০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

সতর্ক করল বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রণোদনার ঋণে দ্বিগুণ সুদ আরোপ!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১
  • / ৪১৩৩ বার দেখা হয়েছে

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্ষতি পোষাতে ঘোষিত প্রণোদনার ঋণে সুদ আরোপের ক্ষেত্রে অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রণোদনার আওতায় শিল্প ও সেবা খাতে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কোনো কোনো ব্যাংক। 

বিস্ময়করভাবে সুদহারের পুরো ৯ শতাংশই অর্থাৎ দ্বিগুণ সুদ গ্রাহকের ওপর আরোপ করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহক। বিষয়টি জানার পর সব ব্যাংককে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় শিল্প ও সেবা খাতের আর্থিক প্রণোদনা বিষয়ে গত ১২ এপ্রিল একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। সার্কুলারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন ঋণ সুবিধা দেওয়ার নিয়ম বলে দেওয়া হয়। এ প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশের অর্ধেক গ্রাহক পরিশোধ করবে এবং বাকি অংশ সরকার থেকে সংশ্নিষ্ট ব্যাংক ভর্তুকি হিসেবে পাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পেরেছে এ নিয়ম কোনো কোনো ব্যাংক মানছে না। 

মঙ্গলবারের নির্দেশনায় বলা হয়, কিছু ব্যাংক আলোচ্য প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত সমুদয় সুদ গ্রাহকের ঋণ হিসাবের বিপরীতে আরোপ করছে। এতে করে গ্রাহক আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এখন সব ব্যাংকের অভিন্ন হিসাবায়ন নিশ্চিত করা এবং অতিরিক্ত সুদ আরোপের ফলে গ্রাহক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিবেচনায় এ নির্দেশনা দেওয়া হলো। এখন থেকে এ প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে শুধু সাড়ে ৪ শতাংশ গ্রাহকের ঋণ হিসাবের বিপরীতে আরোপ করা যাবে। বাকি অংশ পৃথক হিসাবে সংরক্ষণ করে সরকার থেকে পাওয়ার পর সমন্বয় করতে হবে। 

ঋণগ্রহীতা যথাসময়ে সুদ পরিশোধ না করলে ব্যাংক সমুদয় সুদ তথা ৯ শতাংশই ওই ঋণ হিসাবের বিপরীতে আরোপ করতে পারবে। এছাড়া তা গ্রাহকের দায় হিসেবে বিবেচিত হবে। ঋণ আদায়, সুদের অর্থ পুনর্ভরণসহ সার্বিক বিষয়ে এ সার্কুলারের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, অনেক ব্যাংক শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনার ঋণের সুদের ৯ শতাংশই গ্রাহকের ওপর আরোপ করছে বলে তিনি শুনেছেন। এটা অনৈতিক। কেননা প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সার্কুলারেই বলে দেওয়া হয়েছে, ৯ শতাংশের মধ্যে সাড়ে ৪ শতাংশ গ্রাহক থেকে নিতে হবে। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নির্দেশনা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই।

করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার মোট ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ১০টি প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা, রপ্তানিমুখী শিল্প ও কৃষি খাতে ভর্তুকি সুদে বিতরণের জন্য ৯৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর সিএমএসএমই খাতের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আরও ২ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে সিএমএসএমই ও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে তেমন অগ্রগতি না থাকলেও শিল্প ও সেবা খাতের ঋণ দ্রুত বিতরণ হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শিল্প ও সেবা খাতের জন্য নির্ধারিত ৩৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। মোট লক্ষ্যমাত্রার যা প্রায় ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন

x
English Version

সতর্ক করল বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রণোদনার ঋণে দ্বিগুণ সুদ আরোপ!

আপডেট: ১১:১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্ষতি পোষাতে ঘোষিত প্রণোদনার ঋণে সুদ আরোপের ক্ষেত্রে অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রণোদনার আওতায় শিল্প ও সেবা খাতে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কোনো কোনো ব্যাংক। 

বিস্ময়করভাবে সুদহারের পুরো ৯ শতাংশই অর্থাৎ দ্বিগুণ সুদ গ্রাহকের ওপর আরোপ করা হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহক। বিষয়টি জানার পর সব ব্যাংককে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় শিল্প ও সেবা খাতের আর্থিক প্রণোদনা বিষয়ে গত ১২ এপ্রিল একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। সার্কুলারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন ঋণ সুবিধা দেওয়ার নিয়ম বলে দেওয়া হয়। এ প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশের অর্ধেক গ্রাহক পরিশোধ করবে এবং বাকি অংশ সরকার থেকে সংশ্নিষ্ট ব্যাংক ভর্তুকি হিসেবে পাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পেরেছে এ নিয়ম কোনো কোনো ব্যাংক মানছে না। 

মঙ্গলবারের নির্দেশনায় বলা হয়, কিছু ব্যাংক আলোচ্য প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত সমুদয় সুদ গ্রাহকের ঋণ হিসাবের বিপরীতে আরোপ করছে। এতে করে গ্রাহক আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এখন সব ব্যাংকের অভিন্ন হিসাবায়ন নিশ্চিত করা এবং অতিরিক্ত সুদ আরোপের ফলে গ্রাহক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিবেচনায় এ নির্দেশনা দেওয়া হলো। এখন থেকে এ প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে শুধু সাড়ে ৪ শতাংশ গ্রাহকের ঋণ হিসাবের বিপরীতে আরোপ করা যাবে। বাকি অংশ পৃথক হিসাবে সংরক্ষণ করে সরকার থেকে পাওয়ার পর সমন্বয় করতে হবে। 

ঋণগ্রহীতা যথাসময়ে সুদ পরিশোধ না করলে ব্যাংক সমুদয় সুদ তথা ৯ শতাংশই ওই ঋণ হিসাবের বিপরীতে আরোপ করতে পারবে। এছাড়া তা গ্রাহকের দায় হিসেবে বিবেচিত হবে। ঋণ আদায়, সুদের অর্থ পুনর্ভরণসহ সার্বিক বিষয়ে এ সার্কুলারের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, অনেক ব্যাংক শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনার ঋণের সুদের ৯ শতাংশই গ্রাহকের ওপর আরোপ করছে বলে তিনি শুনেছেন। এটা অনৈতিক। কেননা প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সার্কুলারেই বলে দেওয়া হয়েছে, ৯ শতাংশের মধ্যে সাড়ে ৪ শতাংশ গ্রাহক থেকে নিতে হবে। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নির্দেশনা অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই।

করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার মোট ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ১০টি প্যাকেজের আওতায় সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা, রপ্তানিমুখী শিল্প ও কৃষি খাতে ভর্তুকি সুদে বিতরণের জন্য ৯৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর সিএমএসএমই খাতের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আরও ২ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে সিএমএসএমই ও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে তেমন অগ্রগতি না থাকলেও শিল্প ও সেবা খাতের ঋণ দ্রুত বিতরণ হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শিল্প ও সেবা খাতের জন্য নির্ধারিত ৩৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। মোট লক্ষ্যমাত্রার যা প্রায় ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।