০৭:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

‘ল্যাবের মামা থেকে শিক্ষক হতে চাইলে সেটা মানবো কীভাবে’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:২২:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১০২৬৫ বার দেখা হয়েছে

দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ল্যাব সহকারী হিসেবে কাজ করেন মূলত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা। এ পদে তারা নিয়োগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তারা হাইকোর্টে রিট করে নিজেদের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতির আদেশ নিয়ে এসেছেন। ফলে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর বা ল্যাব সহকারীরা এখন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর বা কারিগরি শিক্ষক হতে পারবেন। এ নিয়ে মূল আপত্তি শিক্ষার্থীদের।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সব ধরনের পদোন্নতি বন্ধসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনও করছেন কারিগরির শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী- আজ রবিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে মহাসমাবেশ করেন তারা। একই দাবিতে সারাদেশে একযোগে সব পলিটেকনিকে মহাসমাবেশ কর্মসূচি করছেন।

মহাসমাবেশে আসা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা মামলা করে তাদের পক্ষে রায় এনেছেন। তারা এখন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর বা শিক্ষক হিসেবে যারা আমাদের হাতে-কলমে শেখান, তাদের পদে পদোন্নতি পাবেন। ল্যাব সহকারীদের আমরা মামা সম্বোধন করে ডাকি। এ ‘মামা’ থেকে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা এখন ‘শিক্ষক’ হবেন, সেটা আমরা মানতে পারছি না।

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শায়লা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা আমাদের ল্যাবে থাকেন, জিনিসপত্র এগিয়ে দিয়ে হেল্প করেন। তারা মূলত পিয়ন পদে আছেন। তারা যখন আমাদের শিক্ষক তথা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর হওয়ার দাবি করেন, সেটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। হঠাৎ করে তারা আমাদের মামা থেকে মাস্টার হতে চাইবেন, এটা আমরা মানবো কীভাবে?’

ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দেওয়াটা ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবির মাহমুদ বলেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে তারা চাকরি নিয়েছেন অথচ তারা হুট করে রিট করে বসলেন যে তারা শিক্ষক হবেন। বিষয়টি সারাদেশের চার লাখ পলিটেকনিক শিক্ষার্থী মানতে পারছেন না। সরকার অবিলম্বে এ মামলাকারীদের বরখাস্তসহ শাস্তির ব্যবস্থা না করলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন না।

আবু সুফিয়ান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ হয় পিএসসির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে। অথচ ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগ নিয়ে এখন তারা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি চাচ্ছেন। বিষয়টি সাধারণ মানুষ অনেকে বুঝতে পারছেন না। যারা কারিগরির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, তারা এটা ভালো বুঝবেন যে, কতবড় অনিয়ম হচ্ছে এখানে।’

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছি। কিছু বিষয় আছে, তারা না জেনে দাবি করছেন। যেটা সত্য নয়; যেমন, আদালতের রায়ে কোথাও ৩০ শতাংশ কোটা ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য রাখা হয়নি। কিছু বিষয় আছে; যেটা এ মন্ত্রণালয়ের (শিক্ষা) কারিগরি বিভাগ একা পূরণ করতে পারবে না। এর সঙ্গে অন্য মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্র রয়েছে। ফলে আমাদের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের কোনো দাবির প্রতি দ্বিমত নেই।

৬ দফা দাবি আদায়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন সারাদেশের ৪ লাখেরও বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে তারা স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেন। পরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেও দাবি আদায় না হওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন। এতে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট শুরু হয়। একই দিন সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন। এতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আলোচনায় আসে।

আরও পড়ুন: ঝামেলামুক্ত ঈদ উপহার দেওয়ায় কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ প্রধান উপদেষ্টার

এদিকে, ১৭ এপ্রিল তারা সারাদেশে রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। পরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদের আশ্বাস দেওয়া হলে কর্মসূচি শিথিল করে আলোচনা বসেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ধারাবাহিক কর্মসূচি করছেন তারা। রোববারের মহাসমাবেশ থেকেও আগামী দিনে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

‘ল্যাবের মামা থেকে শিক্ষক হতে চাইলে সেটা মানবো কীভাবে’

আপডেট: ০৪:২২:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ল্যাব সহকারী হিসেবে কাজ করেন মূলত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা। এ পদে তারা নিয়োগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তারা হাইকোর্টে রিট করে নিজেদের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতির আদেশ নিয়ে এসেছেন। ফলে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর বা ল্যাব সহকারীরা এখন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর বা কারিগরি শিক্ষক হতে পারবেন। এ নিয়ে মূল আপত্তি শিক্ষার্থীদের।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের সব ধরনের পদোন্নতি বন্ধসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনও করছেন কারিগরির শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী- আজ রবিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে মহাসমাবেশ করেন তারা। একই দাবিতে সারাদেশে একযোগে সব পলিটেকনিকে মহাসমাবেশ কর্মসূচি করছেন।

মহাসমাবেশে আসা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা মামলা করে তাদের পক্ষে রায় এনেছেন। তারা এখন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর বা শিক্ষক হিসেবে যারা আমাদের হাতে-কলমে শেখান, তাদের পদে পদোন্নতি পাবেন। ল্যাব সহকারীদের আমরা মামা সম্বোধন করে ডাকি। এ ‘মামা’ থেকে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা এখন ‘শিক্ষক’ হবেন, সেটা আমরা মানতে পারছি না।

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শায়লা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা আমাদের ল্যাবে থাকেন, জিনিসপত্র এগিয়ে দিয়ে হেল্প করেন। তারা মূলত পিয়ন পদে আছেন। তারা যখন আমাদের শিক্ষক তথা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর হওয়ার দাবি করেন, সেটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। হঠাৎ করে তারা আমাদের মামা থেকে মাস্টার হতে চাইবেন, এটা আমরা মানবো কীভাবে?’

ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দেওয়াটা ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবির মাহমুদ বলেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে তারা চাকরি নিয়েছেন অথচ তারা হুট করে রিট করে বসলেন যে তারা শিক্ষক হবেন। বিষয়টি সারাদেশের চার লাখ পলিটেকনিক শিক্ষার্থী মানতে পারছেন না। সরকার অবিলম্বে এ মামলাকারীদের বরখাস্তসহ শাস্তির ব্যবস্থা না করলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন না।

আবু সুফিয়ান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ হয় পিএসসির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে। অথচ ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগ নিয়ে এখন তারা জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে পদোন্নতি চাচ্ছেন। বিষয়টি সাধারণ মানুষ অনেকে বুঝতে পারছেন না। যারা কারিগরির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, তারা এটা ভালো বুঝবেন যে, কতবড় অনিয়ম হচ্ছে এখানে।’

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলছি। কিছু বিষয় আছে, তারা না জেনে দাবি করছেন। যেটা সত্য নয়; যেমন, আদালতের রায়ে কোথাও ৩০ শতাংশ কোটা ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য রাখা হয়নি। কিছু বিষয় আছে; যেটা এ মন্ত্রণালয়ের (শিক্ষা) কারিগরি বিভাগ একা পূরণ করতে পারবে না। এর সঙ্গে অন্য মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্র রয়েছে। ফলে আমাদের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের কোনো দাবির প্রতি দ্বিমত নেই।

৬ দফা দাবি আদায়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন সারাদেশের ৪ লাখেরও বেশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে তারা স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেন। পরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেও দাবি আদায় না হওয়ায় গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন। এতে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট শুরু হয়। একই দিন সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করেন। এতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আলোচনায় আসে।

আরও পড়ুন: ঝামেলামুক্ত ঈদ উপহার দেওয়ায় কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ প্রধান উপদেষ্টার

এদিকে, ১৭ এপ্রিল তারা সারাদেশে রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। পরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তাদের আশ্বাস দেওয়া হলে কর্মসূচি শিথিল করে আলোচনা বসেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ধারাবাহিক কর্মসূচি করছেন তারা। রোববারের মহাসমাবেশ থেকেও আগামী দিনে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা/টিএ