১২:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্যের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:২৯:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
  • / ১০৩৩১ বার দেখা হয়েছে

ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে তারই একটি অংশ হচ্ছে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে না দেওয়া। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত এ মন্তব্য করেছেন। আজ বুধবার (১৫মে) ইআরএফ কার্যালয়ে ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে অবহিতকরণ’ শীর্ষক সভায় তিনি এ কথা বলেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

শ্যামল দত্ত বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আমাদের বলেছেন তিনি এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের এই কাজটি শক্ত হাতে করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে তারই একটি অংশ হচ্ছে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে না দেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ৮ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে এতে কি চোরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে হয়েছে। এই যে ৭-৮টা ব্যাংকের মালিক একটা গ্রুপ এদের বিরুদ্ধে কথা বলাও কঠিন। তারা সম্প্রতি আরেকটা ব্যাংককে নিয়ে নিয়েছে। তাদের পত্রিকা আছে, টেলিভিশন আছে, অনলাইন আছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনাদের অধিকার আদায়ে আর বসে থাকার সময় নেই। আপনাদের রাস্তায় নামতে হবে। ইআরএফ একটি সম্মানিত সংগঠন। আপনাদের এই আন্দোলনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনাদের এই আন্দোলন আরও বেগবান করুন। সাংবাদিকদের রিপোর্টগুলো সরকারকে সাহায্য করে। তাই এই আন্দোলন আরও জোরেসোরে চালান। দাবি আদায় করেই ছাড়বো।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, গভর্নর স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি, উনি বলেছে আসা-যাওয়া করতে থাকো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও এখনো আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক ভাইয়েরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছে না। আগে সাংবাদিকরা যেভাবে সহজে যেকোনো অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন তা এখন পারছেন না।

তিনি বলেন, গভর্নর আমাদের বলেছেন দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্য। আমরা তো উন্মাদ দেশ প্রেমিক। আমাদের থেকে দেশপ্রেমিক লোক আর দেখছি না। আমাদের সহকর্মীরা বলছেন যে তাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। যা খুবই ভয়ানক ব্যাপার। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে হবে।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান গভর্নর আসার পর থেকেই সাংবাদিক প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর হতে শুরু করে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন যে আপনারা এলে গভর্নর স্যার আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করেন এবং বলতে থাকেন যে ২৫ বছর হলে ফোর্স রিটায়ারমেন্টে পাঠিয়ে দিবেন। এই বিষয়গুলো নিয়ে সাংবাদিক প্রবেশে কঠোর হতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও বলা হয়, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা চড়া মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ তলানীতে নেমে যাওয়া, আর ডলারের বিপরীতে টাকার যে অবমূল্যায়ন হচ্ছে এই অবস্থার জন্য কিন্তু কোনোভাবেই সাংবাদিকরা দায়ী না। আর ব্যাংকের দাবি সাংবাদিকরা সেনসেটিভ ইনফরমেশন পাবলিক করে দিচ্ছে। আমরা সাংবাদিকরা তো দেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য কাজ করছি। যেসব দুর্নীতি হচ্ছে সেগুলো আমরা জনসাধারণের মাঝে জানাচ্ছি।

ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নাগরিক প্রতিষ্ঠান, আর নাগরিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য জনগণের পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই দ্রুতই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত।

ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, এই ইস্যুটি শুধু ব্যাংক রিপোর্টারদের জন্য না। এটি সবার জন্য। ব্যাংকে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এটির যদি সফলতা পেয়ে যায় তাহলে সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করবে। আর এই হুমকি আমাদের আগামীর ভবিষ্যতের জন্য ভয়ানক। টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ানো হচ্ছে। সরকার যদি মনে করে যে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সরকার অনেক কিছু আড়াল করে ভালো থাকবেন তাহলে এটা ভুল। বরং সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ করে দিলে অর্থনীতি আরও ভালো থাকবে। দুর্নীতিগুলো সামনে আসবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। তাই সরকারের ভালোর জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত।

ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন আর সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই স্বাধীনতাকে কূলষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ থেকে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে গভর্নর সাহেবকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে অতিদ্রুত। মুখপাত্রের কাছে কোনো তথ্য চাওয়া হলে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিকদের প্রদান করতে হবে। যেই সংবাদ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা সেই সংবাদের তো কোনো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বরং পরবর্তীতে দেখা গেছে সেসব ব্যাংকের করুণ পরিস্থিতি হয়েছে। ফলে জনগণ তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এমন একজন গভর্নরকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে তার তিনি যোগ্য নন। তার যেই দুর্বলতা আছে সেটি ঢাকার জন্যই তিনি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই গভর্নরের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সূচকেই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়া ডলারের দাম একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে দিলেন কীসের ভিত্তিতে? কিছু পীর-আওলিয়া, দরবেশের সুবিধা দিতে গিয়েই সাংবাদিকদের এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে আমি ধারণা করি। তারা দরজায় খিল দিয়েছে কিন্তু দরজা বন্ধ করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দরজায় খিল দিয়েই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বলে মনে করলে ভুল করবে। দুদকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যদি সফল হয় তাহলে কেপিআই প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে সেগুলোতে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় সফল হবে। আমরা প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটে অবস্থান নিবো। গভর্নরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে দিবো না। আমাদের অধিকার আদায় করেই ছাড়বো।

আরও পড়ুন: সময় নির্ধারণ করে সেবা দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই যে সাংবাদিকদের নিষেধাজ্ঞা এটি শুধু ব্যাংক রিপোর্টার বা অর্থনীতির রিপোর্টারদের সম্মান না, এটি পুরো গণমাধ্যমকে গলা টিপে ধরা হচ্ছে। আমাদের সবার উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক দুর্নীতির ফাইল জমা হয়ে আছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করলে তারা নিজেরাই আমাদের কাছে চলে আসবে।

ইআরএফের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে আমাদের যেসব তথ্য দেওয়া হতো এখন আর সেগুলো হয় না।

ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছে। এই যে প্রতিনিয়ত পত্রিকায় তাদের ব্যাপারে রিপোর্টগুলো হচ্ছে এসব করে তাদের নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তারা কি কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই এমন করছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শুক্কুর আলী শুভ বলেন, সাংবাদিক যদি বাংলাদেশে থাকে তথ্য তাকে দিতেই হবে। যখনি তথ্য দিবে না তখনি লুকোচুরির বিষয় থাকবে আমরা ধরে নেব। গভর্নর তো কিছুদিনের জন্য। আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে৷ যুগে যুগে সাংবাদিকদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। সাংবাদিকরা কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করে না, তারা পুরো দেশের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবশ্যই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গেট বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি নেব। আমরা প্রয়োজনে প্রেস ক্লাবে রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নেব।

বিএফইউজের মহাসচিব আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ভল্টের সোনা চুরি এসবের খবর যেন জনগণের সামনে না আসে এজন্যই নিষেধাজ্ঞা। অতীতেও আমরা পেরেছি এবারও আমরা পারবো। যখন আমরা সকল মত-পথের সাংবাদিক ও নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে হয়েছি সেহেতু আমরা পারবোই। যে তথ্য নিয়ে জনগনের জন্য সংবাদ করা হয় তা কখনো তথ্য চুরি হতে পারে না। শুধুমাত্র আর্থিক খাতেই কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খাওয়ার যে জায়গা সেটিই সাংবাদিকরা বন্ধ করে দিচ্ছে বলে আজ এই অবস্থা। গণমাধ্যম একটা চরম সংকটকালে আছে। আমরা কেউ রাজনৈতিক কারণে তা স্বীকার করি আর না করি। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।

বিএফউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আজ যে ব্যাংক রিপোর্টাররা সমস্যায় পড়েছে এটা আরও সামনে গড়াবে। ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন। দলমতের বাইরে এসে পেশাদারিত্বের জায়গায় আমাদের ঐক্য গড়তে হবে। প্রেসক্লাবে আমাদের সকল সংগঠন সংঘবদ্ধ হয়ে আগাতে হবে। অতীতেও আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করেছি। এই যে শেয়ারবাজার, ডলার বাজারে এসব অপকর্ম করা হয় এগুলো তো সেই কর্মকর্তারাই ঘটান। সাংবাদিকরা শুধু তা লিখে ধরেন।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

‘ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্যের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা’

আপডেট: ০৫:২৯:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে তারই একটি অংশ হচ্ছে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে না দেওয়া। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত এ মন্তব্য করেছেন। আজ বুধবার (১৫মে) ইআরএফ কার্যালয়ে ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে অবহিতকরণ’ শীর্ষক সভায় তিনি এ কথা বলেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

শ্যামল দত্ত বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আমাদের বলেছেন তিনি এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের এই কাজটি শক্ত হাতে করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে তারই একটি অংশ হচ্ছে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে না দেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে ৮ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে এতে কি চোরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে হয়েছে। এই যে ৭-৮টা ব্যাংকের মালিক একটা গ্রুপ এদের বিরুদ্ধে কথা বলাও কঠিন। তারা সম্প্রতি আরেকটা ব্যাংককে নিয়ে নিয়েছে। তাদের পত্রিকা আছে, টেলিভিশন আছে, অনলাইন আছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনাদের অধিকার আদায়ে আর বসে থাকার সময় নেই। আপনাদের রাস্তায় নামতে হবে। ইআরএফ একটি সম্মানিত সংগঠন। আপনাদের এই আন্দোলনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনাদের এই আন্দোলন আরও বেগবান করুন। সাংবাদিকদের রিপোর্টগুলো সরকারকে সাহায্য করে। তাই এই আন্দোলন আরও জোরেসোরে চালান। দাবি আদায় করেই ছাড়বো।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, গভর্নর স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি, উনি বলেছে আসা-যাওয়া করতে থাকো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও এখনো আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক ভাইয়েরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছে না। আগে সাংবাদিকরা যেভাবে সহজে যেকোনো অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন তা এখন পারছেন না।

তিনি বলেন, গভর্নর আমাদের বলেছেন দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্য। আমরা তো উন্মাদ দেশ প্রেমিক। আমাদের থেকে দেশপ্রেমিক লোক আর দেখছি না। আমাদের সহকর্মীরা বলছেন যে তাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। যা খুবই ভয়ানক ব্যাপার। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে হবে।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান গভর্নর আসার পর থেকেই সাংবাদিক প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর হতে শুরু করে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন যে আপনারা এলে গভর্নর স্যার আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করেন এবং বলতে থাকেন যে ২৫ বছর হলে ফোর্স রিটায়ারমেন্টে পাঠিয়ে দিবেন। এই বিষয়গুলো নিয়ে সাংবাদিক প্রবেশে কঠোর হতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও বলা হয়, অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা চড়া মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ তলানীতে নেমে যাওয়া, আর ডলারের বিপরীতে টাকার যে অবমূল্যায়ন হচ্ছে এই অবস্থার জন্য কিন্তু কোনোভাবেই সাংবাদিকরা দায়ী না। আর ব্যাংকের দাবি সাংবাদিকরা সেনসেটিভ ইনফরমেশন পাবলিক করে দিচ্ছে। আমরা সাংবাদিকরা তো দেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য কাজ করছি। যেসব দুর্নীতি হচ্ছে সেগুলো আমরা জনসাধারণের মাঝে জানাচ্ছি।

ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নাগরিক প্রতিষ্ঠান, আর নাগরিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য জনগণের পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই দ্রুতই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত।

ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, এই ইস্যুটি শুধু ব্যাংক রিপোর্টারদের জন্য না। এটি সবার জন্য। ব্যাংকে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এটির যদি সফলতা পেয়ে যায় তাহলে সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করবে। আর এই হুমকি আমাদের আগামীর ভবিষ্যতের জন্য ভয়ানক। টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ানো হচ্ছে। সরকার যদি মনে করে যে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সরকার অনেক কিছু আড়াল করে ভালো থাকবেন তাহলে এটা ভুল। বরং সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ করে দিলে অর্থনীতি আরও ভালো থাকবে। দুর্নীতিগুলো সামনে আসবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। তাই সরকারের ভালোর জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা উচিত।

ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন আর সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই স্বাধীনতাকে কূলষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ থেকে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে গভর্নর সাহেবকে পদক্ষেপ নিতে হবে। সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে অতিদ্রুত। মুখপাত্রের কাছে কোনো তথ্য চাওয়া হলে তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিকদের প্রদান করতে হবে। যেই সংবাদ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা সেই সংবাদের তো কোনো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বরং পরবর্তীতে দেখা গেছে সেসব ব্যাংকের করুণ পরিস্থিতি হয়েছে। ফলে জনগণ তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এমন একজন গভর্নরকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে তার তিনি যোগ্য নন। তার যেই দুর্বলতা আছে সেটি ঢাকার জন্যই তিনি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই গভর্নরের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সূচকেই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়া ডলারের দাম একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে দিলেন কীসের ভিত্তিতে? কিছু পীর-আওলিয়া, দরবেশের সুবিধা দিতে গিয়েই সাংবাদিকদের এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে আমি ধারণা করি। তারা দরজায় খিল দিয়েছে কিন্তু দরজা বন্ধ করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দরজায় খিল দিয়েই দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বলে মনে করলে ভুল করবে। দুদকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যদি সফল হয় তাহলে কেপিআই প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে সেগুলোতে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় সফল হবে। আমরা প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটে অবস্থান নিবো। গভর্নরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে দিবো না। আমাদের অধিকার আদায় করেই ছাড়বো।

আরও পড়ুন: সময় নির্ধারণ করে সেবা দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই যে সাংবাদিকদের নিষেধাজ্ঞা এটি শুধু ব্যাংক রিপোর্টার বা অর্থনীতির রিপোর্টারদের সম্মান না, এটি পুরো গণমাধ্যমকে গলা টিপে ধরা হচ্ছে। আমাদের সবার উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনেক দুর্নীতির ফাইল জমা হয়ে আছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করলে তারা নিজেরাই আমাদের কাছে চলে আসবে।

ইআরএফের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে আমাদের যেসব তথ্য দেওয়া হতো এখন আর সেগুলো হয় না।

ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছে। এই যে প্রতিনিয়ত পত্রিকায় তাদের ব্যাপারে রিপোর্টগুলো হচ্ছে এসব করে তাদের নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তারা কি কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই এমন করছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শুক্কুর আলী শুভ বলেন, সাংবাদিক যদি বাংলাদেশে থাকে তথ্য তাকে দিতেই হবে। যখনি তথ্য দিবে না তখনি লুকোচুরির বিষয় থাকবে আমরা ধরে নেব। গভর্নর তো কিছুদিনের জন্য। আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে৷ যুগে যুগে সাংবাদিকদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়। সাংবাদিকরা কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করে না, তারা পুরো দেশের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবশ্যই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গেট বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি নেব। আমরা প্রয়োজনে প্রেস ক্লাবে রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নেব।

বিএফইউজের মহাসচিব আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ভল্টের সোনা চুরি এসবের খবর যেন জনগণের সামনে না আসে এজন্যই নিষেধাজ্ঞা। অতীতেও আমরা পেরেছি এবারও আমরা পারবো। যখন আমরা সকল মত-পথের সাংবাদিক ও নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে হয়েছি সেহেতু আমরা পারবোই। যে তথ্য নিয়ে জনগনের জন্য সংবাদ করা হয় তা কখনো তথ্য চুরি হতে পারে না। শুধুমাত্র আর্থিক খাতেই কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খাওয়ার যে জায়গা সেটিই সাংবাদিকরা বন্ধ করে দিচ্ছে বলে আজ এই অবস্থা। গণমাধ্যম একটা চরম সংকটকালে আছে। আমরা কেউ রাজনৈতিক কারণে তা স্বীকার করি আর না করি। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।

বিএফউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আজ যে ব্যাংক রিপোর্টাররা সমস্যায় পড়েছে এটা আরও সামনে গড়াবে। ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন। দলমতের বাইরে এসে পেশাদারিত্বের জায়গায় আমাদের ঐক্য গড়তে হবে। প্রেসক্লাবে আমাদের সকল সংগঠন সংঘবদ্ধ হয়ে আগাতে হবে। অতীতেও আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করেছি। এই যে শেয়ারবাজার, ডলার বাজারে এসব অপকর্ম করা হয় এগুলো তো সেই কর্মকর্তারাই ঘটান। সাংবাদিকরা শুধু তা লিখে ধরেন।

ঢাকা/এসএইচ