০১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিদেশিরাও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:২৯:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল ২০২১
  • / ৪৩৮৬ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল ডেস্কঃ বাংলাদেশে আড়াই লাখ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৩৫টি। এসবের মধ্যে ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে। আকর্ষণীয় দামের মধ্যে বেশকিছু ভালো কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। পুঁজিবাজারে নতুন করে আসছে শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ড। দেশের চলমান বন্ডগুলো লেনদেনের উপযোগী করা হচ্ছে। শেয়ার কেনাবেচা আরও সহজ করা হচ্ছে। এসব কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশের পুঁজিবাজারে নজর প্রবাসী ও বিদেশিদের।

এরই মধ্যে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি ব্যাংক বাংলাদেশের বন্ডে বিনিয়োগের সম্মতি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে। শিগগিরই প্রায় আট হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণ বিনিয়োগ করবে। এছাড়াও চার দিনব্যাপী দুবাইয়ের রোড শোতে বিএসইসিকে অনেক প্রবাসী ও বিনিয়োগকারী আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারকে কীভাবে অর্থনীতিতে অবদানের জন্য কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে কাজ করছি। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আনা শুরু করেছি।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আস্থা ও তারল্য সংকটে থাকা পুঁজিবাজারে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করছি। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিচ্ছি। তাদের স্বার্থ রক্ষা চেষ্টা করছি। ইক্যুইটি বেজড পুঁজিবাজার থেকে বেড়িয়ে এসে নতুন নতুন প্রোডাক্ট যোগ করছি। বিদেশিদের পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা করছি। তা দেখে দেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। বিদেশিরাও বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, গত ৫০ বছরে দেশজ উন্নয়ন প্রবৃদ্ধিতে (জিডিপি) পুঁজিবাজারের অবদান ১৬ শতাংশ। অথচ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশের অর্থনীতি পুঁজিবাজারকে ভিত্তি করে চলে।

আরজেএসসি বা যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৫টি। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের ৫০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।

সেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ৩৩৪টি। অর্থাৎ তিনভাগের একভাগ। এই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পের অর্থ সংগ্রহ করলে পুঁজিবাজারের আকার বাড়বে। আকার বাড়লে জিডিপিতে অবদানও বাড়বে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর অর্থনীতি যেভাবে এগিয়েছে সেভাবে তাল মেলাতে পারেনি পুঁজিবাজার। যেখানে ব্যাংক ঋণের বিকল্প হিসেবে শিল্পায়নে মুখ্য ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে শিল্পায়নে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারেনি পুঁজিবাজার।

তারা বলছেন, ১৯৭১ সালে শিল্প খাতে দেশের অবদান ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পলিসিগত দুর্বলতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে না পারায় অর্থাৎ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে পুঁজিবাজার এগোতে পারেনি।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই উন্নয়নশীল দেশের শিল্পায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা পুঁজিবাজারের। কিন্তু পলিসিগত দুর্বলতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে না পারায় সেটা হয়ে ওঠেনি। উদ্যোক্তারা বিনা সুদে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ না নিয়ে সহজে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ফলে তারা পুঁজিবাজারে আসছেন না।

তিনি আরও বলেন, তাই অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান কম। তবে আশার দিক হচ্ছে বর্তমান কমিশন এগুলো নিয়ে কাজ করছে। সঠিকভাবে পলিসি প্রয়োগ করতে হবে। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পথ সহজ করে করে দিলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। পুঁজিবাজার ভালো হলে এমনিতেই বিদেশিরা পুঁজিবাজারে আসবেন বলে জানান তিনি।

সূত্রঃ  ঢাকাপোস্ট

শেয়ার করুন

x
English Version

বিদেশিরাও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী

আপডেট: ১০:২৯:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল ২০২১

বিজনেস জার্নাল ডেস্কঃ বাংলাদেশে আড়াই লাখ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৩৫টি। এসবের মধ্যে ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে। আকর্ষণীয় দামের মধ্যে বেশকিছু ভালো কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। পুঁজিবাজারে নতুন করে আসছে শরিয়াহভিত্তিক সুকুক বন্ড। দেশের চলমান বন্ডগুলো লেনদেনের উপযোগী করা হচ্ছে। শেয়ার কেনাবেচা আরও সহজ করা হচ্ছে। এসব কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশের পুঁজিবাজারে নজর প্রবাসী ও বিদেশিদের।

এরই মধ্যে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি ব্যাংক বাংলাদেশের বন্ডে বিনিয়োগের সম্মতি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে। শিগগিরই প্রায় আট হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণ বিনিয়োগ করবে। এছাড়াও চার দিনব্যাপী দুবাইয়ের রোড শোতে বিএসইসিকে অনেক প্রবাসী ও বিনিয়োগকারী আগ্রহের কথা জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারকে কীভাবে অর্থনীতিতে অবদানের জন্য কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে কাজ করছি। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আনা শুরু করেছি।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আস্থা ও তারল্য সংকটে থাকা পুঁজিবাজারে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করছি। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিচ্ছি। তাদের স্বার্থ রক্ষা চেষ্টা করছি। ইক্যুইটি বেজড পুঁজিবাজার থেকে বেড়িয়ে এসে নতুন নতুন প্রোডাক্ট যোগ করছি। বিদেশিদের পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা করছি। তা দেখে দেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। বিদেশিরাও বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হচ্ছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, গত ৫০ বছরে দেশজ উন্নয়ন প্রবৃদ্ধিতে (জিডিপি) পুঁজিবাজারের অবদান ১৬ শতাংশ। অথচ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশের অর্থনীতি পুঁজিবাজারকে ভিত্তি করে চলে।

আরজেএসসি বা যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৫টি। এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের ৫০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।

সেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ৩৩৪টি। অর্থাৎ তিনভাগের একভাগ। এই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পের অর্থ সংগ্রহ করলে পুঁজিবাজারের আকার বাড়বে। আকার বাড়লে জিডিপিতে অবদানও বাড়বে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর অর্থনীতি যেভাবে এগিয়েছে সেভাবে তাল মেলাতে পারেনি পুঁজিবাজার। যেখানে ব্যাংক ঋণের বিকল্প হিসেবে শিল্পায়নে মুখ্য ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে শিল্পায়নে সঠিক ভূমিকা রাখতে পারেনি পুঁজিবাজার।

তারা বলছেন, ১৯৭১ সালে শিল্প খাতে দেশের অবদান ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু পলিসিগত দুর্বলতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে না পারায় অর্থাৎ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে পুঁজিবাজার এগোতে পারেনি।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই উন্নয়নশীল দেশের শিল্পায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা পুঁজিবাজারের। কিন্তু পলিসিগত দুর্বলতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে না পারায় সেটা হয়ে ওঠেনি। উদ্যোক্তারা বিনা সুদে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ না নিয়ে সহজে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। ফলে তারা পুঁজিবাজারে আসছেন না।

তিনি আরও বলেন, তাই অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান কম। তবে আশার দিক হচ্ছে বর্তমান কমিশন এগুলো নিয়ে কাজ করছে। সঠিকভাবে পলিসি প্রয়োগ করতে হবে। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পথ সহজ করে করে দিলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। পুঁজিবাজার ভালো হলে এমনিতেই বিদেশিরা পুঁজিবাজারে আসবেন বলে জানান তিনি।

সূত্রঃ  ঢাকাপোস্ট