০৪:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

পুঁজিবাজারে গত ১৪ বছরে কোন ভালো আইপিও আসেনি: সাইফুল ইসলাম

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৪৩:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • / ১১১৭১ বার দেখা হয়েছে

গত ১৪ বছরে পুঁজিবাজারে কোন ভালো আইপিও আসেনি, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশার বিষয়। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ছাড়ছেন। বাজারের গতিশীলতা ধরে রাখতে ভালো আইপিওর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার। আমরা ভেবেছিলাম এবারের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে সে সংক্রান্ত একটি দিক নির্দেশনা থাকবে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। তবে বাজেট প্রস্তাবনায় সে সংক্রান্ত কোন দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সংশোধিত বাজেটে কিছু সুবিধা রাখা বাধ্যতামুলক নয়তো কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী হবে না।

মঙ্গলবার (১১ জুন) প্রস্তাবিত বাজেটের উপর ডিবিএর প্রতিক্রিয়া বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, গত এক দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্তির ক্ষেত্রে খুব বেশী অগ্রগতি হয়নি। আমরা পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করার অনুরোধ করছি। উক্ত বিষয়ে একটি পরিস্কার রোডম্যাপ দেয়া হলে বাজার মানসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজে প্রতিযোগীতামূলক ভাল ব্যবসা তৈরীতে উৎসাহিত হবে।

পরে সংশোধিত বাজেটে ডিবিএর ৭ প্রস্তাব সাংবাদিকদের সামনে তুলে দরেন ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম।

এসময় মূলধনী আয়কে করমুক্তকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন আয়ের ৫০ লাখ টাকার অধিক আয়ের উপর স্তরভিত্তিক করারোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে, কোন সিকিউরিটিজ বিনিয়োগের সময়কাল ৫ বছর অতিক্রম করলে উক্ত বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়। গত কয়েকবছর ধরে মন্দা বাজার পরিস্থিতি এবং আর্থিক সংকটে থাকা বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধন আয়ের উপর থেকে করারোপের প্রস্তাব রহিতকরণের জন্য আমরা জোর সুপারিশ করছি।

ব্রোকারেজের জন্য করহার যৌক্তিককরণ প্রসঙ্গে ডিবিএর এই প্রেসিডেন্ট বলেন, বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজগুলো দুটি স্তরে কর প্রদান করে। প্রথমত সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের উপর দশমিক ০৫ শতাংশ, দ্বিতীয়ত কর্পোরেট আয়কর হিসেবে, যেটি বেশী হয় তা চুড়ান্ত কর হিসেবে গন্য করা হয়। এ দ্বিস্তরের ব্যবস্থার ফলে মন্দা বাজার পরিস্থিতিতে ব্রোকারদের ক্ষতি করে। কিছু ক্ষেত্রে এই করের হার ৪০ শতাংশ বা তার বেশী ছাড়িয়ে যায়।

তিনি বলেন, ব্রোকাররা বাজারের অন্যতম অংশীজন। বাজারে বিনিয়োগকারী এনে বাজারকে বিনিয়োগ সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারা করে থাকে। ব্রোকারদের আর্থিক সংকট ও অক্ষমতা বাজারের উন্নয়নকে চরমভাবে ব্যহত করে। তাই পুঁজিবাজারকে টিকিয়ে রাখতে এবং এর উন্নয়নে ব্রোকারদের সক্রিয় ও সচল রাখা অত্যাবশ্যক।

আরও পড়ুন: রিং শাইন টেক্সটাইলের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাজস্ব করহার দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে দশমিক ০২৫ শতাংশ হ্রাসকরণ এবং কর্পোরেট আয়করকে ব্রোকারেজের জন্য চুড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনাকরণ করতে হবে। মূলধন ক্ষতির উপর বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টীকরণ: প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন লাভের উপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ মূলধনী লোকসানের উপর ৬ বছর পর্যন্ত মূলধনী ক্ষতির জের বহন কিংবা সমন্বয় করার বিধান বিদ্যমান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগকারীর মূলধন ক্ষতির বিষয়ে থাকা বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা দেওয়াসহ এটিকে ৭ বছর পর্যন্ত প্রদেয় আয়করের বিপরীতে বহন বা সমন্বয় করার সুপারিশ করছি।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, গত কয়েকবছর ধরে বাজারে মন্দা বিরাজ করায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানের কবলে পড়ে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন ৫০ লাখের অধিক মুলধন লাভের উপর করারোপের সাথে বিদ্যমান মূলধনী লোকসানের জের বহন কিংবা সমন্বয় করার অনুমতি দিলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ধরে রাখতে এবং বাজারের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন লাভবান হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে বাজারকে সমৃদ্ধশালী করতে সক্ষম হবে এবং এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির রোডম্যাপ প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আশু বাস্তবায়নে সরকার ও বাজার সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাজার প্রসার হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

অতালিকাভুক্ত সংস্থাগুলোর জন্য কর্পোরেট করের হার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হারের বাহিরে বৃদ্ধিকরণ প্রসঙ্গে ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হার ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু, অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের হার ব্যক্তিশ্রেনীর করের হারের নীচে। অন্যদিকে কর্পোরেটের ক্ষেত্রে তালিকাভূক্ত এবং অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে করের পার্থক্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ এ নামিয়ে আনা হয়েছে। তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক কর্মকান্ডে অবদান, পুঁজিবাজারে প্রচার বিবেচনা করে ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট করের হারের মধ্যে পার্থক্য বিবেচনায় আমাদের প্রস্তাব হলো ব্যক্তিশ্রেণীর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশের উর্ধে অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করহার নির্ধারন করা। নিয়মিত এবং সম্পূর্ন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের শর্তে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার কমানোর সুপারিশ করছি।

তিনি বলেন, নতুন বিও আইডিগুলোকে ৩ বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি হবে তথা বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে বাজারের মূলধন বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কর্মকান্ডে নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজন। দু:খজনকভাবে আমাদের বাজারে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ সক্রিয় বিও একাউন্ট আছে, যেখানে ব্যাংকিং এবং এমএফএস কার্যক্রমে যথাক্রমে ২৮ শতাংশ এবং ৬৭ শতাংশ রয়েছে। যদি ব্যাংকিং এবং এমএফএস একাউন্টগুলিকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগে নিয়ে আসা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের জন্য মূলধনী লাভ, সুদ এবং লভ্যাংশ আয় তৈরী হবে । এর ফলে সরকারের যথেষ্ট পরিমান কর জেনারেট করা সম্ভব হবে।

এমন পরিস্থিতিতে আমরা বাজারের সম্প্রসারনের জন্য আমরা চাই সকল নতুন বিও একাউন্টগুলিকে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের সীমা সাপেক্ষে ৩ বছর পর্যন্ত সময়কালের জন্য কর বহির্ভূত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করা হোক। এবং শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রবীণ নাগরিকদের মাধ্যমে পরিচালিত বিও হিসাবধারীদেরকে লাভের জন্য শূণ্য হারে কর সুবিধার অনুমতি প্রদান করা হোক।

মার্জিন লসকে কর ছাড়যোগ্য হিসেবে অনুমতি দেয়া প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম বলেন, মার্জিন লস বাজারের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। দীর্ঘদিন ধরে থাকা এরুপ মার্জিন লসের কারনে অসংখ্য বিনিয়োগ একাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, যা তারল্য সংকটের মুখে গত কয়েকবছরে গুরুতর হয়ে উঠেছে। মার্জিন লসে থাকা এই জাতীয় বিনিয়োগকে আর্থিকভাবে পূনরুদ্ধার করতে এবং বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা এনবিআরকে ঋনদাতাদের জন্য একটি প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কর কর্তনযোগ্য হিসেবে মার্জিন লসের অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

পুঁজিবাজারে গত ১৪ বছরে কোন ভালো আইপিও আসেনি: সাইফুল ইসলাম

আপডেট: ০৪:৪৩:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

গত ১৪ বছরে পুঁজিবাজারে কোন ভালো আইপিও আসেনি, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশার বিষয়। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার ছাড়ছেন। বাজারের গতিশীলতা ধরে রাখতে ভালো আইপিওর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার। আমরা ভেবেছিলাম এবারের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে সে সংক্রান্ত একটি দিক নির্দেশনা থাকবে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। তবে বাজেট প্রস্তাবনায় সে সংক্রান্ত কোন দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সংশোধিত বাজেটে কিছু সুবিধা রাখা বাধ্যতামুলক নয়তো কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী হবে না।

মঙ্গলবার (১১ জুন) প্রস্তাবিত বাজেটের উপর ডিবিএর প্রতিক্রিয়া বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, গত এক দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্তির ক্ষেত্রে খুব বেশী অগ্রগতি হয়নি। আমরা পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করার অনুরোধ করছি। উক্ত বিষয়ে একটি পরিস্কার রোডম্যাপ দেয়া হলে বাজার মানসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজে প্রতিযোগীতামূলক ভাল ব্যবসা তৈরীতে উৎসাহিত হবে।

পরে সংশোধিত বাজেটে ডিবিএর ৭ প্রস্তাব সাংবাদিকদের সামনে তুলে দরেন ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম।

এসময় মূলধনী আয়কে করমুক্তকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন আয়ের ৫০ লাখ টাকার অধিক আয়ের উপর স্তরভিত্তিক করারোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে, কোন সিকিউরিটিজ বিনিয়োগের সময়কাল ৫ বছর অতিক্রম করলে উক্ত বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়। গত কয়েকবছর ধরে মন্দা বাজার পরিস্থিতি এবং আর্থিক সংকটে থাকা বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধন আয়ের উপর থেকে করারোপের প্রস্তাব রহিতকরণের জন্য আমরা জোর সুপারিশ করছি।

ব্রোকারেজের জন্য করহার যৌক্তিককরণ প্রসঙ্গে ডিবিএর এই প্রেসিডেন্ট বলেন, বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজগুলো দুটি স্তরে কর প্রদান করে। প্রথমত সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের উপর দশমিক ০৫ শতাংশ, দ্বিতীয়ত কর্পোরেট আয়কর হিসেবে, যেটি বেশী হয় তা চুড়ান্ত কর হিসেবে গন্য করা হয়। এ দ্বিস্তরের ব্যবস্থার ফলে মন্দা বাজার পরিস্থিতিতে ব্রোকারদের ক্ষতি করে। কিছু ক্ষেত্রে এই করের হার ৪০ শতাংশ বা তার বেশী ছাড়িয়ে যায়।

তিনি বলেন, ব্রোকাররা বাজারের অন্যতম অংশীজন। বাজারে বিনিয়োগকারী এনে বাজারকে বিনিয়োগ সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারা করে থাকে। ব্রোকারদের আর্থিক সংকট ও অক্ষমতা বাজারের উন্নয়নকে চরমভাবে ব্যহত করে। তাই পুঁজিবাজারকে টিকিয়ে রাখতে এবং এর উন্নয়নে ব্রোকারদের সক্রিয় ও সচল রাখা অত্যাবশ্যক।

আরও পড়ুন: রিং শাইন টেক্সটাইলের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাজস্ব করহার দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে দশমিক ০২৫ শতাংশ হ্রাসকরণ এবং কর্পোরেট আয়করকে ব্রোকারেজের জন্য চুড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনাকরণ করতে হবে। মূলধন ক্ষতির উপর বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টীকরণ: প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন লাভের উপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ মূলধনী লোকসানের উপর ৬ বছর পর্যন্ত মূলধনী ক্ষতির জের বহন কিংবা সমন্বয় করার বিধান বিদ্যমান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগকারীর মূলধন ক্ষতির বিষয়ে থাকা বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা দেওয়াসহ এটিকে ৭ বছর পর্যন্ত প্রদেয় আয়করের বিপরীতে বহন বা সমন্বয় করার সুপারিশ করছি।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, গত কয়েকবছর ধরে বাজারে মন্দা বিরাজ করায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানের কবলে পড়ে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন ৫০ লাখের অধিক মুলধন লাভের উপর করারোপের সাথে বিদ্যমান মূলধনী লোকসানের জের বহন কিংবা সমন্বয় করার অনুমতি দিলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ধরে রাখতে এবং বাজারের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন লাভবান হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারী আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে বাজারকে সমৃদ্ধশালী করতে সক্ষম হবে এবং এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির রোডম্যাপ প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আশু বাস্তবায়নে সরকার ও বাজার সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভুক্তির ফলে বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাজার প্রসার হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

অতালিকাভুক্ত সংস্থাগুলোর জন্য কর্পোরেট করের হার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হারের বাহিরে বৃদ্ধিকরণ প্রসঙ্গে ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হার ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু, অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের হার ব্যক্তিশ্রেনীর করের হারের নীচে। অন্যদিকে কর্পোরেটের ক্ষেত্রে তালিকাভূক্ত এবং অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে করের পার্থক্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ এ নামিয়ে আনা হয়েছে। তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক কর্মকান্ডে অবদান, পুঁজিবাজারে প্রচার বিবেচনা করে ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট করের হারের মধ্যে পার্থক্য বিবেচনায় আমাদের প্রস্তাব হলো ব্যক্তিশ্রেণীর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশের উর্ধে অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করহার নির্ধারন করা। নিয়মিত এবং সম্পূর্ন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের শর্তে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার কমানোর সুপারিশ করছি।

তিনি বলেন, নতুন বিও আইডিগুলোকে ৩ বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি হবে তথা বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে বাজারের মূলধন বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কর্মকান্ডে নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজন। দু:খজনকভাবে আমাদের বাজারে এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যা মাত্র ১ শতাংশ সক্রিয় বিও একাউন্ট আছে, যেখানে ব্যাংকিং এবং এমএফএস কার্যক্রমে যথাক্রমে ২৮ শতাংশ এবং ৬৭ শতাংশ রয়েছে। যদি ব্যাংকিং এবং এমএফএস একাউন্টগুলিকে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগে নিয়ে আসা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের জন্য মূলধনী লাভ, সুদ এবং লভ্যাংশ আয় তৈরী হবে । এর ফলে সরকারের যথেষ্ট পরিমান কর জেনারেট করা সম্ভব হবে।

এমন পরিস্থিতিতে আমরা বাজারের সম্প্রসারনের জন্য আমরা চাই সকল নতুন বিও একাউন্টগুলিকে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের সীমা সাপেক্ষে ৩ বছর পর্যন্ত সময়কালের জন্য কর বহির্ভূত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করা হোক। এবং শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রবীণ নাগরিকদের মাধ্যমে পরিচালিত বিও হিসাবধারীদেরকে লাভের জন্য শূণ্য হারে কর সুবিধার অনুমতি প্রদান করা হোক।

মার্জিন লসকে কর ছাড়যোগ্য হিসেবে অনুমতি দেয়া প্রসঙ্গে সাইফুল ইসলাম বলেন, মার্জিন লস বাজারের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। দীর্ঘদিন ধরে থাকা এরুপ মার্জিন লসের কারনে অসংখ্য বিনিয়োগ একাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, যা তারল্য সংকটের মুখে গত কয়েকবছরে গুরুতর হয়ে উঠেছে। মার্জিন লসে থাকা এই জাতীয় বিনিয়োগকে আর্থিকভাবে পূনরুদ্ধার করতে এবং বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা এনবিআরকে ঋনদাতাদের জন্য একটি প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কর কর্তনযোগ্য হিসেবে মার্জিন লসের অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

ঢাকা/এসএইচ