বিনিয়োগকারীদের আলোচনায় আসা কে এই লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজ!

- আপডেট: ১১:১৮:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
- / ২৫৩৯১ বার দেখা হয়েছে
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শেয়ারবাজারে পতনে। এরইমধ্যে বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। যাতে করে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে মাকসুদের পদত্যাগের দাবি জোরালোও হয়েছে। এমনকি বিএসইসির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার পদত্যাগ চায়। তবে তিনি চেয়ার ছাড়তে রাজি নন।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
গত সপ্তাহের রবিবার (২৭ এপ্রিল) এবং চলতি সপ্তাহের ৪ ও ৫ মে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে সরকার অপসারন করতে যাচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেই তালিকাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যাতে করে ওইসব দিনগুলোতে শেয়ারবাজার ইতিবাচক ছিল। তবে সরকার এখনো অযোগ্য মাকসুদ কমিশনকে অপসারন করেনি। যাতে পতনে ফিরে গেছে শেয়ারবাজার।
এই কমিশনের পদত্যাগ বা অপসারনে মাধ্যমে শেয়ারবাজার যে ঘুরে দাঁড়াবে, তা গত সপ্তাহের রবিবারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওইদিন দুপুরে খবর আসে বিএসইসির চেয়ারম্যানকে সরকারের পক্ষ থেকে পদত্যাগে চাঁপ দেওয়া হয়েছে। এরপরেই একইদিনে বড় ঋণাত্মক কাটিয়ে ইতিবাচক হয়ে যায় বাজার। এরপরে চলতি সপ্তাহের রবিবার (৪ মে) তার দেশত্যাগ ও অপসারনের খবরে শেয়ারবাজারে উত্থান হয়। যার অপসারন হচেছ বলে সোমবারও বাজারে খবর ছিল। ফলে ওই দুই দিনও বাজার ইতিবাচক ছিল। তবে এখনো তাকে অপসারন করেনি সরকার। এ নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বেশ কয়েকটি গ্রুপে বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে পোষ্ট দিচ্ছেন। তারা বলছেন, লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের রক্ষার্থে অবিলম্বে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে এমন কাউকে নিয়োগ দেয়া হোক।
পুঁজিবাজারের টালমাটাল পরিস্থিতিতে বেশ সরব এখন বিনিয়োগকারীরা। তাদের উদ্যেগে কয়েকটি জরিপও চালানো হয়েছে ফেসবুকে। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজকে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দায়িত্ব দেয়ার দাবিতে অধিকাংশের ভোট পড়ে। সরেজমিনে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজে গেলে বিনিয়োগকারীদের মুখে এ নামটি এসেছে বারবার। বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করছেন, জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নতুন যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। তবে কে এই লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজ?
আরও পড়ুন: প্রাইম টেক্সটাইলের সর্বোচ্চ দরপতন
বিজনেস জার্নালের অনুসন্ধানে জানা গেছে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজ বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এ কর্মরত আছেন । সেনাবাহিনীতে কর্মরত এ সদস্য পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেনা কর্মকর্তা। ১৯৯৫ সালে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে পাস করা এই কর্মকর্তা ছাত্র জীবনে শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্ট্যান্ড করা অর্থনীতির ছাত্র। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। এরপর তিনি ব্যবসা প্রশাসন (এমবিএ), ইতিহাস, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা সহ চারটি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-তে পিএইচডি করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজ ২০০৮ সালে থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের শেয়ারবাজারের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এছাড়াও তিনি শেয়ারবাজারের আইনকানুনসহ নানা বিষয়ে বাজারের স্টেকহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আসছেন।
দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে এই কর্মকর্তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে দাবি করে কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে একাধিক বিনিয়োগকারী লিখেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা যেখানে আছে সেখানে একটা নির্ভরযোগ্য ভরসা তৈরি হবে।
এম এম উজ্জল তার একটি পোষ্টে লিখেছেন, আমরা চাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এমন কোন ব্যক্তি আসুক যে ব্যক্তি পুঁজিবাজার বুঝে এবং যার দেশ প্রেম আছে। রাষ্ট্রসংস্কার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি লিখেন, আমরা চাই পুঁজিবাজার সংস্কার হোক এবং একজন বিচক্ষণ লোক এই দায়িত্ব পালন করুক। এ সময় তিনি তার পোষ্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজকে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দায়িত্ব দেয়ারও দাবি জানান।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। বিশেষ করে বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের বিতর্কিত কর্মকান্ডে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় সূচকের টানা উত্থান না হলেও আতঙ্ক কাটবে না। তাই যে কোন মূল্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হবে। তারা আরও বলেন, যারাই এই বাজারে দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন, তারাই বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করেছেন। কাজেই বাজারের এ ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ থাকলে বাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে- তারা আশা প্রকাশ করেন।
বিষয়টি নিয়ে বিজনেস জার্নালের পক্ষ থেকে কথা হয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি সেনা অফিসার, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করেছি। সরকার এবং বাহিনী যেখানে আমাকে প্রয়োজন মনে করে সেখানেই আমি কাজ করবো।
ঢাকা/এইচকে