০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

‘লকডাউনের’ আগেই রাজস্ব ঘাটতি সাড়ে ৪৩ হাজার কোটি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৪২:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১
  • / ৪১৪২ বার দেখা হয়েছে

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাত থেকে এক লাখ ৯৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ১০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। ঘাটতি ৪৩ হাজার ৪২ কোটি নয় লাখ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

যদিও এনবিআর বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় ৫.১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু ঘাটতির অঙ্ক বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়। এরই মধ্যে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ অর্থাৎ অঘোষিত লকডাউন আরোপ হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখনও অর্থবছরের বাকি চার মাস। এ সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজস্ব আদায় করতে হবে আরও এক লাখ ৭৬ হাজার ৮৯৫ কোটি নয় লাখ টাকা।

যদিও এনবিআর ইতোমধ্যে ২৯ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সুপারিশ করেছে। যা অর্থ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ওই অঙ্ক বিবেচনায় নিলেও প্রয়োজন হবে প্রায় এক লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম করোনাকালীন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের প্রবৃদ্ধি ‘আশাব্যঞ্জক’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে স্বাভাবিক পরিবেশ ছিল। এবার করোনা মহামারির মধ্যেও এমন প্রবৃদ্ধি কম অর্জন নয়।’

এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৫.১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে মোট এক লাখ ৫৩ হাজার ১০৪ কোটি ১০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির তিন বিভাগে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে ভ্যাট খাত থেকে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ৩.২৭ শতাংশ।

 

শতাংশ হিসাবে সাফল্য দেখিয়েছে আমদানি ও রফতানি শুল্ক খাতে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭.৮৬ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। টাকার অঙ্কে ৪৬ হাজার ২৩৭ কোটি ৫৭ লাখ। অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয়কর খাতে ৪৬ হাজার ৮৭৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় এ খাতে আদায় হয়েছিল ৪৪ হাজার ৬২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি হয় ৫.০৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মার্চ মাসের রাজস্ব হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি হবে না। এর মধ্যে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হলো। দীর্ঘমেয়াদের জন্য সবকিছু বন্ধ থাকলে রাজস্ব আদায়ে কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা গত অর্থবছরের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। গত বছরের এপ্রিল মাসে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় হয়েছিল। বছর শেষে দুই লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। ঘাটতি ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আসলেই পেছনে পড়ে গেলাম।

২০২০-২১ অর্থবছরের শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে যথাক্রমে রাজস্ব আদায় হয় পাঁচ হাজার ৯২৯ কোটি চার লাখ টাকা, আট হাজার ৫৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং ছয় হাজার ৪৪৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ২০ হাজার ৯৩৮ কোটি ২১ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয় ১০.১৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিন খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৯ হাজার তিন কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণকর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।

বিজনেসজার্নাল/ঢাকা/এনইউ

শেয়ার করুন

x
English Version

‘লকডাউনের’ আগেই রাজস্ব ঘাটতি সাড়ে ৪৩ হাজার কোটি

আপডেট: ১১:৪২:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাত থেকে এক লাখ ৯৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ১০৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। ঘাটতি ৪৩ হাজার ৪২ কোটি নয় লাখ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

যদিও এনবিআর বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় ৫.১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু ঘাটতির অঙ্ক বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়। এরই মধ্যে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ অর্থাৎ অঘোষিত লকডাউন আরোপ হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখনও অর্থবছরের বাকি চার মাস। এ সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজস্ব আদায় করতে হবে আরও এক লাখ ৭৬ হাজার ৮৯৫ কোটি নয় লাখ টাকা।

যদিও এনবিআর ইতোমধ্যে ২৯ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সুপারিশ করেছে। যা অর্থ মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ওই অঙ্ক বিবেচনায় নিলেও প্রয়োজন হবে প্রায় এক লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম করোনাকালীন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের প্রবৃদ্ধি ‘আশাব্যঞ্জক’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে স্বাভাবিক পরিবেশ ছিল। এবার করোনা মহামারির মধ্যেও এমন প্রবৃদ্ধি কম অর্জন নয়।’

এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৫.১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে মোট এক লাখ ৫৩ হাজার ১০৪ কোটি ১০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির তিন বিভাগে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে ভ্যাট খাত থেকে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৮৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ৩.২৭ শতাংশ।

 

শতাংশ হিসাবে সাফল্য দেখিয়েছে আমদানি ও রফতানি শুল্ক খাতে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭.৮৬ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। টাকার অঙ্কে ৪৬ হাজার ২৩৭ কোটি ৫৭ লাখ। অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয়কর খাতে ৪৬ হাজার ৮৭৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় এ খাতে আদায় হয়েছিল ৪৪ হাজার ৬২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি হয় ৫.০৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মার্চ মাসের রাজস্ব হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি হবে না। এর মধ্যে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হলো। দীর্ঘমেয়াদের জন্য সবকিছু বন্ধ থাকলে রাজস্ব আদায়ে কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা গত অর্থবছরের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। গত বছরের এপ্রিল মাসে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় হয়েছিল। বছর শেষে দুই লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। ঘাটতি ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আসলেই পেছনে পড়ে গেলাম।

২০২০-২১ অর্থবছরের শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে যথাক্রমে রাজস্ব আদায় হয় পাঁচ হাজার ৯২৯ কোটি চার লাখ টাকা, আট হাজার ৫৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং ছয় হাজার ৪৪৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ২০ হাজার ৯৩৮ কোটি ২১ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয় ১০.১৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিন খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৯ হাজার তিন কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণকর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।

বিজনেসজার্নাল/ঢাকা/এনইউ