১০:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪
জলবায়ু সম্মেলন

বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার পাবে দরিদ্র দেশগুলো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:১৫:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১০২৩২ বার দেখা হয়েছে

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৯)। পরিবেশ দূষণকারী ধনী দেশগুলো প্রতি বছর ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ৩০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

রোববার (২৪ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এ অর্থায়নের বিষয়ে একমত হন বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা। খবর বিবিসি। এই তহবিল ব্যবহার হবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব করতে।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের কনফারেন্স অব পার্টিজ (কপ) সম্মেলনের ২৯তম আসর শুরু হয়েছিল ১১ নভেম্বর। ১৭ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অর্থায়ন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে আরও একদিন সময় বাড়ানো হয়। বাংলাদেশসহ প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ দর-কষাকষির পর রোববার ভোরে এই চুক্তিতে সম্মত হন।

কপ সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে জলবায়ু তহবিল নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। পরিবেশ দূষণকারী ধনী দেশগুলো প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তবে পরবর্তী সময়ে কপ সম্মেলনে আলোচনায় ফিরে তারা সমঝোতায় পৌঁছায়।

এর আগে ধনী দেশগুলো প্রাথমিকভাবে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করত। তবে দরিদ্র দেশগুলো এই পরিমাণকে অপ্রতুল দাবি করে বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার দাবি তোলে। পরে আলোচনা শেষে ধনী দেশগুলো বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নে রাজি হয়।

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের জন্য ‘প্রস্তুত’ ইউরোপের ৭ দেশ

দরিদ্র দেশগুলো ৩০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দকেও অপ্রতুল বলে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এ নিয়ে দর-কষাকষি ভোর পর্যন্ত চলে। কপ২৯-এর পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্যারিস চুক্তির বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় ফিরতে শুরু করেছেন। ফলে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার তহবিলের অর্থ অঙ্গীকার করতে রাজি হচ্ছে না উন্নত দেশগুলো।

এদিকে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিবেশবাদী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রতিবছর ৮.৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, কিন্তু অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ সম্ভব। এই ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ওপকে হোয়েকস্ট্রা বলেছেন, ‘কপ ২৯ জলবায়ু অর্থায়নের নতুন যুগের সূচনা করেছে। তবে উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকেই এই চুক্তিকে অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন।

অন্যদিকে চুক্তির সমালোচনা করে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার শিফট আফ্রিকার পরিচালক মোহামেদ আদোউ বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য এই কপ একটি বিপর্যয়। ধনী দেশগুলো যারা জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি করে, তারাই পৃথিবী ও এর বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই তহবিল কার্যকরভাবে ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা আন্তরিক থাকবে, সেটিও সময়ের সঙ্গে বোঝা যাবে। তবে এই চুক্তি দরিদ্র দেশগুলোর জন্য আশার আলো জাগালেও কার্যকর প্রয়োগের ওপরই এর সফলতা নির্ভর করবে।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

জলবায়ু সম্মেলন

বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার পাবে দরিদ্র দেশগুলো

আপডেট: ১২:১৫:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৯)। পরিবেশ দূষণকারী ধনী দেশগুলো প্রতি বছর ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ৩০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

রোববার (২৪ নভেম্বর) আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এ অর্থায়নের বিষয়ে একমত হন বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা। খবর বিবিসি। এই তহবিল ব্যবহার হবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিকে পরিবেশবান্ধব করতে।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের কনফারেন্স অব পার্টিজ (কপ) সম্মেলনের ২৯তম আসর শুরু হয়েছিল ১১ নভেম্বর। ১৭ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অর্থায়ন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে আরও একদিন সময় বাড়ানো হয়। বাংলাদেশসহ প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ দর-কষাকষির পর রোববার ভোরে এই চুক্তিতে সম্মত হন।

কপ সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে জলবায়ু তহবিল নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। পরিবেশ দূষণকারী ধনী দেশগুলো প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয়। তবে পরবর্তী সময়ে কপ সম্মেলনে আলোচনায় ফিরে তারা সমঝোতায় পৌঁছায়।

এর আগে ধনী দেশগুলো প্রাথমিকভাবে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করত। তবে দরিদ্র দেশগুলো এই পরিমাণকে অপ্রতুল দাবি করে বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার দাবি তোলে। পরে আলোচনা শেষে ধনী দেশগুলো বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নে রাজি হয়।

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের জন্য ‘প্রস্তুত’ ইউরোপের ৭ দেশ

দরিদ্র দেশগুলো ৩০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দকেও অপ্রতুল বলে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এ নিয়ে দর-কষাকষি ভোর পর্যন্ত চলে। কপ২৯-এর পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্যারিস চুক্তির বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় ফিরতে শুরু করেছেন। ফলে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার তহবিলের অর্থ অঙ্গীকার করতে রাজি হচ্ছে না উন্নত দেশগুলো।

এদিকে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিবেশবাদী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রতিবছর ৮.৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, কিন্তু অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ সম্ভব। এই ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ওপকে হোয়েকস্ট্রা বলেছেন, ‘কপ ২৯ জলবায়ু অর্থায়নের নতুন যুগের সূচনা করেছে। তবে উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকেই এই চুক্তিকে অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন।

অন্যদিকে চুক্তির সমালোচনা করে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার শিফট আফ্রিকার পরিচালক মোহামেদ আদোউ বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য এই কপ একটি বিপর্যয়। ধনী দেশগুলো যারা জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি করে, তারাই পৃথিবী ও এর বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই তহবিল কার্যকরভাবে ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা আন্তরিক থাকবে, সেটিও সময়ের সঙ্গে বোঝা যাবে। তবে এই চুক্তি দরিদ্র দেশগুলোর জন্য আশার আলো জাগালেও কার্যকর প্রয়োগের ওপরই এর সফলতা নির্ভর করবে।

ঢাকা/এসএইচ