০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

অর্থপাচার রোধ ও কালোটাকা উদ্ধারে মিলবে ১৫ হাজার কোটি টাকা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:৩০:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪
  • / ১০৪০৪ বার দেখা হয়েছে

বাজেটে ঘাটতি কমিয়ে আনতে শুধু অর্থপাচার রোধ ও কালোটাকা উদ্ধার করা গেলে প্রতিবছর ১৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সোমবার (৩ জুন) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, মাত্র পাঁচটি উৎসে রাজস্ব আদায় জোরদার করে মোট বাজেটের ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ খরচ তুলে আনা সম্ভব। এর মধ্যে শুধু সম্পদ করের পরিধি বাড়িয়ে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেতে পারে সরকার।

এছাড়া অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর থেকে ৭৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা, অর্থপাচার রোধ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা, কালোটাকা উদ্ধার করে ১০ হাজার কোটি টাকা, বিলাসী পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কের আওতায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে জানিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, এ পাঁচটি খাত থেকে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা আয় করতে পারবে রাজস্ব বিভাগ। যদি চলতি অর্থবছরের থেকে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১ দশমিক ৯৮ গুণ বাড়ানোও হয় তাহলে শুধু এ কয়টি উৎস থেকে রাজস্ব আদায়ের ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ আদায় করা যাবে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছিল যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় দ্বিগুণ করে ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েব: যা বলল ইসলামী ব্যাংক

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রত্যক্ষ করের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে খলীকুজ্জামান বলেন, বর্তমানে ভ্যাট থেকে বাজেটের ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ রাজস্ব আসে। আগামী বাজেটে এটি বাড়ানোর আর কোনো প্রয়োজন নেই। প্রচলিত ছকের বাইরে বেরিয়ে রাজস্ব আদায়ের পরিধি বাড়াতে হবে।

এক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণ সংক্রান্ত কর থেকে আলাদা করে ৮ হাজার কোটি টাকা, সেবা থেকে প্রাপ্ত কর হিসেবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ও বিমান পরিবহন থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার আলাদা কর আদায়ের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

এর বাইরে রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ দশমিক ৬০ গুণ বাড়িয়ে ৩২ হাজার  কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। বিশেষ করে যেখানে বর্তমানে মাদক থেকে ৪৫৮ কোটি টাকা রাজস্ব আসে, সেই একই খাতে কর বাড়িয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। এর পাশাপাশি যানবাহন কর ৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং ভূমি রাজস্ব কর ২ হাজার ২১০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

শুধু কর না, কর ব্যতীত প্রাপ্তির উপখাত থেকে বর্তমানে যেখানে ৫৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আদায় হয়, সেটি ২ দশমিক ৬৬ গুণ বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব। এর অংশ হিসেবে লভ্যাংশ ও মুনাফা খাতের আয় ২ দশমিক ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৯ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ খাতে আয় ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৯৮৫ কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব প্রাপ্তিতে ১১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকায় বাড়ানোর প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

ধারকর্জ করে ঘি খাওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে খলীকুজ্জামান বলেন, যেভাবেই হোক বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। বিদেশি ঋণ দিনকে দিন দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। ঋণের বোঝা থেকে বের হয়ে আসার জন্য রাজস্ব আদায় ও রাজস্ব বহির্ভূত আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

অর্থপাচার রোধ ও কালোটাকা উদ্ধারে মিলবে ১৫ হাজার কোটি টাকা

আপডেট: ০৫:৩০:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

বাজেটে ঘাটতি কমিয়ে আনতে শুধু অর্থপাচার রোধ ও কালোটাকা উদ্ধার করা গেলে প্রতিবছর ১৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সোমবার (৩ জুন) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, মাত্র পাঁচটি উৎসে রাজস্ব আদায় জোরদার করে মোট বাজেটের ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ খরচ তুলে আনা সম্ভব। এর মধ্যে শুধু সম্পদ করের পরিধি বাড়িয়ে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেতে পারে সরকার।

এছাড়া অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর থেকে ৭৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা, অর্থপাচার রোধ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা, কালোটাকা উদ্ধার করে ১০ হাজার কোটি টাকা, বিলাসী পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কের আওতায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে জানিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, এ পাঁচটি খাত থেকে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা আয় করতে পারবে রাজস্ব বিভাগ। যদি চলতি অর্থবছরের থেকে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১ দশমিক ৯৮ গুণ বাড়ানোও হয় তাহলে শুধু এ কয়টি উৎস থেকে রাজস্ব আদায়ের ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ আদায় করা যাবে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনায় জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছিল যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় দ্বিগুণ করে ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: লকার থেকে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েব: যা বলল ইসলামী ব্যাংক

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রত্যক্ষ করের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে খলীকুজ্জামান বলেন, বর্তমানে ভ্যাট থেকে বাজেটের ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ রাজস্ব আসে। আগামী বাজেটে এটি বাড়ানোর আর কোনো প্রয়োজন নেই। প্রচলিত ছকের বাইরে বেরিয়ে রাজস্ব আদায়ের পরিধি বাড়াতে হবে।

এক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণ সংক্রান্ত কর থেকে আলাদা করে ৮ হাজার কোটি টাকা, সেবা থেকে প্রাপ্ত কর হিসেবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ও বিমান পরিবহন থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার আলাদা কর আদায়ের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

এর বাইরে রাজস্ব বোর্ডবহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ দশমিক ৬০ গুণ বাড়িয়ে ৩২ হাজার  কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। বিশেষ করে যেখানে বর্তমানে মাদক থেকে ৪৫৮ কোটি টাকা রাজস্ব আসে, সেই একই খাতে কর বাড়িয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। এর পাশাপাশি যানবাহন কর ৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং ভূমি রাজস্ব কর ২ হাজার ২১০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

শুধু কর না, কর ব্যতীত প্রাপ্তির উপখাত থেকে বর্তমানে যেখানে ৫৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আদায় হয়, সেটি ২ দশমিক ৬৬ গুণ বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব। এর অংশ হিসেবে লভ্যাংশ ও মুনাফা খাতের আয় ২ দশমিক ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৯ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ খাতে আয় ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৯৮৫ কোটি টাকা থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব প্রাপ্তিতে ১১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকায় বাড়ানোর প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

ধারকর্জ করে ঘি খাওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে খলীকুজ্জামান বলেন, যেভাবেই হোক বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। বিদেশি ঋণ দিনকে দিন দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। ঋণের বোঝা থেকে বের হয়ে আসার জন্য রাজস্ব আদায় ও রাজস্ব বহির্ভূত আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা/এসএইচ