অর্থপাচার নিয়ে নীরবতা ঘোষিত নীতির সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করে: মোস্তাফিজুর রহমান

- আপডেট: ০৭:৪২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / ১০৩১১ বার দেখা হয়েছে
একদিকে কালো টাকা বৈধ করার প্রস্তাব, অন্যদিকে অর্থপাচার নিয়ে নীরবতা— বিষয়টি সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে ‘বৈপরীত্য’ তৈরি করে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ নিয়ে সিপিডির মিডিয়া ব্রিফিং-এ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অর্থপাচার নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য থাকলে ভালো হতো। তবে বলে রাখা ভালো, পাচার রোধে সরকারের কিছু পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাতে হবে। বাজেটে হয়তো উল্লেখ করা হয়নি পাচার করা অর্থ ফেরাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে আমার আশা ছিল, বাজেটে আলাদাভাবে এ বিষয়ে পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ থাকবে। সেটা হয়নি। উল্টো উচ্চ হারে কালো টাকা বৈধ করার প্রস্তাব এসেছে। সেটা আমাদের কাছে বৈপরীত্য মনে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে— সিপিডি নৈতিকভাবে তা সমর্থন করে না। অথচ বাজেটে পাচার করা অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট খতিয়ান উপস্থাপন করা হয়নি। বাজেটের মূল দর্শন হওয়া উচিত ছিল রাজস্ব নীতির মাধ্যমে আয় বৈষম্য হ্রাস। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনেও এটি প্রধান দাবি হিসেবে উঠে এসেছে। বাজেটে কর ও অন্যান্য নীতির মাধ্যমে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে নীতিগত দিক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত মেলে না।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের মতে, বাজেটে মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আদায়সহ বেশকিছু বিষয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রাক্কলন দেওয়া হয়েছে, যা অর্জন করা কঠিন হবে।
তিনি বলেন, বাজেট তার আকারের দিক থেকে ব্যতিক্রমী, যা পূর্ববর্তী বাজেটের তুলনায় ছোট। বাজেটের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হবে। প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন এবং জনগণের ওপরে নজর দেওয়া হবে। একদিকে বলা হয়েছে প্রবৃদ্ধির বাইরে সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ভৌত অবকাঠামোর বাইরে গিয়ে মানুষের উন্নয়নে নজর দেওয়া হবে। কিন্তু এই প্রত্যয়গুলোর প্রতিফলন প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়নি।
বাজেটের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, কর কমানো হয়েছে, কর অবকাশ দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেই চ্যালেঞ্জগুলো অনেক হোলিস্টিকভাবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। শুধুমাত্র খণ্ডিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় বরাদ্দ বাড়িয়ে বা কমিয়ে নয়, সামগ্রিকভাবে যে উদ্দেশ্যগুলো প্রতিফলিত হয়েছে বাস্তবতার সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, অর্থনৈতিক সংকট আমলে নেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সংকট মোকাবিলায় এসব সংকট আমলে নেওয়া দরকার ছিল। এছাড়া রাজস্বসংক্রান্ত বেশকিছু উদ্যোগ বাজেটে ঘোষিত সমতামুখী ও টেকসই উন্নয়ন কাঠামোর ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। করের কাঠামো বিন্যাস করতে গিয়ে ছয়টি শ্রেণি করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, নিম্নবিত্ত মানুষের করের হার বেশি হবে, কিন্তু উচ্চবিত্তদের কম পড়বে। এটা বৈষম্যমূলক।
আরও পড়ুন: বাজেটকে ‘দ্বিচারিতা’ বলছে সিপিডি
সিপিডির প্রত্যাশা
তিনি বলেন, আশা করি অর্থ উপদেষ্টা বাজেটের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে সেটা মানুষকেন্দ্রিক বা জনমুখী করবেন। বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ; কালো টাকা সাদা করার মতো আরও যেসব নেতিবাচক পদক্ষেপ আছে সেগুলো পুনর্বিবেচনা করবেন, রোহিত করবেন। এটা করতে পারলে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে আপনারা একটা ফুট প্রিন্ট রেখে যেতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/টিএ