০২:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

মূল্যস্ফীতি না কমলে কমবে না সুদহার: গভর্নর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:০৬:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • / ১০৩৩১ বার দেখা হয়েছে

ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই যে সুদহার কমিয়ে দেব তা হবে না। আগে মূল্যস্ফীতি কমবে তারপর পলিসি রেট আস্তে আস্তে কমানো হবে। আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ ) ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারের পথযাত্রা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ইস্কাটনে ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড  কার্যালয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গভর্নর বলেন, আমি চাই পলিসি রেট বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হোক। একেবারেই না হলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমবে না। বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকা, ভারতকে দেখুন সব জায়গাতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক নীতি সুদহার আছে। তো আমাকে ওইটাতে আনতে হবে। আমি এখানও ওইখানে যায়নি। তবে সুদহার কাঠামো ও মূল্যস্ফীতি সঠিক দিকে আগাচ্ছে। সময়মতো এটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের তাড়াহুড়োর দরকার নেই। আমাকে ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই সুদহার কমিয়ে দেব তা হবে না। মূল্যস্ফীতি, ট্রেজারি  বিল, ইন্টারেস্ট পলিসির সব রেট কমবে, তখন আমি পলিসি রেট আস্তে আস্তে কমাবো, এর আগে না।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে চাই এবং আর্থিক খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার কাজ জোরেশোরে চলছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকও আমাদের বিশ্বব্যাপী সেরা ব্যবস্থা বা নীতিমালা খুঁজে পেতে সহায়তা করছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনর্গঠনে কাজ করছি।’

আরও পড়ুন: আট মাসে রপ্তানি বেড়েছে ১০.৫৩ শতাংশ

আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা এর ভিত মজবুত করতে চেষ্টা করব, তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। যখন পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখনও এই সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

গভর্নর বলেন, গৃহিণী স্ত্রী ও মেয়েকে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে বসিয়ে দিচ্ছি। তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। আমরা এসব চাই না। ব্যাংকের পরিচালক হতে ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট (অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যারা এখন পরিচালক আছেন, তারাসহ সবাইকে এই যাচাই–বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার গুণাবলি থাকতে হবে। ব্যাংকের মালিকদেরও এই যাচাই–বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যোগ্যতা থাকলে মালিকেরা পরিচালক হবেন, যোগ্যতা না থাকলে হবেন না। সিটি ব্যাংক এনএর মালিক কারা, তা কেউ জানেন না।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের ঋণ নিয়ে একটি চক্রের মধ্যে আছি। আমি সেই লোক নই যে চাটুকারিতা করে টাকা আনব। গত ৬ মাসে অর্থনীতি যেভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে, বিশেষ করে রিজার্ভের পতন ঠেকানো, বিনিময় হারে এক ধরনের স্থিতিশীল অবস্থা, রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ে ভালো অবস্থা, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ, সবমিলে নেতিবাচক অবস্থা থেকে চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। কেবল রাজস্ব আয়টা ঠিক রাখা গেলে মাত্র পৌনে ৫ বিলিয়ন ডলারের জন্য আইএমএফ এর কাছে ধর্না দিতে হত না।  আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর নীতি দরকার।

সম্পদের পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা কেবল আশা করতে পারি যে, বাংলাদেশে কিছু রায় পাবে এবং বিদেশে কিছু সম্পত্তি আটকানো সম্ভব হবে। অর্থ ফেরত আনা দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়া। তবে আশা শেষ হয়ে যায়নি। নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলো সফলভাবে অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

মূল্যস্ফীতি না কমলে কমবে না সুদহার: গভর্নর

আপডেট: ০৭:০৬:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই যে সুদহার কমিয়ে দেব তা হবে না। আগে মূল্যস্ফীতি কমবে তারপর পলিসি রেট আস্তে আস্তে কমানো হবে। আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ ) ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারের পথযাত্রা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ইস্কাটনে ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড  কার্যালয়ে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গভর্নর বলেন, আমি চাই পলিসি রেট বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হোক। একেবারেই না হলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমবে না। বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকা, ভারতকে দেখুন সব জায়গাতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক নীতি সুদহার আছে। তো আমাকে ওইটাতে আনতে হবে। আমি এখানও ওইখানে যায়নি। তবে সুদহার কাঠামো ও মূল্যস্ফীতি সঠিক দিকে আগাচ্ছে। সময়মতো এটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের তাড়াহুড়োর দরকার নেই। আমাকে ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই সুদহার কমিয়ে দেব তা হবে না। মূল্যস্ফীতি, ট্রেজারি  বিল, ইন্টারেস্ট পলিসির সব রেট কমবে, তখন আমি পলিসি রেট আস্তে আস্তে কমাবো, এর আগে না।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে চাই এবং আর্থিক খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার কাজ জোরেশোরে চলছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকও আমাদের বিশ্বব্যাপী সেরা ব্যবস্থা বা নীতিমালা খুঁজে পেতে সহায়তা করছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনর্গঠনে কাজ করছি।’

আরও পড়ুন: আট মাসে রপ্তানি বেড়েছে ১০.৫৩ শতাংশ

আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা এর ভিত মজবুত করতে চেষ্টা করব, তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। যখন পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখনও এই সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

গভর্নর বলেন, গৃহিণী স্ত্রী ও মেয়েকে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে বসিয়ে দিচ্ছি। তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। আমরা এসব চাই না। ব্যাংকের পরিচালক হতে ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট (অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যারা এখন পরিচালক আছেন, তারাসহ সবাইকে এই যাচাই–বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার গুণাবলি থাকতে হবে। ব্যাংকের মালিকদেরও এই যাচাই–বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যোগ্যতা থাকলে মালিকেরা পরিচালক হবেন, যোগ্যতা না থাকলে হবেন না। সিটি ব্যাংক এনএর মালিক কারা, তা কেউ জানেন না।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের ঋণ নিয়ে একটি চক্রের মধ্যে আছি। আমি সেই লোক নই যে চাটুকারিতা করে টাকা আনব। গত ৬ মাসে অর্থনীতি যেভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে, বিশেষ করে রিজার্ভের পতন ঠেকানো, বিনিময় হারে এক ধরনের স্থিতিশীল অবস্থা, রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ে ভালো অবস্থা, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ, সবমিলে নেতিবাচক অবস্থা থেকে চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। কেবল রাজস্ব আয়টা ঠিক রাখা গেলে মাত্র পৌনে ৫ বিলিয়ন ডলারের জন্য আইএমএফ এর কাছে ধর্না দিতে হত না।  আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর নীতি দরকার।

সম্পদের পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা কেবল আশা করতে পারি যে, বাংলাদেশে কিছু রায় পাবে এবং বিদেশে কিছু সম্পত্তি আটকানো সম্ভব হবে। অর্থ ফেরত আনা দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়া। তবে আশা শেষ হয়ে যায়নি। নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলো সফলভাবে অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।

ঢাকা/এসএইচ