। পতিত ফ্যাসিস্টরা লাখ লাখ কোটি টাকা খরচ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। হুটহাট কাউকে জামিন দেবেন না, যিনি জামিনের যোগ্য তাকে আবার জামিন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন জামিন নিয়ে বের হয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ১৫ বছর অরাজকতা হয়েছে। ১৫ বছরের প্রতিটা হত্যার বিচার হবে। তাছাড়া এই পদে থাকার মানে হয় না। সঠিকভাবে কাজ করলে মবতন্ত্র কমে যাবে। সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সব সেক্টরে সংস্কার দরকার। সব সেক্টরকে ধ্বংস করা হয়েছে। ন্যায়ভিত্তিক কাজ করতে হবে। গুমের ঘটনা যেন আর না ঘটে। বিচারবহির্ভূত হত্যা যেন আর না ঘটে। অপরাধীকে যেন আইনের আওতায় এনে বিচার করা যায়। মানবাধিকার করে পুলিশিং সম্ভব। যে আদালত ভিন্ন মত দমনে জেল খানাকে ব্যবহার করে না, তেমন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।
ঢাকা/এসএইচ