‘আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে’ শুনেই সাংবাদিককে ডেকে প্রশ্ন নিলেন উপদেষ্টা

- আপডেট: ০৫:৩০:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ১০১৮৭ বার দেখা হয়েছে
ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে— এমন কথা শুনতেই ডায়াসে সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে মাইকে আবারও প্রশ্নটা করতে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর প্রশ্ন শুনে উত্তরও দেন তিনি।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) ২০টি নতুন গাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ২০টি গাড়ির চাবি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর হাতে তুলে দেন।
এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের যানবাহনের স্বল্পতা অনেক দিন ধরে। ২০০ গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। এরপরও আরও গাড়ির স্বল্পতা থাকবে। যে পরিমাণ গাড়ির প্রয়োজন সে পরিমাণ গাড়ি আমাদের নেই। সেজন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় ফাইন্যান্স উপদেষ্টা ও শিল্প উপদেষ্টার সহযোগিতায় সরকারিভাবে ২০০ গাড়ি ক্রয় করা সম্ভব হয়েছে। এ বছর হয়তো আরও অনেকগুলো গাড়ি ক্রয় করা হবে।
তিনি বলেন, পুলিশের গাড়ির স্বল্পতা অনেক। তাছাড়া ব্যবস্থাপনার সমস্যাও আছে। ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ২৫টি থানাই ভাড়া ভবনে। কিছুদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচটি থানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আরও দুটি থানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।
এ সময় একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রশ্ন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে। ওই সাংবাদিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার স্বল্প জনবল নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এ কথা শুনতেই তিনি থামিয়ে দিয়ে ওই সাংবাদিককে কাছে ডেকে নেন। তিনি বলেন, প্রশ্নটি মাইকে করেন, সবাই শুনুক।
চ্যানেল আইয়ের বিশেষ সংবাদদাতা ওই সাংবাদিক আবারও প্রশ্ন করেন যে, ডিএমপি কমিশনার স্বল্প জনবল নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। থানার ওসি বদলের পরে মোহাম্মদপুর এলাকার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু একটি মহল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরির জন্য ঝটিকা মিছিলসহ অন্যান্য আয়োজন করছে। এসব কেন ঠেকানো যাচ্ছে না?
প্রশ্নের উত্তরে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা দেখছেন? ভাই একটা ভালো কথা বলতে বলতেও একটা খারাপ কথা মুখে চলে আসছিল! অভ্যাসটা দূর হতে কিন্তু সময় লাগে (হেসে)।
এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে হাসির রোল পড়ে যায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভাই কথাটা সত্যিই বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ঝটিকা মিছিলের সংখ্যা কিন্তু কমছে। ২৪৪ জনকে একযোগে হাতেনাতে ধরার পর সংখ্যাটা কমছে। আপনারা (গণমাধ্যম) যদি এভাবে সহযোগিতা করেন, তাহলে এগুলো আরও কমে যাবে। একসময় নাই হয়ে যাবে। অপরাধের সংখ্যাও কমছে।
তিনি বলেন, সবাই যখন নির্বাচন মুডে আসবে, তখন এই ধরনের অপরাধ কমে যাবে। তবে তখন রাজনৈতিক কার্যক্রম বাড়বে। তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করবে। নির্বাচনের জন্য তো কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের কাজ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো নির্বাচন কমিশন। এরপর প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আরেকটা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। সবাই যদি সহযোগিতা করে, তাহলে নির্বাচন কিন্তু খুব ভালোভাবে হবে।
জনগণ হলো সব থেকে বড় স্টেকহোল্ডার উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হবে, তখন কেউ কিছু আটকাতে পারবে না। জনগণ হচ্ছেন বড় ফ্যাক্টর। আমাদের দেশে জনগণ কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। এখনই কিন্তু চায়ের স্টলে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। আপনারাও প্রচার করবেন, যত দিন ঘনিয়ে আসবে আলোচনা আরও বেশি হবে। নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয়, সেজন্য আমাদের সবার চেষ্টা থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সদস্যদের ওপরে হামলা, মারধর, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে— এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সংখ্যা কমছে। কিছুদিন আগে নরসিংদীতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ রকম ঘটনা কিন্তু কমে আসছে। আপনারা যদি প্রচার করে যান, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়, জনগণও সচেতন হবে। কারণ সবকিছুর মূলেই তো জনগণ। তারা যখন দেখবে এসব তো খারাপ, তখন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটবে না।
ঢাকা/এসএইচ