ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার সুফল মিলবে না পুঁজিবাজারে!

- আপডেট: ০৪:৪৮:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১১১৪৩ বার দেখা হয়েছে
সমাপ্ত বছরে আর্থিকভাবে সবল থাকা ব্যাংকিং খাতের বেশ কিছু কোম্পানির পরিচালন মুনাফার উলম্ফন হয়েছে। এতে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি কিংবা পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব না পড়লেও এর সুফল ঘরে তুলে নিয়েছে বেশকিছু ব্যাংক। কারণ অস্বাভাবিক এ মুনাফার পেছনে রয়েছে ‘শুভংকরের ফাকি’।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
মুলত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলে দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে বাড়িয়ে উন্নীত করা হয় ১০ শতাংশে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় ১৬ শতাংশে ঠেকেছে। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের এ প্রেসক্রিপশন দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বহুজাতিক দাতা সংস্থাটির এ প্রেসক্রিপশন মানতে গিয়ে দেশে বেড়ে গিয়েছে ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ বা ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এসে উল্টো আরো উসকে উঠেছে।
এছাড়া অনেক ব্যাংক এখনওপ্রভিশনিং সম্পন্ন করেনি। তারা প্রভিশনিং সম্পন্ন করলে পুরো ব্যাংক খাতের আসল চিত্র ফুটে উঠবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সুদ হার বাড়ানোর কারণে কিছু ব্যাংকের মুনাফা বাড়লেও সামগ্রিক অর্থনীতি কিংবা পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অতিরিক্ত সুদহারের কারণে মানুষ এখন ব্যাংক ও সরকারি ট্রেজারি বিল, বন্ডসহ ফিক্সড ইনকাম করা যায় এমন জায়গায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। অনেকেই পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উঠিয়ে নিয়ে এসব জায়গায় বিনিয়োগ করছে। আর এখনও অনেক ব্যাংক প্রভিশনিং সম্পন্ন করেনি। তারা প্রভিশনিং সম্পন্ন করলে পুরো ব্যাংক খাতের আসল চিত্র ফুটে উঠবে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সুদ হার বাড়ানোর কারণে ব্যাংকের মুনাফা বাড়ছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মূল্যস্ফীতি কমানো যাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীরাও শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শুধু ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। পাশাপাশি ট্রেজারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ব্যাংকের মুনাফা বাড়লেও সুদ হার বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান বেড়েছে। ফলে বেকারত্বও বাড়ছে। সামগ্রিক অর্থে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিশিষ্ট বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, মূল্যস্ফীতি যখন মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যায় তখন সেটি দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে গেছে। সুদ হার বাড়ানোর কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসান করছে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে মানি সার্কুলেশন কমিয়ে আনা উচিত ছিল। মূল্যস্ফীতি হওয়ার এটি একটি বড় কারণ। অনেক ব্যাংক মন্দ ঋণে জর্জড়িত। তারা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা সরবরাহ করতে পাচ্ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে মানি সার্কুলেশন বাড়িয়েছে। এতে করে মূল্যস্ফীতি বাড়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে। এসব ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা উচিত হয়নি। বরং যারা এসব ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত দেয়নি তাদের ব্যাপারে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।
আরও পড়ুন: বিনিয়োগকারীসহ সকলের কাছে তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে কাজ করছি
এম এ হাফিজ আরও বলেন, একদিকে সুদ হার বাড়ানো হচ্ছে। আবার অন্য দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকে মানি সার্কুলেশন বাড়িয়েছে। এভাবে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতি কমায় নিয়ে আসতে হবে। সুদ হার কমায় নিয়ে আসতে হবে। আয় বাড়াতে হবে। আর আয় বাড়লে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এমনিতেই বেড়ে যাবে। গত বছরের তুলনায় ব্যাংকগুলো পরিচালনা চার্জ বাড়িয়েছে। এসব চার্জ তারা মুনাফা দেখিয়েছে। অনেক ব্যাংক মন্দ ঋণের উপর প্রভিশনিং করেনি। যে কারণে এসব ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতে সুদহার বাড়লে তা শেয়ারবাজারের জন্য কখনোই মঙ্গলজনক হতে পারে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত শুধুমাত্র ব্যাংকিং খাত নয়, সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালে আর্থিকভাবে সবল থাকা প্রায় সব ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতভাগেরও বেশি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টি ব্যাংকের সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালের পরিচালন মুনাফা রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মুনাফার তথ্য পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো-ওয়ান, ব্র্যাক, সিটি, ডাচ-বাংলা, প্রাইম, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন, এক্সিম, এমটিবি, শাহজালাল, মার্কেন্টাইল ও প্রিমিয়ার ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে পরিচালন মুনাফা প্রবৃদ্ধির দিক এগিয়ে রয়েছে ওয়ান ব্যাংক। এর পরিচালনা মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৩০ শতাংশ। এরপর রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক ৭২ শতাংশ এবং সিটি ব্যাংক ৬৯ শতাংশ। কেবল ২০২৪ সালে প্রিমিয়ার ব্যাংকের মুনাফা কমেছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
ওয়ান ব্যাংক: ২০২৪ সালে ৮৩০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ওয়ান ব্যাংক। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির এ মুনাফা ছিল ৩৬১ কোটি টাকা। সে হিসাবে সদ্য বিদায়ী বছরে ওয়ান ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২৯.৯১ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংক: ২০২৪ সালে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির এ মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭২.২৯ শতাংশ।
সিটি ব্যাংক: আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে ৬৯.৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে সিটি ব্যাংক। ২০২৩ সালে প্রথম প্রজন্মের এ বেসরকারি ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। গত বছর এ মুনাফা বেড়ে ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ব্যাংকটির ইতিহাসে এটিই পরিচালন মুনাফার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক: পরিচালন মুনাফায় ৬১.৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও। গত বছর ব্যাংকটি ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। যেখানে ২০২৩ সালে ডাচ্-বাংলার পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালে ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ৭০০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ১ হাজার ৬৭৫ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ১ হাজার ১১০ কোটি, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৯৭৫ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৮৫০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ৮৩০ কোটি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৬৪৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে।
এদিকে, প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ২০২৩ সালে ছিল ৯১৪ কোটি টাকা। যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫০ কোটিতে। এতে দেখা যায়, ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা কমে গেছে ৭ শতাংশ।
বাকি সবক’টি ব্যাংকেরই মুনাফা বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পরিচালন মুনাফার এসব তথ্য পরে কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে। কেননা কিছু ব্যাংক এখনও ২০২৪ সালের হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করতে পারেনি। এসব ব্যাংক থেকে পাওয়া সম্ভাব্য মুনাফার তথ্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে সেটিকেই বলা হয় পরিচালন মুনাফা। তবে এটি কোনো ব্যাংকেরই প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাকেই বলা হয় ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, হাতে নগদ তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলোই মুনাফার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভালো করেছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের প্রধান খাত ছিল সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড। ৫-৬ শতাংশ সুদে সংগৃহীত আমানত ১২-১৩ শতাংশ সুদের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। পর্ষদ ভেঙে দেয়া ব্যাংকগুলো থেকে বের হয়ে যাওয়া আমানত স্বল্প সুদে টেনে নিয়েছে সবল ব্যাংকগুলো। বিল-বন্ডের পাশাপাশি স্বল্প সুদে সংগৃহীত এ আমানত থেকে ১৫-১৬ শতাংশে সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ উচ্চ স্প্রেডের (ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান) প্রভাবেই সবল ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ঋণ পেল পুঁজিবাজারের ৩ ব্যাংক
বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর মধ্যে গত দুই অর্থবছরজুড়েই দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১.৬৬ শতাংশ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ১০.৪৯ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সেপ্টেম্বরে আরো কিছুটা কমে ৯.৯২ শতাংশ দেখানো হয়। তবে অক্টোবর ও নভেম্বরে এ হার আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়। অক্টোবরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার দেখানো হয় ১০.৮৭ শতাংশ। আর নভেম্বরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ঠেকে ১১.৩৮ শতাংশে। সরকারের দেয়া এ তথ্য আমলে নিলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে দুই অর্থবছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার যে লক্ষ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করেছিল, সেটি কাজে আসেনি। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রেসক্রিপশন মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। বহুজাতিক সংস্থাটি থেকে ঋণ প্রাপ্তির শর্তের মধ্যেই সুদহার বাড়ানোর বিষয়টি জুড়ে দেয়া হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংক ঋণের পাশাপাশি সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহারও গত দুই বছর ধরে বেশ চড়া। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারও ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতকে ঋণ না দিয়ে সরকারকে ঋণ দিতে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে। বেসরকারি খাত ঋণবঞ্চিত হওয়ার চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও ফুটে উঠেছে।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪-এর অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অনিয়ম-দুর্নীতি ও সুশাসনের তীব্র ঘাটতির কারণে গত দেড় দশক ধরেই দেশের ব্যাংক খাত ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ সময় গিয়েছে ২০২০ সাল থেকে।
দেশের ব্যাংক খাত থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা লোপাট করেছেন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তৈরি হওয়া অলিগার্করা। বাছবিচারহীন লুটপাটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ দেশের প্রায় দুই ডজন ব্যাংকের ভিত নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের বেসরকারি খাতের ১২টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়। পরিবর্তন আসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায়। নেতিবাচক ভাবমূর্তি, আস্থাহীনতা ও পর্ষদ ভেঙে দেয়ার প্রভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিতে গ্রাহকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দিতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে টাকা ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পূবালী ব্যাংকের প্রথান অর্থ কর্মকর্তা লিটন মিয়া বলেন, সুদ হার বাড়ার কারণে কিছু ব্যাংকের মুনাফা বাড়লেও সমগ্র অর্থনীতিতে এর সুফল প্রভাব পড়বে না। কারণ সুদ হার বাড়ার কারণে খাদ্য, শিল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরের লোকসান বেড়ে গেছে। শ্রমিক ছাটাই করছে। আর শেয়ার বাজারকে ভালো করতে হলে দেশের পুরো অর্থনীতিকে ভালো করতে হবে।
ঢাকা/টিএ