০৬:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

লকডাউনের মাস ছিল বিনিয়োগকারীদের আশা জাগানিয়ার সোনালি দিন!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:৩৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মে ২০২১
  • / ৪১৭৯ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ লকডাউনের শুরুতে আতঙ্ক কাজ করলেও প্রায় এক মাসের লকডাউনে স্বস্তিতে ছিল পুঁজিবাজার। ৫ মে লকডাইন শুরু হওয়ার আগের দিন এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সূচকের পতন হলেও লকডাউন শুরু হওয়ার পর সূচক বেড়েছে। এদিন প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ৮৮ পয়েন্ট। ৬ এপ্রিল বাড়ে আরও ১০৩ পয়েন্ট।

৭ এপ্রিল বাড়ে ৫৫ পয়েন্ট। এদিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। এরপর ৮ এপ্রিল ও ৯ এপ্রিল পর্যায়ক্রমে ৮২ পয়েন্ট ও ৯০ পয়ন্টে কমে আসে সূচক। কিন্তু কেন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া হয়েছে সেটি ব্যাখ্যা আসার পর অনেকটা স্থিতিশীল হয় ১১ এপ্রিল থেকে। শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির পর লেনদেনে সূচক বাড়ে ৯০ পয়েন্ট। তারপর টানা ১০ কার্যদিবস ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উত্থান ছিল সূচকের।

দুই সপ্তাহ উত্থান শেষে ২৬ এপ্রিল এক দিন বেশ বড় দরপতনই দেখে পুঁজিবাজার। সেদিন সূচক হারায় ৬৩ পয়েন্ট। এরপর আবার তিন কার্যদিবস যথাক্রমে ৩৯, ১৮ ও ৪১ পয়েন্ট বাড়ার পর এক দিন সূচক কমে ছয় পয়েন্ট।

এরপর দুই-এক দিন উঠানামা হলেও ঈদের আগে টানা বেড়েছে সূচক। ৪ মে থেকে চার কার্যদিবসে যথাক্রমে ২৪, ৫৩, ১৮, ৩৯, ৭৯ ও ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ঈদের ছুটিতে যায় পুঁজিবাজার।

লকডাউনের এ সময়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে পাঁচ গুণ। লকডাউন শুরু হওয়ার পর ৫ এপ্রিল পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। ঈদে পুঁজিবাজার বন্ধ হওয়ার আগে ১২ মে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এই সময়ে টানা ৯ দিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে।

প্রথম দিকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমলেও এমন উত্থানে দর ঘুরে দাঁড়ায় প্রায় প্রতিটি কোম্পানির। আলোচ্য সময়ে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রথম দুদিন যে ৫০ শতাংশ করে শেয়ারদর বাড়তে পারবে তা বাতিল করা হয় এ লকডাউনে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) শেয়ার এপ্রিল মাস থেকে আনুপাতিক হারে বণ্টনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এ সময়ে নতুন কোনো কোম্পানি না আসায় তা চলতি মে মাস থেকে কার্যকর হচ্ছে। এজন্য একজন বিও হিসাব থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকলেও কেবল এ সুবিধা পাওয়া যাবে।

বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে এমন ধারণা করা হলেও যেদিন এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, সেদিনই সূচক বাড়ে ১৮ পয়েন্ট। আর লেনদেন আরও ৪ কোটি টাকা বেড়ে হয় প্রায় ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। আর টানা ৯ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ঈদের আগে যেভাবে পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষ হয়েছে, তাতে সব খাতের বিনিয়োগকারীরা কম-বেশি মুনাফা পেয়েছেন। তবে বিমা খাত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও সজাগ থাকা উচিত ছিল। তারা জানান,  লকডাউনের মধ্যে যেভাবে লেনদেন হয়েছে তা আমরা ভাবতে পারিনি। কারণ লকডাউন শুরু হওয়ার আগে আতঙ্কে অনেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন। কিন্তু লকডাউন শুরু ‍হওয়ার পর পুঁজিবাজারের অবস্থা পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই আবার পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহী হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঈদের আগে পুঁজিবাজারের লেনদেন যেভাবে শেষ হয়েছে তা পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থাশীল করবে। তারা মনে করছেন, ঈদের আগে এমন পুঁজিবাজার সচরাচর দেখা যায় না। মূলত এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা উত্তোলনের কারণে মন্দাবস্থা থাকে। কিন্তু এবার ছিল ভিন্ন চিত্র। এতে ভালো যেটা হয়েছে, ঈদের পর যখন পুঁজিবাজার লেনদেন শুরু হবে তখন কেউ আতঙ্কে বিনিয়োগ করবেন না। তখন যেসব খাতের শেয়ারের দর এখনও কম, সেগুলোতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়াই উত্তম হবে।

ঢাকা/এনইউ

শেয়ার করুন

x
English Version

লকডাউনের মাস ছিল বিনিয়োগকারীদের আশা জাগানিয়ার সোনালি দিন!

আপডেট: ০৫:৩৯:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদকঃ লকডাউনের শুরুতে আতঙ্ক কাজ করলেও প্রায় এক মাসের লকডাউনে স্বস্তিতে ছিল পুঁজিবাজার। ৫ মে লকডাইন শুরু হওয়ার আগের দিন এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সূচকের পতন হলেও লকডাউন শুরু হওয়ার পর সূচক বেড়েছে। এদিন প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ৮৮ পয়েন্ট। ৬ এপ্রিল বাড়ে আরও ১০৩ পয়েন্ট।

৭ এপ্রিল বাড়ে ৫৫ পয়েন্ট। এদিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। এরপর ৮ এপ্রিল ও ৯ এপ্রিল পর্যায়ক্রমে ৮২ পয়েন্ট ও ৯০ পয়ন্টে কমে আসে সূচক। কিন্তু কেন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া হয়েছে সেটি ব্যাখ্যা আসার পর অনেকটা স্থিতিশীল হয় ১১ এপ্রিল থেকে। শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির পর লেনদেনে সূচক বাড়ে ৯০ পয়েন্ট। তারপর টানা ১০ কার্যদিবস ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উত্থান ছিল সূচকের।

দুই সপ্তাহ উত্থান শেষে ২৬ এপ্রিল এক দিন বেশ বড় দরপতনই দেখে পুঁজিবাজার। সেদিন সূচক হারায় ৬৩ পয়েন্ট। এরপর আবার তিন কার্যদিবস যথাক্রমে ৩৯, ১৮ ও ৪১ পয়েন্ট বাড়ার পর এক দিন সূচক কমে ছয় পয়েন্ট।

এরপর দুই-এক দিন উঠানামা হলেও ঈদের আগে টানা বেড়েছে সূচক। ৪ মে থেকে চার কার্যদিবসে যথাক্রমে ২৪, ৫৩, ১৮, ৩৯, ৭৯ ও ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ঈদের ছুটিতে যায় পুঁজিবাজার।

লকডাউনের এ সময়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে পাঁচ গুণ। লকডাউন শুরু হওয়ার পর ৫ এপ্রিল পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। ঈদে পুঁজিবাজার বন্ধ হওয়ার আগে ১২ মে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এই সময়ে টানা ৯ দিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে।

প্রথম দিকে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমলেও এমন উত্থানে দর ঘুরে দাঁড়ায় প্রায় প্রতিটি কোম্পানির। আলোচ্য সময়ে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রথম দুদিন যে ৫০ শতাংশ করে শেয়ারদর বাড়তে পারবে তা বাতিল করা হয় এ লকডাউনে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) শেয়ার এপ্রিল মাস থেকে আনুপাতিক হারে বণ্টনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এ সময়ে নতুন কোনো কোম্পানি না আসায় তা চলতি মে মাস থেকে কার্যকর হচ্ছে। এজন্য একজন বিও হিসাব থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকলেও কেবল এ সুবিধা পাওয়া যাবে।

বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে এমন ধারণা করা হলেও যেদিন এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, সেদিনই সূচক বাড়ে ১৮ পয়েন্ট। আর লেনদেন আরও ৪ কোটি টাকা বেড়ে হয় প্রায় ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। আর টানা ৯ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ঈদের আগে যেভাবে পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষ হয়েছে, তাতে সব খাতের বিনিয়োগকারীরা কম-বেশি মুনাফা পেয়েছেন। তবে বিমা খাত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও সজাগ থাকা উচিত ছিল। তারা জানান,  লকডাউনের মধ্যে যেভাবে লেনদেন হয়েছে তা আমরা ভাবতে পারিনি। কারণ লকডাউন শুরু হওয়ার আগে আতঙ্কে অনেকে শেয়ার বিক্রি করেছেন। কিন্তু লকডাউন শুরু ‍হওয়ার পর পুঁজিবাজারের অবস্থা পরিবর্তন হওয়ায় অনেকেই আবার পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহী হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঈদের আগে পুঁজিবাজারের লেনদেন যেভাবে শেষ হয়েছে তা পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থাশীল করবে। তারা মনে করছেন, ঈদের আগে এমন পুঁজিবাজার সচরাচর দেখা যায় না। মূলত এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা উত্তোলনের কারণে মন্দাবস্থা থাকে। কিন্তু এবার ছিল ভিন্ন চিত্র। এতে ভালো যেটা হয়েছে, ঈদের পর যখন পুঁজিবাজার লেনদেন শুরু হবে তখন কেউ আতঙ্কে বিনিয়োগ করবেন না। তখন যেসব খাতের শেয়ারের দর এখনও কম, সেগুলোতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়াই উত্তম হবে।

ঢাকা/এনইউ