০১:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিদ্যুৎবিহীন সিলেটে পানির জন্য হাহাকার

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৪২:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০২০
  • / ৪১২৬ বার দেখা হয়েছে

সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুনের ঘটনায় গত ২৮ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে সিলেট মহানগর ও এর আশপাশের এলাকা। বিদ্যুৎ না থাকায় নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর পার্শ্ববর্তী কুমারগাঁও ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আগুন লেগে বিদ্যুতের দুটি গ্রিড পুড়ে যায়। এর পর থেকে পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। 

এদিকে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন মহানগর এলাকার লোকজন। বিশেষ করে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও হাসপাতালের রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ না থাকায় অফিস-আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বিদ্যুতের অভাবে অনেক গৃহস্থালি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকায় যানবাহন জ্বালানি সমস্যায় পড়েছে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, আমরা জেনারেটর ব্যাকআপ নিয়ে চলছি।

বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডা. নাসিম হোসেন বলেন, বড় হাসপাতালগুলোতে তেমন সমস্যা না হলেও ছোট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কোনো সেবা দিতে পারছে না। পুরো সিস্টেম কলাপস করেছে। বড় হাসপাতালগুলোতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে জেনারেটর বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সেই সময় চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকছে।

নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। মোবাইল ফোনে চার্জ নাই। মোবাইল ফোন চার্জ করাতে অনেকে হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ভিড় জমাচ্ছেন। তারা ব্যক্তিগত জেনারেটর ব্যবহার করে ৫০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল চার্জ করে দিচ্ছে।

সিলেটের বাগবাড়ি এলাকার মেহেদী বলেন, খাবার পানি কিনে খাচ্ছি, কিন্তু সব এলাকায় তো পুকুর নেই। গৃহস্থালি কাজ, গোসল এসব বন্ধ হয়ে গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, গতকাল শহরে মাইকিং করা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। গতকাল অগ্নিকাণ্ডের আগে প্রায় এক কোটি লিটার পানি সরবরাহ করেছি আমরা। নগরীর মোট চাহিদা ৮ কোটি লিটারের মধ্যে চার থেকে পাঁচ কোটি লিটার পানি সিটি করপোরেশন সরবরাহ করতে পারে। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

সিলেটের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন দুপুরে জানান, গতকাল রাত থেকে প্রায় ৪০০ কর্মী কাজ করছেন। আজ দুপুরের মধ্যে মেরামত করা কিছু পিলার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিকেলের দিকে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে বাকি এলাকায় কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।

এদিকে, কুমারগাঁওয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিরূপণে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমটি গঠন করা হয়।

কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে নির্বাহী পরিচালক (ওএন্ডএম) পিজিসিবি বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের উপমহাব্যবস্থাপক (এইচআরএম) রূপক মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ্ জায়েদী স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গ্রিডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন উপ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগুনে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ২৫/৪১ এমবিএ দুটি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। ট্রান্সফরমারগুলোর বাইরের অংশ পুড়লেও ভেতরে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ৩৩ কেভি ফিডার ও বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শেয়ার করুন

x
English Version

বিদ্যুৎবিহীন সিলেটে পানির জন্য হাহাকার

আপডেট: ০৪:৪২:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০২০

সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুনের ঘটনায় গত ২৮ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে সিলেট মহানগর ও এর আশপাশের এলাকা। বিদ্যুৎ না থাকায় নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর পার্শ্ববর্তী কুমারগাঁও ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে আগুন লেগে বিদ্যুতের দুটি গ্রিড পুড়ে যায়। এর পর থেকে পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। 

এদিকে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয়ে বিপাকে পড়েছেন মহানগর এলাকার লোকজন। বিশেষ করে বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও হাসপাতালের রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ না থাকায় অফিস-আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বিদ্যুতের অভাবে অনেক গৃহস্থালি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকায় যানবাহন জ্বালানি সমস্যায় পড়েছে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, আমরা জেনারেটর ব্যাকআপ নিয়ে চলছি।

বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডা. নাসিম হোসেন বলেন, বড় হাসপাতালগুলোতে তেমন সমস্যা না হলেও ছোট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো কোনো সেবা দিতে পারছে না। পুরো সিস্টেম কলাপস করেছে। বড় হাসপাতালগুলোতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে জেনারেটর বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সেই সময় চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকছে।

নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। মোবাইল ফোনে চার্জ নাই। মোবাইল ফোন চার্জ করাতে অনেকে হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ভিড় জমাচ্ছেন। তারা ব্যক্তিগত জেনারেটর ব্যবহার করে ৫০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল চার্জ করে দিচ্ছে।

সিলেটের বাগবাড়ি এলাকার মেহেদী বলেন, খাবার পানি কিনে খাচ্ছি, কিন্তু সব এলাকায় তো পুকুর নেই। গৃহস্থালি কাজ, গোসল এসব বন্ধ হয়ে গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, গতকাল শহরে মাইকিং করা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। গতকাল অগ্নিকাণ্ডের আগে প্রায় এক কোটি লিটার পানি সরবরাহ করেছি আমরা। নগরীর মোট চাহিদা ৮ কোটি লিটারের মধ্যে চার থেকে পাঁচ কোটি লিটার পানি সিটি করপোরেশন সরবরাহ করতে পারে। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

সিলেটের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন দুপুরে জানান, গতকাল রাত থেকে প্রায় ৪০০ কর্মী কাজ করছেন। আজ দুপুরের মধ্যে মেরামত করা কিছু পিলার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিকেলের দিকে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে বাকি এলাকায় কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।

এদিকে, কুমারগাঁওয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিরূপণে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমটি গঠন করা হয়।

কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে নির্বাহী পরিচালক (ওএন্ডএম) পিজিসিবি বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের উপমহাব্যবস্থাপক (এইচআরএম) রূপক মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ্ জায়েদী স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গ্রিডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন উপ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগুনে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ২৫/৪১ এমবিএ দুটি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। ট্রান্সফরমারগুলোর বাইরের অংশ পুড়লেও ভেতরে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ৩৩ কেভি ফিডার ও বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।