০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণ সুবিধা বাড়ানো হবে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৪১:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৬৭ বার দেখা হয়েছে

রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নিম্নমুখী রপ্তানি আয়কে ঊর্ধ্বগামী করতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ঋণ সুবিধাসহ বিভিন্ন নীতি সহায়তা দিতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও ইডিএফ তহবিলের আকার আরও বাড়ানোর পাশাপাশি সদ্য গঠিত টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (টিডিএফ) এর আকার বাড়িয়ে সকল রপ্তানিখাতকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও তুলে ধরা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে এ উদ্যোগ কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো আংশিক রপ্তানিকারকদেরও শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবও তুলে ধরা হবে ওই সভায়।

যেসব কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি রপ্তানিও করে, তাদের আংশিক রপ্তানিকারক বলা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন নীতি প্রণোদনা থাকলেও আংশিক রপ্তানিকারকদের জন্য তা নেই। তাদেরকেও একই সুবিধা দেওয়া হলে রপ্তানি আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর রপ্তানি আয় ঊর্ধ্বগামী হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই রপ্তানি আয় বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন নীতি গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চাওয়া হবে’।

‘আমাদের লক্ষ্য দু’টি- রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা এবং উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই সক্ষমতা বাড়ানো। এজন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিতে বৈঠক হবে। এখন এজেন্ডা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে, তারপর বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ হবে’- যোগ করেন তিনি।

দেশে ভোজ্যতেল ও চিনি বিপণনের পাশাপাশি এসব পণ্য রপ্তানি করে সিটি গ্রুপ। গ্রুপটির করপোরেট এন্ড রেগুলেটরি এ্যাফেয়ার্স বিষয়ক পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা টিবিএসকে বলেন, ‘আমরা ইডিএফ কিংবা রপ্তানি অর্ডারের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা পাই না। এ ধরণের সুবিধা পেলে আমাদের রপ্তানি বাড়বে’।

বৈঠকের এজেন্ডা নির্ধারণের জন্য নভেম্বরে বিভিন্ন সংগঠনের লিখিত মতামত নিয়ে তাদের সঙ্গে একাধিক সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে এজেন্ডা চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৫ জানুয়ারি কমিটি সভা করে বেশকিছু এজেন্ডা চূড়ান্ত করেছে। সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ডিউটি ড্র ব্যাক বা শুল্ক বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে এ সুবিধাকে নগদ প্রণোদনার সঙ্গে সমন্বয় করে একত্রে দেওয়ার একটি কাঠামো প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এটি হলে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঁচামাল আমদানির সময় নির্ধারিত শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে। নগদ সহায়তার হার বাড়িয়ে রপ্তানিকারকদের ওই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ যেসব উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সারপ্লাস রয়েছে এবং যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে- অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রপ্তানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় গত কয়েক বছর ধরে রপ্তানি সংক্রান্ত সর্বোচ্চ এ ফোরামের কোন বৈঠক হয়নি। গত অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি আয়ে নিম্নমুখী প্রবণতার প্রেক্ষাপটে কমিটির সভা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। লক্ষমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি আয় বাড়ার বদলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছর পণ্য রপ্তানিখাতে আয় কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছর পণ্যখাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, গত অর্থবছর আয় হয়েছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় এক শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় আরও কমেছে।

বিকেএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সভা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক কয়েকটি সভায় আমি অংশ নিয়েছি। সেখানে আরও কিছু এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছি’।

‘বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা প্রস্তাব করেছি, রপ্তানি সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত দিতে বাণিজ্য মন্ত্রী বা সচিবকে প্রধান করে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের সব সংস্থা সিদ্ধান্ত নেবে’- যোগ করেন তিনি।

এছাড়া, অনলাইনে এক্সপোর্ট অর্ডার নেওয়ার জন্য আইসিটি ডিভিশনের মাধ্যমে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলা এবং ইইউসহ প্রধান রপ্তানি বাজারের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সভায় এজেন্ডাভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান হাতেম।

রপ্তানি বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ২১টি দেশে থাকা কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের কাজে নজরদারি বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কাউন্সিলররা রপ্তানি বাড়াতে কি উদ্যোগ নিচ্ছেন, বিদেশে কাদের সঙ্গে মিটিং করছেন, তার বিস্তারিত লিখিত তথ্য প্রতিমাসে পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

‘৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করবো আমি। ২১জন কাউন্সিলরের প্রত্যেকে যদি এক বিলিয়ন করে রপ্তানি বাড়াতে পারে, তাহলে ২১ বিলিয়ন ডলার অর্জন সম্ভব। এখন যদি অন্তত দুই বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বাড়ানো যায়, সেটিও অনেক। যেখানে ১ ডলার পরিমাণ রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, সেটিও আমরা কাজে লাগাতে চাই’- জানান বাণিজ্য সচিব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামাল আমদানিতে সহায়তা দিতে ১৯৮৯ সালে ইডিএফ তহবিল গঠন করা হলেও ২০০৯ সাল থেকে এর ব্যবহার বেড়েছে। ওই সময় তহবিলের আকার ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার, যা এখন ৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

১.৭৫ শতাংশ সুদে বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএর সদস্যরা তহবিল থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ পায়। এসোসিয়েশনের সদস্য নয় এমন এক্সপোর্টাররা ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে বাল্ক আকারে কাঁচামাল আমদানি করার ক্ষেত্রে ০.৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ পান। বন্ড সুবিধার আওতা বহির্ভূত আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ইডিএফ থেকে সুবিধা পায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি আয় বাড়তে থাকলে কাঁচামাল আমদানি বাড়বে। তখন তহবিলের আকারও বাড়বে। তবে সরকার থেকে নির্দেশনা পেলে তহবিলে আকার বাড়িয়ে আরও খাত অন্তর্ভূক্ত করা যাবে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্পের আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির উন্নয়নে ১০০০ কোটি টাকার টিডিএফ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় রপ্তানি নীতিতে নির্ধারিত অগ্রাধিকার ও বিশেষ উন্নয়নমুলকখাতভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এই তহবিল থেকে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবে। এ তহবিলের আকার আরও বাড়িয়ে সকল রপ্তানিমুখীখাতের জন্য এ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চাইবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি অর্ডারের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধার আওতায় জামানত ছাড়াই ঋণ সুবিধা পায় এবং কাঁচামাল আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সুবিধা পায় না। রপ্তানি বাড়াতে তাদেরও একই ধরণের সুবিধা দেওয়া প্রস্তাব করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

শেয়ার করুন

x
English Version

রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণ সুবিধা বাড়ানো হবে

আপডেট: ১০:৪১:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১

রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নিম্নমুখী রপ্তানি আয়কে ঊর্ধ্বগামী করতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ঋণ সুবিধাসহ বিভিন্ন নীতি সহায়তা দিতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এছাড়াও ইডিএফ তহবিলের আকার আরও বাড়ানোর পাশাপাশি সদ্য গঠিত টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (টিডিএফ) এর আকার বাড়িয়ে সকল রপ্তানিখাতকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও তুলে ধরা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে এ উদ্যোগ কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো আংশিক রপ্তানিকারকদেরও শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবও তুলে ধরা হবে ওই সভায়।

যেসব কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি রপ্তানিও করে, তাদের আংশিক রপ্তানিকারক বলা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন নীতি প্রণোদনা থাকলেও আংশিক রপ্তানিকারকদের জন্য তা নেই। তাদেরকেও একই সুবিধা দেওয়া হলে রপ্তানি আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর রপ্তানি আয় ঊর্ধ্বগামী হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই রপ্তানি আয় বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন নীতি গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চাওয়া হবে’।

‘আমাদের লক্ষ্য দু’টি- রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা এবং উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই সক্ষমতা বাড়ানো। এজন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিতে বৈঠক হবে। এখন এজেন্ডা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে, তারপর বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ হবে’- যোগ করেন তিনি।

দেশে ভোজ্যতেল ও চিনি বিপণনের পাশাপাশি এসব পণ্য রপ্তানি করে সিটি গ্রুপ। গ্রুপটির করপোরেট এন্ড রেগুলেটরি এ্যাফেয়ার্স বিষয়ক পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা টিবিএসকে বলেন, ‘আমরা ইডিএফ কিংবা রপ্তানি অর্ডারের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধা পাই না। এ ধরণের সুবিধা পেলে আমাদের রপ্তানি বাড়বে’।

বৈঠকের এজেন্ডা নির্ধারণের জন্য নভেম্বরে বিভিন্ন সংগঠনের লিখিত মতামত নিয়ে তাদের সঙ্গে একাধিক সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে এজেন্ডা চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৫ জানুয়ারি কমিটি সভা করে বেশকিছু এজেন্ডা চূড়ান্ত করেছে। সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ডিউটি ড্র ব্যাক বা শুল্ক বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে এ সুবিধাকে নগদ প্রণোদনার সঙ্গে সমন্বয় করে একত্রে দেওয়ার একটি কাঠামো প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এটি হলে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঁচামাল আমদানির সময় নির্ধারিত শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে। নগদ সহায়তার হার বাড়িয়ে রপ্তানিকারকদের ওই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ যেসব উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সারপ্লাস রয়েছে এবং যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে- অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রপ্তানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় গত কয়েক বছর ধরে রপ্তানি সংক্রান্ত সর্বোচ্চ এ ফোরামের কোন বৈঠক হয়নি। গত অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি আয়ে নিম্নমুখী প্রবণতার প্রেক্ষাপটে কমিটির সভা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। লক্ষমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি আয় বাড়ার বদলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছর পণ্য রপ্তানিখাতে আয় কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছর পণ্যখাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, গত অর্থবছর আয় হয়েছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় এক শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় আরও কমেছে।

বিকেএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সভা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক কয়েকটি সভায় আমি অংশ নিয়েছি। সেখানে আরও কিছু এজেন্ডা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছি’।

‘বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা প্রস্তাব করেছি, রপ্তানি সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত দিতে বাণিজ্য মন্ত্রী বা সচিবকে প্রধান করে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের সব সংস্থা সিদ্ধান্ত নেবে’- যোগ করেন তিনি।

এছাড়া, অনলাইনে এক্সপোর্ট অর্ডার নেওয়ার জন্য আইসিটি ডিভিশনের মাধ্যমে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলা এবং ইইউসহ প্রধান রপ্তানি বাজারের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সভায় এজেন্ডাভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান হাতেম।

রপ্তানি বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ২১টি দেশে থাকা কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের কাজে নজরদারি বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কাউন্সিলররা রপ্তানি বাড়াতে কি উদ্যোগ নিচ্ছেন, বিদেশে কাদের সঙ্গে মিটিং করছেন, তার বিস্তারিত লিখিত তথ্য প্রতিমাসে পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

‘৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করবো আমি। ২১জন কাউন্সিলরের প্রত্যেকে যদি এক বিলিয়ন করে রপ্তানি বাড়াতে পারে, তাহলে ২১ বিলিয়ন ডলার অর্জন সম্ভব। এখন যদি অন্তত দুই বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বাড়ানো যায়, সেটিও অনেক। যেখানে ১ ডলার পরিমাণ রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, সেটিও আমরা কাজে লাগাতে চাই’- জানান বাণিজ্য সচিব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামাল আমদানিতে সহায়তা দিতে ১৯৮৯ সালে ইডিএফ তহবিল গঠন করা হলেও ২০০৯ সাল থেকে এর ব্যবহার বেড়েছে। ওই সময় তহবিলের আকার ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার, যা এখন ৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

১.৭৫ শতাংশ সুদে বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএর সদস্যরা তহবিল থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ পায়। এসোসিয়েশনের সদস্য নয় এমন এক্সপোর্টাররা ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে বাল্ক আকারে কাঁচামাল আমদানি করার ক্ষেত্রে ০.৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ পান। বন্ড সুবিধার আওতা বহির্ভূত আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ইডিএফ থেকে সুবিধা পায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি আয় বাড়তে থাকলে কাঁচামাল আমদানি বাড়বে। তখন তহবিলের আকারও বাড়বে। তবে সরকার থেকে নির্দেশনা পেলে তহবিলে আকার বাড়িয়ে আরও খাত অন্তর্ভূক্ত করা যাবে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্পের আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির উন্নয়নে ১০০০ কোটি টাকার টিডিএফ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় রপ্তানি নীতিতে নির্ধারিত অগ্রাধিকার ও বিশেষ উন্নয়নমুলকখাতভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এই তহবিল থেকে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবে। এ তহবিলের আকার আরও বাড়িয়ে সকল রপ্তানিমুখীখাতের জন্য এ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চাইবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি অর্ডারের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টি সুবিধার আওতায় জামানত ছাড়াই ঋণ সুবিধা পায় এবং কাঁচামাল আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সুবিধা পায় না। রপ্তানি বাড়াতে তাদেরও একই ধরণের সুবিধা দেওয়া প্রস্তাব করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।