বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বপ্নভঙ্গ!

- আপডেট: ০৭:৩২:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / ১০৬১২ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজারে এখন চরম হতাশাজনক পরিস্থিতি। টানা দরপতনে লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তাতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। লেনদেনও কমে গেছে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। বর্তমানে বাজারের লেনদেন যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবারই কেবল লোকসানের অঙ্কই প্রতিদিন বাড়ছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শেয়ারবাজার নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু সেই পরিবর্তনের মাস না ঘুরতেই শেয়ারবাজার আবারও দীর্ঘ মন্দার কবলে। এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীরা রাজপথেও নেমেছেন প্রতিবাদে। বিক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন বাজেটের দিকে। বাজেটে শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ নেবে সরকার। বিনিয়োগকারীদের জন্য দেওয়া হবে প্রণোদনা—এই আশায় ছিলেন তাঁরা। বাজেট ঘিরে বিনিয়োগকারীদের আশা ছিল যতটা প্রাপ্তি, সেই তুলনায় হতাশাজনক। বিনিয়োগকারীদের হতাশই করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। কারণ, সরাসরি বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন—এমন কোনো প্রণোদনা নেই ঘোষিত বাজেটে।
তবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বাজেটে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির মধ্যকার করপোরেট করহারের ব্যবধান বৃদ্ধি, ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর ধার্য কর কমানো এবং শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার হ্রাস। এসব প্রণোদনার সুবিধাভোগী শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সরাসরি বিনিয়োগকারীরা এর কোনো সুবিধা পাবেন না। যদিও বাজেটের আগে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয় থেকে শুরু করে মূলধনি মুনাফার ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে।
বাজেট প্রস্তাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শর্তসাপেক্ষে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ করপোরেট কর ছাড় পাবেন। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে এ সুবিধা পাওয়া যাবে। এ জন্য তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, শর্তসাপেক্ষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার হবে ২০ শতাংশ। আর তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহার হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর করহার আরও আড়াই শতাংশ কম হবে। এই শর্তের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত করবর্ষে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সব আয় ও প্রাপ্তি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। পাশাপাশি ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেন ও বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার বেশি সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্ত পূরণ করলে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন করহারের ব্যবধান কমে ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
আরও পড়ুন: তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান বাড়ছে
এ ছাড়া ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর থেকে উৎসে কর কিছুটা কমানো হয়েছে। বর্তমানে প্রতি ১০০ টাকার লেনদেনে ৫ পয়সা কর আদায় করা হয়। আগামী বাজেটে এই কর কমিয়ে ৩ পয়সায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর ১০ শতাংশ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সাড়ে ৩৭ শতাংশ হারে করপোরেট কর দেয়। আগামী অর্থবছরে তা কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। তবে শর্তসাপেক্ষে এই ব্যবধান সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও সাধারণভাবে এই ব্যবধান ৫ শতাংশ। যদিও ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যে করহারের ব্যবধান ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বিএসইসির সেই প্রস্তাব পুরোপুরি আমলে নেননি অর্থ উপদেষ্টা। তাই সাধারণভাবে ৫ শতাংশ করহারের সুবিধা নিতে ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী না। কারণ, তালিকাভুক্ত হলে অনেক ধরনের নিয়মকানুন পরিপালন করতে হয় কোম্পানিগুলোকে। তালিকাভুক্তির জন্য বাড়তি অর্থও খরচ হয়। তাই ভালো সুবিধা না পেলে এসব কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে না।
আরও পড়ুন: করহার কমানোসহ বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য তিন সুখবর
এদিকে গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাজারের সংস্কারের নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। ফলে সংস্কারের সুফলও নেই বাজারে। এ কারণে তীব্র মন্দায় ভুগছে শেয়ারবাজার। বাজেট ঘিরে বিনিয়োগকারীদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটিরও খুব বেশি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই বাজেট-পরবর্তী শেয়ারবাজারে তার কী প্রভাব পড়ে, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা। বিনিয়োগকারীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—ঘোষিত বাজেট শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে পারবে কি?
ঢাকা/এসএইচ