০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

বিদায় প্রিয় আলী যাকের

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:০৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০
  • / ৪১৪৫ বার দেখা হয়েছে
২৭ নভেম্বর, শুক্রবার মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের সিংহপুরুষ আলী যাকের চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার অভিনীত নাটক কয়েক প্রজন্মের বেড়ে ওঠার সঙ্গী। আপন সৃষ্টিকর্ম তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। ‘আলী যাকের’ নামটি এ দেশের মঞ্চ ও টেলিভিশন ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে চিরদিনের জন্য লেখা থাকবে। বরেণ্য এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি তারকাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি …
আসাদুজ্জামান নূর
আমাদের সম্পর্ক ৫০ বছরের। আমার নাটক, ক্যারিয়ার সবকিছু তার হাতে গড়ে তোলা। আমাদের সস্পর্ক পরিবারের চেয়েও বেশি ছিল। আমি যখন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে কাজ শুরু করি তখন আমাদের নাটক নিয়ে কী উন্মাদনা! খাওয়া নেই, দাওয়া নেই। কোনোক্রমে দিনের চাকরি শেষ করেই ছুট ‘ছটলু’র বাড়িতে। ‘ছটলু’ হলো আলী যাকেরের ডাক নাম। তখন রাজারবাগে থাকতেন তিনি। বাড়ির নাম ছিল ‘ছায়ানীড়’। দোতলা বাড়ির ওপর তলায় থাকতেন ব্যচেলর আলী যাকের। আমিও ব্যাচেলর। নাটকের মহড়া শেষে চলে যেতাম তার বাড়িতে। সেখানে কখনও গভীর রাত পর্যন্ত, কখনও সারারাত আড্ডা চলত। আহারে কী মধুর সেই স্মৃতিগুলো। আজ আলী যাকের চলে গেলেন। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন আজীবন।

নওয়াজীশ আলী খান
সকালেই যখন আলী যাকেরের চলে যাওয়ার খবর শুনলাম তখন অন্য সবার মতো আমার হৃদয় ভেঙে গেল। তিনি সবার প্রাণপ্রিয় ছিলেন। এমন একজন মানুষকে হারানোর বেদনা কষ্টদায়ক। মঞ্চ, টেলিভিশনে অভিনয় এবং খবরের কাগজগুলোতে লেখালেখির মাধ্যমে তিনি রেখে গেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। আমাদের দেশের বিজ্ঞাপন শিল্পের নেতা হিসেবে ছিলেন অতুলনীয়। অনেক সৃজনশীল ক্ষেত্রে অসামান্য ব্যক্তিত্ব হারিয়েছি। তার বিদেহী আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক! আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

আবুল হায়াত
মৃত্যু অনিবার্য। একদিন আমাকেও যেতে হবে। তবে এমন ভোরে আলী যাকের চলে যাওয়ার খবর শুনে দিন শুরু হবে ভাবিনি। আলী যাকের যখন হাসপাতালে ভর্তি হয় মনে হয়েছিল কিছু হবে না। তবে ফিরে এমন ধাক্কা দিয়ে চলে যাবে কল্পনাতেও আসেনি। যাকের তো আমার পারিবারিক বন্ধু ছিল। আমার সন্তানরা তাকে মামা ডাকে। কারণ, আমার স্ত্রীর মাধ্যমে আলী যাকেরের সঙ্গে আমার পরিচয়। সেটা ১৯৭২ সালে। যখন সে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে মাত্র এলো। ‘বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে অভিনয়ের জন্য। একসঙ্গে মঞ্চে কাজ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। অদ্ভুত অভিনয় ক্ষমতা ছিল তার মাঝে। তার সঙ্গে টিভিতে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। আমার সঙ্গে কোনো নাটকে আলী যাকের থাকা মানেই অর্ধেক চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা। ক্যান্সার নিয়েও আলী যাকের গত ৪ বছর মঞ্চে কাজ করেছে। অভিনয়ের প্রতি কতটা টান থাকলে এমনটি করতে পারে। আজ কাছের মানুষটি নেই ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ
তার সঙ্গে আমার পাঁচ দশকের বন্ধুত্ব। একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আবার সেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগুলোকে বাস্তবায়ন, সবই একসঙ্গে করেছি। মঞ্চে যেরকম দুর্দান্ত সাহসী অভিনেতা ছিলেন, বাস্তবতায়ও মানুষ হিসেবেও ছিলেন তেমন সাহসী। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলো তো মাইলস্টোন একেকটা। আমাদের গ্যালিলিওর মতো আরেকটি সৃষ্টি খুব কঠিন। এগুলো নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করা যায়, কিন্তু এরকম আর ঘটবে না! তিনি নির্দেশক হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত কৌশলী। বাংলা নাট্যমঞ্চে আলী যাকেরের চরিত্রের শেষ নেই। ‘গ্যালিলিও’ ছাড়াও ‘দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ নাটকে নাম ভূমিকায় তার অভিনয় ছিল দেখার মতো। চরিত্রকে তিনি উচ্চমার্গীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এরকম সফল একজন মানুষের করোনায় চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখের, কষ্টের।

মামুনুর রশীদ
বাংলার মঞ্চ নাটকের একটি স্তম্ভের মৃত্যু হয়েছে। বাংলা নাটক যারা বুঝতে পারতেন, তিনি তাদেরই একজন ছিলেন। বাংলাদেশের নাটকের প্রারম্ভিককালে যে উত্থান হয়েছিল, এর পেছনে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মঞ্চে তিনি বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করে রাখতে পারতেন। বিশেষ করে নূরলদীনে তার অভিনয় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলা মঞ্চ নাটকের ইতিহাসে।

রামেন্দু মজুমদার
২০২০ প্রিয়জন হারানোর বছর। আমরাও একদিন হারিয়ে যাব। আজ আমাদের মঞ্চনাটকের একটা বড় স্তম্ভের পতন হলো। আলী যাকেরের মতো এত বড়মাপের অভিনেতা আমরা আর পাব না। ‘গ্যালিলিও’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ তাকে ছাড়া কল্পনা করা যায় না। আলী যাকের আর ফেরদৌসীকে [ফেরদৌসী মজুমদার] নিয়ে ‘প্রেমপত্র’ নামে একটি নাটকের পরিকল্পনা করেছিলাম। দুই বছর ধরে প্রতীক্ষাও করছিলাম। কিন্তু আর নাটকটি করা হবে না। আলী যাকের পরিপূর্ণ জীবনযাপন করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি শীর্ষস্থানে পৌঁছেছেন। নাটকের দলের সংগঠক হিসেবেও চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছিলেন।

ড. ইনামুল হক
তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ১৯৬০ সাল থেকে। তার ব্যাপারে শুধু একটি কথাই বলব- একজন বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন। সব দিক থেকে তার মতো অভিনেতা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে।

তার কালজয়ী মঞ্চ নাটক
– কবর

– বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ
– বাকি ইতিহাস
– বিদগ্ধ রমণীকুল
– তৈল সংকট
– এই নিষিদ্ধ পল্লীতে
– দেওয়ান গাজীর কিসসা
– সৎ মানুষের খোঁজে
– অচলায়তন
– কোপেনিকের ক্যাপ্টেন
– ম্যাকবেথ
– টেমপেস্ট
– নূরলদীনের সারাজীবন
– কবর দিয়ে দাও
– গ্যালিলিও
– কাঁঠাল বাগান [চেরি অরচার্ড]

তার কালজয়ী চলচ্চিত্র
– আগামী

– নদীর নাম মধুমতী
– লালসালু
– রাবেয়া

তার কালজয়ী টিভি নাটক
– বহুব্রীহি

– আজ রবিবার
– একদিন হঠাৎ
– নীতু তোমাকে ভালোবাসি
– পাথর সময়
– অচিনবৃক্ষ
– আইসক্রিম
– পাণ্ডুলিপি
– গণি মিয়ার পাথর

সম্মাননা
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন

এক নজরে
– নাম :আলী যাকের

– ডাক নাম :ছটলু
– জন্মতারিখ :৬ নভেম্বর ১৯৪৪
– জন্মস্থান :চট্টগ্রাম
– বাবা :মোহাম্মদ তাহের
– মা :রিজিয়া
– স্ত্রী :সারা যাকের
– ছেলে :ইরেশ যাকের
– মেয়ে :শ্রিয়া সর্বজয়া
– প্রথম মঞ্চে অভিনয় :’কবর’ [১৯৭২]
– প্রথম নির্দেশনা :’বাকি ইতিহাস’ [১৯৭৩]
– প্রথম চলচ্চিত্র : আগামী
– আনন্দের স্মৃতি :ছেলে ইশের যেদিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন
– আবার জন্ম নিলে :আলী যাকের হয়েই জন্ম নিতে চাইতেন
– ভালোলাগা :ছবি তুলতে ভালোবাসতেন
– মৃত্যু :২৭ নভেম্বর ২০২০

শেয়ার করুন

x
English Version

বিদায় প্রিয় আলী যাকের

আপডেট: ১২:০৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০
২৭ নভেম্বর, শুক্রবার মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের সিংহপুরুষ আলী যাকের চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার অভিনীত নাটক কয়েক প্রজন্মের বেড়ে ওঠার সঙ্গী। আপন সৃষ্টিকর্ম তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। ‘আলী যাকের’ নামটি এ দেশের মঞ্চ ও টেলিভিশন ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে চিরদিনের জন্য লেখা থাকবে। বরেণ্য এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি তারকাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি …
আসাদুজ্জামান নূর
আমাদের সম্পর্ক ৫০ বছরের। আমার নাটক, ক্যারিয়ার সবকিছু তার হাতে গড়ে তোলা। আমাদের সস্পর্ক পরিবারের চেয়েও বেশি ছিল। আমি যখন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে কাজ শুরু করি তখন আমাদের নাটক নিয়ে কী উন্মাদনা! খাওয়া নেই, দাওয়া নেই। কোনোক্রমে দিনের চাকরি শেষ করেই ছুট ‘ছটলু’র বাড়িতে। ‘ছটলু’ হলো আলী যাকেরের ডাক নাম। তখন রাজারবাগে থাকতেন তিনি। বাড়ির নাম ছিল ‘ছায়ানীড়’। দোতলা বাড়ির ওপর তলায় থাকতেন ব্যচেলর আলী যাকের। আমিও ব্যাচেলর। নাটকের মহড়া শেষে চলে যেতাম তার বাড়িতে। সেখানে কখনও গভীর রাত পর্যন্ত, কখনও সারারাত আড্ডা চলত। আহারে কী মধুর সেই স্মৃতিগুলো। আজ আলী যাকের চলে গেলেন। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন আজীবন।

নওয়াজীশ আলী খান
সকালেই যখন আলী যাকেরের চলে যাওয়ার খবর শুনলাম তখন অন্য সবার মতো আমার হৃদয় ভেঙে গেল। তিনি সবার প্রাণপ্রিয় ছিলেন। এমন একজন মানুষকে হারানোর বেদনা কষ্টদায়ক। মঞ্চ, টেলিভিশনে অভিনয় এবং খবরের কাগজগুলোতে লেখালেখির মাধ্যমে তিনি রেখে গেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। আমাদের দেশের বিজ্ঞাপন শিল্পের নেতা হিসেবে ছিলেন অতুলনীয়। অনেক সৃজনশীল ক্ষেত্রে অসামান্য ব্যক্তিত্ব হারিয়েছি। তার বিদেহী আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক! আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

আবুল হায়াত
মৃত্যু অনিবার্য। একদিন আমাকেও যেতে হবে। তবে এমন ভোরে আলী যাকের চলে যাওয়ার খবর শুনে দিন শুরু হবে ভাবিনি। আলী যাকের যখন হাসপাতালে ভর্তি হয় মনে হয়েছিল কিছু হবে না। তবে ফিরে এমন ধাক্কা দিয়ে চলে যাবে কল্পনাতেও আসেনি। যাকের তো আমার পারিবারিক বন্ধু ছিল। আমার সন্তানরা তাকে মামা ডাকে। কারণ, আমার স্ত্রীর মাধ্যমে আলী যাকেরের সঙ্গে আমার পরিচয়। সেটা ১৯৭২ সালে। যখন সে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে মাত্র এলো। ‘বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে অভিনয়ের জন্য। একসঙ্গে মঞ্চে কাজ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। অদ্ভুত অভিনয় ক্ষমতা ছিল তার মাঝে। তার সঙ্গে টিভিতে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি। আমার সঙ্গে কোনো নাটকে আলী যাকের থাকা মানেই অর্ধেক চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা। ক্যান্সার নিয়েও আলী যাকের গত ৪ বছর মঞ্চে কাজ করেছে। অভিনয়ের প্রতি কতটা টান থাকলে এমনটি করতে পারে। আজ কাছের মানুষটি নেই ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ
তার সঙ্গে আমার পাঁচ দশকের বন্ধুত্ব। একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আবার সেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগুলোকে বাস্তবায়ন, সবই একসঙ্গে করেছি। মঞ্চে যেরকম দুর্দান্ত সাহসী অভিনেতা ছিলেন, বাস্তবতায়ও মানুষ হিসেবেও ছিলেন তেমন সাহসী। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলো তো মাইলস্টোন একেকটা। আমাদের গ্যালিলিওর মতো আরেকটি সৃষ্টি খুব কঠিন। এগুলো নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করা যায়, কিন্তু এরকম আর ঘটবে না! তিনি নির্দেশক হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত কৌশলী। বাংলা নাট্যমঞ্চে আলী যাকেরের চরিত্রের শেষ নেই। ‘গ্যালিলিও’ ছাড়াও ‘দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ নাটকে নাম ভূমিকায় তার অভিনয় ছিল দেখার মতো। চরিত্রকে তিনি উচ্চমার্গীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এরকম সফল একজন মানুষের করোনায় চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখের, কষ্টের।

মামুনুর রশীদ
বাংলার মঞ্চ নাটকের একটি স্তম্ভের মৃত্যু হয়েছে। বাংলা নাটক যারা বুঝতে পারতেন, তিনি তাদেরই একজন ছিলেন। বাংলাদেশের নাটকের প্রারম্ভিককালে যে উত্থান হয়েছিল, এর পেছনে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মঞ্চে তিনি বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করে রাখতে পারতেন। বিশেষ করে নূরলদীনে তার অভিনয় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলা মঞ্চ নাটকের ইতিহাসে।

রামেন্দু মজুমদার
২০২০ প্রিয়জন হারানোর বছর। আমরাও একদিন হারিয়ে যাব। আজ আমাদের মঞ্চনাটকের একটা বড় স্তম্ভের পতন হলো। আলী যাকেরের মতো এত বড়মাপের অভিনেতা আমরা আর পাব না। ‘গ্যালিলিও’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ তাকে ছাড়া কল্পনা করা যায় না। আলী যাকের আর ফেরদৌসীকে [ফেরদৌসী মজুমদার] নিয়ে ‘প্রেমপত্র’ নামে একটি নাটকের পরিকল্পনা করেছিলাম। দুই বছর ধরে প্রতীক্ষাও করছিলাম। কিন্তু আর নাটকটি করা হবে না। আলী যাকের পরিপূর্ণ জীবনযাপন করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি শীর্ষস্থানে পৌঁছেছেন। নাটকের দলের সংগঠক হিসেবেও চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছিলেন।

ড. ইনামুল হক
তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ১৯৬০ সাল থেকে। তার ব্যাপারে শুধু একটি কথাই বলব- একজন বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন। সব দিক থেকে তার মতো অভিনেতা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে।

তার কালজয়ী মঞ্চ নাটক
– কবর

– বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ
– বাকি ইতিহাস
– বিদগ্ধ রমণীকুল
– তৈল সংকট
– এই নিষিদ্ধ পল্লীতে
– দেওয়ান গাজীর কিসসা
– সৎ মানুষের খোঁজে
– অচলায়তন
– কোপেনিকের ক্যাপ্টেন
– ম্যাকবেথ
– টেমপেস্ট
– নূরলদীনের সারাজীবন
– কবর দিয়ে দাও
– গ্যালিলিও
– কাঁঠাল বাগান [চেরি অরচার্ড]

তার কালজয়ী চলচ্চিত্র
– আগামী

– নদীর নাম মধুমতী
– লালসালু
– রাবেয়া

তার কালজয়ী টিভি নাটক
– বহুব্রীহি

– আজ রবিবার
– একদিন হঠাৎ
– নীতু তোমাকে ভালোবাসি
– পাথর সময়
– অচিনবৃক্ষ
– আইসক্রিম
– পাণ্ডুলিপি
– গণি মিয়ার পাথর

সম্মাননা
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন

এক নজরে
– নাম :আলী যাকের

– ডাক নাম :ছটলু
– জন্মতারিখ :৬ নভেম্বর ১৯৪৪
– জন্মস্থান :চট্টগ্রাম
– বাবা :মোহাম্মদ তাহের
– মা :রিজিয়া
– স্ত্রী :সারা যাকের
– ছেলে :ইরেশ যাকের
– মেয়ে :শ্রিয়া সর্বজয়া
– প্রথম মঞ্চে অভিনয় :’কবর’ [১৯৭২]
– প্রথম নির্দেশনা :’বাকি ইতিহাস’ [১৯৭৩]
– প্রথম চলচ্চিত্র : আগামী
– আনন্দের স্মৃতি :ছেলে ইশের যেদিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন
– আবার জন্ম নিলে :আলী যাকের হয়েই জন্ম নিতে চাইতেন
– ভালোলাগা :ছবি তুলতে ভালোবাসতেন
– মৃত্যু :২৭ নভেম্বর ২০২০